ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

থানচি কলেজে ৩৭ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না

নুরুল কবির বান্দরবান থেকে
১৬ জুন ২০২৪, রবিবারmzamin

টানা তিন বছর কোনো বেতন-ভাতা পান না থানচি কলেজের ৮ জন শিক্ষক। ধাপে ধাপে বেতন পেলেও ৩৭ মাস ধরে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির চাপে ও দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের মুখে নেই কোনো হাসি। আছে অনেক অবহেলা ও বঞ্চনার কথা। ক্লাস নিচ্ছেন অভুক্ত পেটে। অথচ বড় আশা করে কলেজের শিক্ষায় দীক্ষা নিয়েছিলেন এসব মানুষ গড়ার কারিগর।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে থানচি কলেজ স্থাপিত হয়। এর পরই বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে ভর্তি হতে থাকে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা। সেসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে কলেজে শিক্ষার কার্যক্রমের পথচলা শুরু হয়। শুরুতেই কলেজে চাকরিরত ছিলেন অধ্যক্ষসহ শিক্ষকের সংখ্যা ১৩ জন ও কর্মচারী- কর্মকর্তা ৫ জন।

বিজ্ঞাপন
বর্তমানে সেই কলেজের অধ্যক্ষসহ ৯ জন শিক্ষক উপস্থিত রয়েছে।  বর্তমানে থানচি কলেজের সেই আটজন শিক্ষক বিনা বেতনে ১৩৫ জন কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালাচ্ছেন। কলেজ শুরুতেই ৫ বছর ধাপে ধাপে বেতন পেলেও পরবর্তীতে বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এ পর্যন্ত তারা আর কোনো বেতন-ভাতা পাননি। গত ৩৭ মাস শূন্য হাতে প্রতিদিন অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায়ও তারা ক্লাস, পরীক্ষা যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবুও আগামী ৩০শে জুন এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৃথক বেতন স্কেল চালু তো দূরের কথা, অনেক শিক্ষক এখনো ঠিকমতো বেতনই পান না। আবার কয়েকজন শিক্ষক বেতন না পাওয়াই কলেজের চাকরি বলবৎ রেখে অন্যস্থানে চাকরি শুরু করেছে। কোনো কোনো শিক্ষক বেতন না পাওয়ার কারণে ক্লাস তো দূরের কথা বিদ্যালয়ের কিনারেও আসে না। তাছাড়া কলেজের মধ্যে সেসব শিক্ষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা বৈষম্যতা। শুধু তাই নয় কলেজের পাশে নতুন ভবনের কাজ ও শিক্ষকদের বেতন পাওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেয়ার পাশাপাশি নিজের ইচ্ছামতো থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে থানচি কলেজের অধ্যক্ষ ধমিনিক ত্রিপুরার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, থানচি কলেজের অধ্যক্ষ ধমিনিক ত্রিপুরার যোগসাজশের কারণে নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন শিক্ষকদের  কলেজের অনুপস্থিত থাকার শিক্ষকদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ দিয়েছেন। ফলে সেসব শিক্ষকরা কলেজের শুরু থেকে অনুপস্থিত থেকেছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। বরঞ্চ এই অধ্যক্ষ’র প্রশ্রয়ে অনুপস্থিত শিক্ষকরাও সুযোগ পেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
সরজমিন দেখা গেছে, থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে আধা কিলোমিটার ভেতরে ইউনিয়ন পরিষদের সংলগ্ন দুইতলা বিশিষ্ট ভবন থানচি কলেজ। সেখানে ব্যবসা ও মানবিক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা। সেই আটজন শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় প্রতিদিন উপস্থিত রয়েছেন। কলেজের পাশের আরেকটি নতুন ভবন। সেটি দীর্ঘ বছরের পর বছর মেয়াদি উত্তীর্ণ শেষ হলেও ভবন কাজ মাত্র এক শতাংশ। চারিপাশে ভবনের পিলার ছাড়া আর কিছুই নাই। সেই ভবনের সমাপ্তি না হওয়ার পেছনেও থানচি কলেজের অধ্যক্ষ গাফিলতি রয়েছে। এই অধ্যক্ষ নিজের স্বার্থ ছাড়া দায়িত্বকে অবহেলা করে বেতন না পাওয়াসহ পাহাড়ের সমান অভিযোগ কলেজের শিক্ষকদের। তবে এসব থেকে সমস্যা সমাধানের দাবিও জানান শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের শিক্ষকরা জানান, কারও ২৬ মাস কারও ৩৭ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবুও আমরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের টাকা খরচ করে কলেজে আনুষঙ্গিক কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।  ধাপে ধাপে বেতন পেলেও সেটির চেয়ে অভাব-অনটনে পার করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ থাকায় আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
নতুন নিয়োগকৃত থানচি কলেজের শরীর চর্চার শিক্ষক উচসিং মারমা বলেন, গত বছরের কলেজের সার্কুলেশন মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। তারপর থেকে এখনো বেতন-ভাতা পায়নি। আর নতুন নিয়োগের সময় যারা ছিল তাদেরকে নিয়মিত দেখা মেলেনি। তবুও ধার-দেনা নিয়ে নিয়মিত পাঠদান দিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে থানচি কলেজে অধ্যক্ষ ধমিনিক ত্রিপুরা বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ টাকা, শিক্ষক কর্মচারীদের নিকট থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা মোট ৬ লাখ টাকার এফডিআর ও জেনারেল ফান্ডে জমা দেয়ার আর্থিক সংকট হয়েছে। এর আগে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পাঠদানের অনুমোদন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৪১৯ টাকা দিয়েছেন। আমি নিজ থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা খরচ করেছি।
বাকি তিন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ বলেন, ২০২৩ সালে ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি বেতন দিতে না পারায় তারা এখনো যোগদান করেননি। 
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি থোয়াইহ্লা মং মারমা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ্দ পেলে তারপর শিক্ষকদের মাঝে বেতন-ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া শিক্ষার্থী কম ও এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে কিছু বিঘ্ন হতে পারে। আর শিক্ষক নিয়োগের টাকা নেয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status