বাংলারজমিন
দেবীগঞ্জে সংস্কারের নামে ঝুঁকিতে পুকুর স্কুল ভবন
নাজমুস সাকিব মুন, দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) থেকে
২৯ জুন ২০২৪, শনিবারপঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুকুরের পাড় কেটে মাটি সমান করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই পুকুরের প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার মাছ বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাসহ পুকুরটির স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পুকুরটির মালিকপক্ষ। সংস্কারের নামে ঝুঁকিতে ফেলেছে স্কুল ভবনটিকেও। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বোছাপাড়া এলাকায়। ওই এলাকার কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের দিকে অভিযোগের তীর।
বুধবার সরজমিন ঘটনাস্থলে এস্কেভেটর দিয়ে পুকুরের দক্ষিণ দিকের পাড় কাটতে দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে প্যালাসাইডিং দেয়ালের পরিবর্তে যেনতেন করে নিম্নমানের পিলার ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধাই করে পুকুর পাড় কেটে স্কুলের জায়গা সংস্কার করতে দেখা যায়। এতে একদিকে যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরটি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি স্কুল ভবনের পেছনের দিকের ৫-৬ ফিট মাটি কাটায় সংস্কারের নামে উল্টো ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে পুকুরে পড়লে মাছের উৎপাদন ব্যাহতসহ মারা যেতে পারে মাছ। জানা গেছে, প্রায় ৩০ বিঘা জায়গা নিয়ে শুয়াই দীঘির অবস্থান। বর্তমানে পুকুরটি মির্জা ফেরদৌস ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় রয়েছে।
মির্জা ফেরদৌস অভিযোগ করেন, পুকুর খনন করে পাড় বাঁধা হয়েছিল। জমি তারা বুঝিয়ে নিক কিন্তু পাড় কেটে আমার এত বড় সর্বনাশ কেন করলো। জমিটা এখন তাদের হলেও মাটি তো আমার। সংস্কারের জন্য তারা সরকারি বরাদ্দ পেলেও পাড়ের মাটি কেটেই সমান করেছে জমি। এদিকে স্কুল রক্ষায় পুকুর পাড় দিয়ে প্যালাসাইডিং দেয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও বরাদ্দ সংকটের অজুহাতে নিম্নমানের পিলার আর বাঁশের বেড়া দিয়ে দায়সারা পাড় বাঁধা হয়েছে। এতে চলতি বর্ষায় অতি বৃষ্টিতে পাড় ভেঙে গিয়ে পুকুরের পানি স্কুল ভবনের কাছাকাছি চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, পুকুর থেকে ২০ মিটার দূরেই রয়েছে ক্যানেল। যা দিয়ে ওই এলাকার কয়েকশ’ একর জমির পানি নিষ্কাশন হয়। পুরনো মাটি খনন করে সংস্কার করায় ক্যানেলে মাটি পড়ে সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জমি পাবো সেটা বুঝে নিয়ে সংস্কার করছি। এতে শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ পাবে। যা করছি তার সবকিছু সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রাসেদুজ্জামান স্যার জানেন। অতি বৃষ্টিতে পুকুরের পানি উপচে পড়লে তা বন্ধ করতে খোয়া-বালু এনে রাখা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন পড়বে আমার লোকজন তা মেরামত করে দিবে।
সহকারী প্রাথমিক কর্মকর্তা রাসেদুজ্জামান বলেন, আমার অধীনে ৫০টি বিদ্যালয়। মাসে একবার করেও সব স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না। উনাকে আমি ২-৩ ফিট মাটি কেটে সংস্কার করতে বলেছি। উনি যে এভাবে সংস্কার করবেন ভাবিনি। আমি সামনে সপ্তাহে পরিদর্শনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল হোসেন বলেন, সংস্কারের নামে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হোক এটা আমরা কখনই সমর্থন করি না। আমি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে মাটি ভরাটের নির্দেশ দেবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানাবো।