শেষের পাতা
কর্মসূচির আগে দল গোছাতে চায় বিএনপি
কিরণ শেখ
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
আবারো সরকার বিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোটগুলো। রাজপথে নামতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা। মতামত নিচ্ছেন বিভিন্ন মহলের। এরই অংশ হিসেবে ২০শে মে প্রায় ৪০ জন টকশো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে আন্দোলনের পরিকল্পনা, কৌশল ও ধরন নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনা হয়। তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি, সভা এবং সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন।
২০শে মে বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্ট্যাব্যাপী এই বৈঠকে, ভবিষ্যৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, আন্দোলনে যুব, ছাত্র, নারী, কৃষক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত সবাই সরকার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। এই আন্দোলনের যুব সমাজ, তরুণ, ছাত্র সমাজকে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে নারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদেরও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার ওপরে গুরুত্বারোপ করা হয় বৈঠকে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, এই সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধারের বিষয়ে সবাই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। পাশাপশি সবাই আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।
এদিকে ফের আন্দোলন মাঠে নামানোর জন্য সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। তাদের কাছ থেকে কর্মসূচি চাওয়া হয়েছে। আবারো তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে দলটি। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্তি বাড়াতে চাইছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও গ্রামগুলোতে সফর করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকেও মাঠে নামাতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে ছাত্রদল জেলাভিত্তিক কর্মী সম্মেলন শুরু করেছে এবং যুবদলও ২৪শে মে থেকে দেশের ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় সফর শুরু করবে। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলও ২৪শে মে থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু করবে এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গত ১৮ই মে থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯শে শে মে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই ৪ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে জেলা ও সাংগঠনিক সফরে কেন্দ্রীয় নেতারা কী কী বার্তা দিবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়। বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ। তাদেরকে উজ্জীবিত করতে হবে। বলতে হবে, হতাশার কিছু নেই। কারণ ৭ই জানুয়ারি বিএনপির বিজয় হয়েছে এবং জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। পাশাপাশি আগামী সরকার বিরোধী আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার জন্য কেন্দ্রের দেয়া বিভিন্ন বার্তা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে এসব সফরে পৌঁছে দেয়া হবে।
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল মানবজমিনকে বলেন, ২৪শে মে থেকে রাজশাহী বিভাগ সফরের মধ্যদিয়ে কৃষক দলের সাংগঠনিক সফর শুরু হবে। এই সফরে মূলত নেতাকর্মীদের আবারো উজ্জীবিত করে আন্দোলনের বার্তা দেয়া হবে। পাশপাশি বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরণকারী, অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, গত ১৮ই মে থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। এই সফরের জন্য ১৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমকে ৪ থেকে ৫টা জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পঙ্গুত্ব এবং কারাবন্দি নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে। সেখানে নেতাকর্মীদের আগামী আন্দোলনের জন্য একতা ও ঐক্যের বার্তা দেয়া হবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে আরও বেগবান করারও বার্তা দেয়া হবে।
ওদিকে গত ১৭ই মে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশের ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় সফরসূচি প্রণয়ন এবং জেলা সফর সফল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান মানবজমিনকে বলেন, ২৪শে মে থেকে যুবদল সাংগঠনিক সফর শুরু করবে। এজন্য ৩৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই সফরে বিগত আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেয়া হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবারো সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার বার্তা দেয়া হবে।
এর আগে গত ৮ই মে থেকে প্রথম ধাপে জেলাভিত্তিক কর্মী সম্মেলন শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আর দ্বিতীয় ধাপে ২৩শে এপ্রিল ফরিদপুর মহানগর ও ফরিদপুর জেলা এবং ২৪শে এপ্রিল রাজবাড়ী এবং মাদারীপুর জেলায় কর্মী সম্মেলন করবে সংগঠনটি।
পাঠকের মতামত
দল গুছিয়ে ২০২৮ এর নির্বাচনে আবার হঠকারী নির্বাচন বর্জন- বিএনপির রাজনৈতিক রোড ম্যাপ খেয়াল করলে যেকোনো বিচক্ষণ মানুষই বুঝে যাবে! কারণ তারেক জিয়ার চেয়ার নিশ্চিত না করে বিএনপির কোনো "মেম্বারও" চেয়ারে বসতে পারবে না!!