খেলা
‘এটা স্রেফ খ্যাপাটে, পুরোপুরিই পাগলাটে ব্যাপার’ দুই বেবি মালিঙ্গার একই বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে মালিঙ্গা
স্পোর্টস ডেস্ক
২২ মে ২০২৪, বুধবার
দু’জনই তার মতো স্টাইলে বোলিং করেন। দু’জনই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার নামে প্রশংসা পান। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ দলে থাকা এই দুই পেসার নুয়ান থুসারা ও মাথিসা পাথিরানাকে নিয়েই উচ্ছ্বসিত লাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গার মতোই স্লিঙ্গিং অ্যাকশন ও একই ঘরানার বোলার বলে দু’জনকে বেবি মালিঙ্গা বলে ডাকা হয়। দু’জনের একই দলে একসঙ্গে একই টুর্নামেন্ট খেলাকে খ্যাপাটে, পুরোপুরিই পাগলাটে ব্যাপার বলছেন মালিঙ্গা।
সাম্প্রতিক ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মালিঙ্গা এই মন্তব্য করেন। যদিও এটা পজেটিভভাবেই বলেছেন। মালিঙ্গা বলেন, ‘আপনাকে বোঝাতে পারবো না, এটা কতোটা খুশি করেছে আমাকে। টি-টোয়েন্টিতে সবসময়ই ইয়র্কার নিয়ে কথা হয়। কারণ ছক্কা থামাতে পারে এই ডেলিভারি। এরকম ইয়র্কার করার মতো দু’জন পেসার একই দলে একই টুর্নামেন্টে খেলবে? এটা স্রেফ খ্যাপাটে, পুরোপুরিই পাগলাটে ব্যাপার। প্রথমবার আমি দেখছি, কোনো দেশে সম্পদের গভীরতা এতটা। আমার মনে হয়, (শ্রীলঙ্কার) বোলিং লাইন-আপ এখন বিশ্বের সেরা।’
এই দুই পেসারকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন মালিঙ্গা। আইপিএলে এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচ হিসেবে ২৯ বছর বয়সী থুসারার সঙ্গে লম্বা সময় কাজ করেছেন তিনি। ২১ বছর বয়সী পাথিরানার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন নানা সময়েই। দুই উত্তরসূরির মধ্যে থুশারার সঙ্গে নিজের মিল একটু বেশিই খুঁজে পান মালিঙ্গা। তিনি বলেন, ‘সে (থুসারা) নতুন বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকায়, ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য চমৎকারভাবে বাইরে নিয়ে যায়। তার স্লোয়ার বলও দারুণ, যদিও সেটি আমার মতো এতটা হুট করে নিচু হয়ে যায় না, তারপরও বেশ ভালো। পাশাপাশি তার ইয়র্কারও ভালো। অনুশীলনে এখন ওয়াইড ইয়র্কার, সোজা ইয়র্কারে তার নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালো।’
তবে অনভিজ্ঞতার কারণে ম্যাচে মাঠ সাজানোয় এখনো থুসারার ঘাটতি দেখছেন মালিঙ্গা, ‘সে ম্যাচ জেতানোর মতো বোলার। তবে ম্যাচে গিয়ে সে কখনো কখনো দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে যে মাঠ কীভাবে সাজাবে। এই পর্যায়ে সে যথেষ্ট ম্যাচ খেলেনি বলে এটা হতে পারে। মাত্র কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ সে খেলেছে। এই কারণে, দল যখন তাকে নিয়ে পরিকল্পনা করছে, অধিনায়ককে একদম তার পাশে থাকতে হবে। অধিনায়কদের জানতে হবে, কোন ধরনের ডেলিভারি সে করতে যাচ্ছে, তাহলে সেই অনুযায়ী মাঠ সাজাতে পারবে সে। কোচরা যদি তাকে নির্দিষ্ট একটি ধরনে বল করতে বলে, অধিনায়কদের সহায়তা না পেলে তা কাজে লাগে না।’
আর পাথিরানার বল ডেলিভারি করেন মালিঙ্গার চেয়েও নিচু জায়গা থেকে। এজন্য মাঝের ও শেষের ওভারগুলোয় তিনি বেশি কার্যকর।
তরুণ এই পেসারকে সেভাবেই কাজে লাগাতে পরামর্শ দিলেন মালিঙ্গা। শ্রীলঙ্কার এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলেন, ‘কোনো ভয় ছাড়াই মাথিসাকে শেষের ওভারগুলোয় কাজে লাগাতে পারেন। এমনকি মাঝের ওভারগুলোয় ব্যাটসম্যানকে নড়বড়ে করে দিতে চাইলে তার শর্ট বল কাজে লাগবে। কিংবা ওই সময়টায় এক প্রান্ত স্পিনারদের চালিয়ে আরেক প্রান্তে দ্রুতগতির ইয়র্কার করতে চাইলেও তাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। নতুন বলে সে খুব একটা বল করে না। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে তাকে কাজে লাগানো যায়।’
তিনি বলেন, ‘মাথিসার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি দেখি, তা হলো সে বিশাল হৃদয় বোলার। ম্যাচে খুব ইতিবাচক থাকে। এসব ব্যাপার কাউকে শেখানো যায় না। সহজাতভাবেই এসব আসে। এমনকি আইপিএলে তার প্রথম মৌসুমেও সে একদম ভয়ডরহীন ছিল। যদি তাকে বলুন যে, এই পরিস্থিতিতে এটা করতে হবে, সে তা করে দেবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্য তার আছে, নিজের চিন্তাভাবনায় সে স্বচ্ছ।’
মালিঙ্গার মতো স্লিঙ্গিং অ্যাকশনে এবং অনেক নিচু থেকে বল ডেলিভারি করার মতো বোলার লঙ্কান ক্রিকেটে উঠে আসছে আরও। মালিঙ্গা তাতে বেশ খুশিই। তিনি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের একজনকে দেখেছি আমার মতো অ্যাকশনে বোলিং করছে। জাফনার তরুণ এক পেসারকেও দেখেছি। আমার মতো অ্যাকশনের পেসার এত উঠে আসছে যে, আমাকে এটা নিয়ে অনেকে কথা শোনাচ্ছে এখন। তবে তাদের যদি উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার প্রতিভা থাকে, আমি কী করতে পারি! তারা উঠে এলে আমি খুবই খুশি। আমার এই শিল্পের সবকিছু তাদেরকে শেখাবো আমি।’