শেষের পাতা
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন আজ
ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ
স্টাফ রিপোর্টার
২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবারনানা শঙ্কার মধ্যেই আজ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। আজ ১৫৬ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এই ধাপে ২৪ উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে। বাকি উপজেলায় ভোট হবে ব্যালটে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ২১ জন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।
এদিকে এ ধাপেও বিএনপি সহ সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ করছে না। জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে তারা। এ ছাড়া নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। যার ফলে ক্ষমতাসীন দলটিরই একাধিক প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এতে দ্বিতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ধান কাটার মৌসুম, বৈরী আবহাওয়া, বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসা এবং কর্মস্থল থেকে ভোট দিতে না যাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। ভোট দিলেও তা গণনা করা হবে কিনা ভোটারদের মনে এমন সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা সাধারণ মানুষকে এই ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনাও নেই। বরং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
ভোটের প্রস্তুতি: দ্বিতীয় ধাপে ১০টি অঞ্চলের ১০৬ পৌরসভা, ১ হাজার ৪৯৪ ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি আর ভোটকক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯টি। গতকাল ৬৯৭ কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে। আজ যাবে ১২ হাজার ৩২৩ কেন্দ্রে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোটার রয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ: দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৪৭ হাজার ৮২৯ জন, মোবাইল টিমে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ১৩ হাজার ৪৯০ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৫ হাজার ৫৬৭ জন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট র্যাব মোতায়েন থাকবে ২ হাজার ৭৬৮ জন। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন। নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ মোট ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ এলাকার (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
যন্ত্রচালিত যানবাহন ও নৌযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ: গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোট (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণের দু’দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ: তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্গলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলার জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি ৩টি ইউনিয়নের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৬ উপজেলায় ২৫ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি, ১৭ টিম র্যাব, অতিরিক্ত কোস্টগার্ড ২ সেকশন ও ৩৮ জন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসি আলমগীর বললেন ভোটের হার কম হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: ভোটের হার বেশি হলে ইসি খুশি। কিন্তু না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. আলমগীর এমন মন্তব্য করেন। ধান কাটা তো শেষ এখনো কি ভোট কম পড়বে বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে বলছেন বিষয়টা তো এ রকম নয়। আরও তো কারণ আছে। ভারতে যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে সব দলগুলো অংশ নিয়েছে। তারপরও ৬০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। আমাদের যে প্রথম ধাপের নির্বাচন হলো ওইদিন সকালে বৃষ্টি ছিল, ধান কাটা ছিল, একটি বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এই তিনটা কারণ তো আছেই। এ ছাড়াও আরও অন্যান্য কারণ আছে হয়তো, সেগুলো আমরা জানি না। আবার স্থানীয় নির্বাচনে অনেকেই কর্মস্থল থেকে এসে ভোট দিতে চান না। এটাও একটা কারণ।
দ্বিতীয় ধাপে কেমন কাস্টিং হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ ২১শে মে কেমন আবহাওয়া থাকবে, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কেমন- এসবের ওপর নির্ভর করবে। ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি, কিন্তু নাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা সবটাতেই সন্তুষ্ট। কেননা, ভোটের হার টার্গেট করা নেই। ফ্রান্সের নির্বাচনে যেমন বলা আছে এত শতাংশ ভোট না পড়লে আবার নির্বাচন হবে। তুরস্কে আছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে এর কম। তাদের সংবিধানে যেটা বলে দিয়েছে যে, এত শতাংশ ভোট পড়তে হবে, সেটা না হলে ফের নির্বাচন হবে। আমাদের এ রকম আইন নেই। তাই যে হার আসবে তাতেই আমরা খুশি।