ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

মুুজিব কিল্লার কাজ শেষ উদ্বোধনের আগেই ফাটল

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
১০ জুন ২০২৪, সোমবার

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কাজ শেষ হয়েছে মুজিব কিল্লার। শুরু থেকেই দৃশ্যমান নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কাজ শেষেও অনিয়মের সেই অভিযোগ বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিকাদার বলছে কাজ শেষ। কিন্তু বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অপরদিকে দায়িত্বরতরা বলছেন কাজ বুঝে নেয়া হয়েছে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি। ঠিকাদার এবং কর্তৃপক্ষের দুই ধরনের তথ্যে বিষয়টি আরও ধোঁয়াশার মধ্যে পতিত হয়। সরজমিন দেখা যায়, ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। ছাদের উপরে পানি জমে থাকায় ভিতরের দেয়াল ভিজে যাচ্ছে। আর আপাতত ভবনটি ব্যবহার হচ্ছে লাল মরিচের গোডাউন হিসেবে।

বিজ্ঞাপন
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পূর্ব সুজাইতপুর এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করে। যমুনা পাড়ের মানুষ যাতে বন্যা চলাকালীন তাদের গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য এই কিল্লাটি নির্মাণ করা হয়েছে। বগুড়া জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ই অক্টোবর কাজ শুরু হয়। আর শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ২৮শে ডিসেম্বর। কাজটির চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫ হাজার ৯৯৮ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বগুড়ার রাকিব কনস্ট্রাকশন। অনিয়ম দিয়েই শুরু হয়েছিল কিল্লাটির কার্যক্রম। যার কারণেই ভবনটির বিভিন্নস্থানে ফাটল ধরেছে। ২০২০ সালে মুজিব কিল্লা তৈরির স্থান হিসেবে সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের সুজাইতপুর এলাকায় স্থান বেছে নেয়া হয়। জায়গা শনাক্তের পর কিল্লাটি মাটি থেকে কতো উচ্চতা হবে তা নির্ণয়ে ভুলের কারণে কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। তবে ২য় বারের সংশোধনীতে উচ্চতা ঠিক করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে। এখানে যে বালু ব্যবহার করা হয়েছে তা কিল্লাটির পাশেই যমুনা থেকে উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ কিল্লাটি নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হয়েছে চরম অনিয়ম। দুর্গম যমুনার চরে হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে তেমন জাননি। কিল্লাটি নির্মাণে কয়েক দফায় ইঞ্জিনিয়ার পরিবর্তন হলেও অনিয়ম ঠেকানো যায়নি। কিল্লাটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে। ফলে নতুন অবস্থাতেই বেহাল দশায় হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বগুড়ার রাকিব কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ফাটলতো দেখিনি আমি। ভবনটির কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের শেষের দিকে। কর্তৃপক্ষ এখনো বুঝে নেয়নি। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, কিল্লাটি ইতিমধ্যেই হস্তান্তর হয়েছে। তবে বুঝে নেয়ার পর তিনি পরিদর্শনে যাননি। নির্মাণ বাস্তবায়নে আপনি কোনো দায়িত্বে ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজটি আমার দপ্তরের হলেও আমি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। ভবনটি ফাটা এমন তথ্য তার কাছে নেই। তৎকালীন চলতি দায়িত্বে থাকা সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম কিল্লার বিষয়টি বরাবর এড়িয়ে যান এবং মুজিব কিল্লায় নিয়োগকৃত ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার উপস্থিতিতেই এসব অনিয়ম চলমান ছিল। তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন। ২০২১ সালের ১০ই জুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল একই বছরের ২৮শে ডিসেম্বরে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। এই দীর্ঘ সময় কাজের মাধ্যমে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে ভবনের পরতে পরতে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তাদের প্রায় সবাই বলেছেন কিল্লাটি কিজন্য তৈরি হয়েছে সেটা তাদের কেউ জানে না। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা আলোচিত কিল্লাটি বর্তমানে শুকনা মরিচের গোডাউন ডিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, কিল্লাটির নির্মাণ কাজ শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। আমরা তার সময়ের অপেক্ষায় আছি। ভবনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নির্মাণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ভবনটি ফাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাটতেই পারে। তবে কিজন্য ফেটেছে সেটা না দেখে বলা মুশকিল। আর কিল্লার মধ্যে লাল মচিরে গোডাউন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কান্টু আকন্দের কাছে কিল্লার চাবি রাখা হয়েছে। তিনি হয়তো সেখানে মরিচ রেখেছেন। এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু কিল্লাটি আমাদের বুঝে দেয়নি। চাবিও হাতে পাইনি সুতরাং ভবনটি ফাটল ধরলে তার দায় দায়িত্ব ঠিকাদারের। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ভবনটি কেন ফাটল ধরেছে সেই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

পাঠকের মতামত

প্রতীক ওমর ভাই গুরুত্বপূর্ণ একটা নিউজ করেছেন।

হানিফ বাংলাদেশী
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:৫২ অপরাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status