ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত সরকারের চালাকি: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা দীর্ঘায়িত করতেই সরকার সাজা স্থগিতের চালাকির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে’ এক মানববন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের সড়কের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন এবং তার মুক্তির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছর বেশি জীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন, তারপরে নিয়ে আসা হয়েছে পিজি হাসপাতালে। সেখানে তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে সাজা স্থগিত করে। এখানে আরেকটা চালাকি আছে, চালাকিটা কী?  ছয় মাস ছয় মাস করে সাজা স্থগিত করছে, তার মানে সাজা কিন্তু কমছে না। সেই সাজা আবার গুনতে হবে ভবিষ্যতে যখন তাদের প্রয়োজন হবে, এটা হচ্ছে আরেকটা চালাকি। অর্থাৎ আরও বেশি দীর্ঘায়িত করা হবে।
তিনি বলেন, লোয়ার কোর্ট তাকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছিল। কিন্তু হায়ার কোর্ট সেই সাজা ১০ বছর করেছে। আপনারা জানেন যে, মামলাগুলো একটা সাজানো মামলা ছিল, মিথ্যা মামলা ছিল- সেভাবে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
উদ্দেশ্যটা ছিল, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। তাকে সরিয়ে দেয়া মানে এদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বকে সরিয়ে দেয়া, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সরিয়ে দেয়া, উন্নয়নের পক্ষের শক্তিকে সরিয়ে দেয়া। মির্জা ফখরুল বলেন. ইতিমধ্যে আমরা দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, আমরা পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি, সেটা সম্পূর্ণভাবে সামগ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্দোলন। কেন? বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র এক ও অভিন্ন, একে আলাদা করা যাবে না। যদি দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারি, আমরা গণতন্ত্রকেও মুক্ত করতে পারবো। আসুন আমরা দলমতনির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই এবং বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে যে অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে তার মুক্তি চেয়ে সবাই কথা বলুন, সোচ্চার হোন, আন্দোলনে শরিক হোন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আপনারা দেখেছেন, যে সমস্ত চুক্তি করা হয়েছে, সমঝোতা করা হয়েছে- সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কী রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশুনা করবার জন্য পরামর্শ দেন। আমি তার কথার গুরুত্ব দিতে চাই। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সঙ্গে বিদ্রোহ করবেন না, বেঈমানি করবেন না। মানুষকে বোকা বানিয়ে, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি করার সাহস করবেন না, এমন কোনো সমঝোতা স্মারক সই করবেন না, যেটা আমার দেশের, আমার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, কী এনেছেন এবার ভারত সফরে গিয়ে? তিস্তার পানি বণ্টনের চুক্তি করে পারেননি। কী করেছেন? তিস্তা প্রকল্পের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে, আমরা দুইটার মধ্যে দেখবো কোনটা ভালো হয়। আবার সব শেষে একথা বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে তাদেরকে যদি আমরা কাজটা দেই তাহলে আমাদের পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা সব বোকা মানুষগুলো এদেশে বাস করি। আপনি তিস্তার পানির যে সমস্যা সেটাকে আপনি বাতিল করে দিলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান আর হলো না, সমস্যাই রয়ে গেল। এবার আপনারা একটা দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কেন আমাদের নেত্রী আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না। কারণ সকলে জামিন পায়, খালেদা জিয়া পান না। আজকে আইনি প্রক্রিয়াকেও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাধাগ্রস্ত করেছেন। তিনি ৪০২ ধারা নিজের হাতে নিয়ে শর্তসাপেক্ষে বন্দি অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসভবনে রেখেছেন। আমরা বলতে চাই, কারও করুণা-কৃপা আমরা চাই না। আমরা আমাদের অধিকার জনগণকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করবোই। আমরা বলতে চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই জনগণের মুক্তি, খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তিÑ এই কথাটা সত্য। এই সত্য উপলব্ধি করে এই চেতনা নিয়ে আমরা রাজপথে নামবো। জেল-আর মৃত্যুÑ এটা আমাদের জন্য অবধারিত। তাই আর কাউকে ছাড় দেবো না। লড়াই আমরা করবো, লড়াইয়ে বাধা আসলে সেই বাধা আমরা অতিক্রম করবো। আমরা আর চুপ করে ঘরে বসে থেকে মার খেতে রাজি না।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফরিদা ইয়াসমিন, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status