খেলা
‘নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেট’
স্পোর্টস ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার
আপনি নিশ্চয়ই চৌকস একটি গোয়েন্দা বাহিনীর দপ্তরে ক্রিকেট ব্যাট আশা করবেন না। নিউ ইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা অফিসার আহমেদ চৌহানের ডেস্ক, চারপাশে অপরাধীদের তথ্য উপাত্ত পিন করা। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। এর মাঝখানে নিবিষ্টমনে কাজ করে চলেছেন চৌহান। তার ডেস্কের একপাশে লাগানো একটা স্টিকার ‘নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেট’।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত গোয়েন্দা অফিসার চৌহান কাজের পাশাপাশি নিজের পছন্দের খেলা ক্রিকেটটাও চালিয়ে গেছেন নিজের মতো। গড়ে তুলেছেন অফিসারদের ক্রিকেট ক্লাব, ক্লাবকে নিয়ে গিয়েছেন দেশে দেশে। লোকজন প্রথম প্রথম তার ডেস্কের সামনে এলেই অবাক হতো। গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টে ক্রিকেট!
চৌহান নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেট দল সম্পর্কে লোকেরা যখন জানতে পারে তখন সবাই অবাক হয়। আমার সহকর্মীরা আমাকে ‘ক্রিকেট গাই’ বলে ডাকে।” চৌহানের সহকর্মী অফিসার আন্তোনিও আন্তেনুচ্চি, তিনি নিউইয়র্ক পুলিশের পাবলিক ইনফরমেশন বিভাগে কাজ করেন। আন্তেনুচ্চি ক্রিকেট খেলাটা সেভাবে বোঝেন না। তিনি চৌহানের কাছ থেকে শুনে শুনে ক্রিকেট খেলাটা বোঝার ও রপ্ত করার চেষ্টা করছেন।
সপ্তাহের শেষদিন কোনো কাজ রাখেন না চৌহান। তার ওই দিনটি শুধু ক্রিকেটের জন্যই বাজেট করা। ৯ই জুন রোববার ছুটির দিনে তিনি নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখতে গিয়েছেন সহকর্মী আন্তেনুচ্চিকে সঙ্গে নিয়ে। যদিও পাকিস্তান হেরেছে তবুও চৌহানের কাছে এই দিনটি অবিস্মরণীয়। চৌহান বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিন আমার ঘরে মিলনমেলা বসে। খেলার দিন আমার বাড়িতে কাছাকাছি থাকা বন্ধু এবং নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে খেলা দেখার আয়োজন করি। আর আজকে তো স্টেডিয়ামেই।’
চৌহান ১৪ বছর বয়সে ১৯৯২ সালে পাকিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। নিউইয়র্ক পুলিশে যোগ দেওয়ার পর ভারত, পাকিস্তান ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে আসা অফিসারদের নিয়ে ক্রিকেট ক্লাব তৈরী করেন ২০১০ সালে। চৌহান বলেন, ‘আমরা ক্লাবটি যখন গঠন করি তখন খেলার জন্য পর্যাপ্ত খেলোয়াড় ছিল না। তারপরে সেই সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ক্লাবে বর্তমানে ৩৬ জন সদস্য আছে। সদস্যরা ট্রানজিট, হাউজিং সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা।’
২০১১ সাল থেকে এই ক্রিকেট ক্লাবটি কমনওয়েলথ ক্রিকেট লীগে অংশগ্রহণ করে। কমনওয়েলথ লীগে নিউ ইয়র্ক সিটির আশেপাশের ৭০টিরও বেশি দল খেলে থাকে। এই লীগ ছাড়াও ক্লাবটি অন্যান্য দেশের পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধেও খেলেছে। ইংল্যান্ডের ‘ডিলান স্টুয়ার্ট মেমোরিয়াল ট্রফিতে’ খেলতে গিয়েছেন চৌহানরা। এই ট্রফিতে তাদের খেলতে হয়েছে যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের পুলিশ বিভাগের ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে। এর বাইরে তারা সফর করেছেন পাকিস্তান ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও।
নিউইয়র্ক পুলিশের ক্রিকেট ক্লাবটি শুধুই ক্রিকেট খেলে না, মানবিক কাজের মাধ্যমে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। চৌহান বলেন, ‘আমরা জ্যামাইকার বাচ্চাদের জন্য খেলার কিট দিয়েছি এবং গায়ানার একটি এতিমখানায় বই এবং অন্যান্য খেলাধুলার জিনিসপত্র দিয়েছি। পাকিস্তানের বাচ্চাদের জন্য দিয়েছি ক্রিকেট সামগ্রী।’ নিজেদের লোগোতে গোলাপি বল রাখা ক্যান্সার সচেতনতা কার্যক্রমের একটি অংশ বলে জানান চৌহান।
ক্লাবটিতে শুধুমাত্র পুলিশ অফিসাররাই খেলতে পারে। চৌহান বলেন, ‘আমি হাজার হাজার ইমেল পেয়েছি, ওরা আমাদের হয়ে খেলতে চায়। কিন্তু আমাদের ক্লাবটি তো শুধুমাত্র অফিসারদের জন্য। কয়েক বছর আগে গায়ানার একজন যুবক বলেছিল সে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে চায় শুধুমাত্র খেলার জন্য। সেই যুবক এখন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সহকারী এবং আমাদের ক্লাবের নিয়মিত খেলোায়াড়।’
চৌহানের আশা একদিন এই ক্লাবের কেউ একজন বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবে। নিউইয়র্ক পুলিশ ক্রিকেটের এই অন্যতম উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমার লক্ষ্য হল একটি যুব প্রোগ্রাম শুরু করা, সারা বছর ধরে আমরা খেলা চালিয়ে যাব। আমাদের একজন অফিসার কোনো একদিন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে খেলবে আপাতত এটাই স্বপ্ন।’
ক্রিকবাজ থেকে ভাষান্তর: শেরিফ ফারুকী