শেষের পাতা
সিলেটে উজানের ঢলের ফের চোখ রাঙানি, উৎকণ্ঠা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৬ জুন ২০২৪, রবিবারমে’র শেষার্ধ্বে সিলেটে হঠাৎ নেমে এসেছিল উজানের ঢল। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত। এক রাতের ঢলের তোড়ে বন্যা দেখা দেয় সিলেটে। নগরেও ঢুকে পড়েছিল পানি। ১০ দিনের তাণ্ডব শেষে সেই পানি নেমে গেছে। তবে; এখন হাওর-বিল, নদী-নালা পানিতে টুইটম্বুর। এই অবস্থায় সিলেট অঞ্চলে ফের উজানের ঢলের চোখ রাঙানি চলছে। ঢল নামছে। এখনো গতি বাড়েনি। এরই মধ্যে বন্যার শঙ্কায় চিন্তিত সবাই। খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট ও তার উজানে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে শঙ্কা কাটছে না। ইতিমধ্যে কম ধীরগতিতে হলেও ঢল নামা শুরু হয়েছে। কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি বাড়লে নগরের বন্যা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। ভারতের মেট্রোলজি বিভাগের তথ্য মতে; মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে নতুন করে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৫১৩ মিলিমিটার। যা অতিবৃষ্টি হিসেবেই চিহ্নিত করছেন আবহাওয়াবিদরা। বৃষ্টিপাতের কারণে চেরাপুঞ্জির পানি কয়েক মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে করে ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জের পানি বাড়ছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে; এই পানি সিলেট সদর সহ কয়েকটি উপজেলায় প্রবাহিত হবে। আর কানাইঘাটে পানি বাড়ার কারণে জেলার উজানের কয়েকটি উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে; সিলেট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেটের আকাশে বজ্রসহ মেঘের অবস্থান থাকায় আরও কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে; সিলেট অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে ঈদ প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটে এর প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টির মৌসুম থাকার কারণে হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত ২৭শে মে থেকে সিলেট ও তার উজানের মেঘালয় এবং আসামের বিস্তীর্ণ এলাকায় টানা বৃষ্টি হয়। এ কারণে টানা ১০ দিন বিপর্যয়ের মধ্যে কেটেছে সিলেট। সিলেট সিটি করপোরেশন সহ জেলার ১৩টি উপজেলাই বন্যায় প্লাবিত হয়। তছনছ হয়ে যায় কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের রাস্তাঘাট। ঢলের তোড় বেশি থাকায় এসব এলাকার গ্রামীণ ও উপজেলা রাস্তাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রথম দফা ঢলে সিলেটে ৪৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। আউশ, আউশের বীজতলা সহ কৃষিখাতে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সিলেট-হরিপুর-গাছবাড়ি সড়কে এখনো পুরোপুরি যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি রয়েছে। নতুন করে পানি বাড়লে এই সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সিলেট জেলায় ঢলের পানি সবচেয়ে বেশি আসে বরাক নদী দিয়ে। সেটি জকিগঞ্জে এসে সুরমা ও কুশিয়ারায় বিভক্ত হয়েছে। বরাকের শতকরা ৮০ ভাগ পানি টানছে কুশিয়ারা। এ কারণে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকায় গত ১৫ দিন ধরে বন্যার পানি বাড়ছে। এতে করে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। কুশিয়ারা নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শেরপুরেও পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। অন্যদিকে; ঢল থেমে যাওয়ার কারণে সুরমার পানি কমেছিল। সব পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসে। নতুন করে ঢল আসার কারণে ফের বাড়তে শুরু করেছে সুরমার পানি। এ ছাড়া; সীমান্ত থেকে প্রবাহিত হওয়া সারি, ডাউকি, পিয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বাড়ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও ঢল নামা অব্যাহত থাকায় ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন তারা। জৈন্তাপুরের সারি ও গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- প্রথম দফা ঢল চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছিল। ফের ঢলের তোড়জোড় শুরু হওয়ার কারণে তারা শঙ্কায় রয়েছে। এ কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সরকার পাশে আছে- প্রতিমন্ত্রী : এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের পাশে এগিয়ে যেতে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার জন্য, তাদের পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য। তিনি বন্যাকবলিত মানুষকে দুই হাত খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বানভাসিদের পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার আছে। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ও দশঘর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যাকবলিত মানুষের পাশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে একথা বলেন।