শরীর ও মন
সন্তানের সাফল্যের জন্য
ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
৪ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবারআত্মবিশ্বাস: যে শিশুরা তাদের সফলতার জন্য নিয়তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে, তারা সাধারণত অন্যদের তুলনায় বেশি সাফল্য অর্জন করে। শিশুরা কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে অভিভাবকরা সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য করতে যান। এতে শিশু নিজেকে অযোগ্য মনে করতে পারে, তার আত্মবিশ্বাস তৈরি না হতে পারে। তাই ছোটখাট সমস্যার সমাধান শিশুকেই করতে দিন। একান্তই না পারলে আপনি সাহায্য করুন। মনে রাখবেন, নিজের কাজের দায়িত্ব নেয়া, সমস্যার মুখোমুখি হলে সমাধান বের করা এবং নিজে নিজে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। সহানুভূতি: সহানুভূতি অনুভব করার জন্য অন্যরা কী অনুভব করছে, বাচ্চাদের তা বুঝতে হবে অর্থাৎ সংবেদনশীল হতে হবে। সহানুভূতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো শিখতে হবে এবং নিজে অন্যজনের পরিস্থিতিতে থাকলে কেমন বোধ করতো, সেটি অনুভব করা শিখতে হবে। সন্তান যাতে তাদের আবেগ যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে, এজন্য বাবা-মাকে উদ্যোগী হতে হবে। শিশুকে আবেগ প্রকাশক যথাযথ শব্দ শেখাতে হবে, বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে শিশুর মানসিক অবস্থা বুঝতে হবে, তারা যাতে সহজে আপনার কাছে তাদের আবেগ প্রকাশ করতে পারে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মানুষের চেহারা দেখেই কীভাবে সাধারণ আবেগ অনুভূতিগুলো বোঝা যায়, তা শিশুকে শেখান।
আত্মনিয়ন্ত্রণ: নিজের মনোযোগ, আবেগ, চিন্তাভাবনা, কার্যকলাপ ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার সঙ্গে সফলতার খুব গাঢ় যোগসূত্র আছে। এটি বাচ্চাদের ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে এবং সফল হতে শেখানোর অন্যতম সেরা উপায়। মৌখিক পরামর্শও এক্ষেত্রে শিশুদের কাজে আসতে পারে। যেমন- শিশু যদি কোনো কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, তাহলে আপনি তাকে বলতে পারেন ‘মনোযোগ দিয়ে কাজটি করো’। ফলে শিশুটি হয়তো আবারো মনোযোগ দিয়ে কাজটি করবে। কোনো কিছুর প্রতিক্রিয়া দেয়ার আগে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় নেয়ার অনুশীলন করাতে পারেন। এটিও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখানোর ভালো একটি উপায়।
সততা: সততার শিক্ষা শিশুর নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়তা করে এবং এর ফলে সে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে। সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের প্রত্যাশা থাকতে পারে। এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাচ্চাদেরকে তাদের নিজস্ব নৈতিকতা তৈরি করার জায়গা দেয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি সেটি যদি বাবা-মায়ের থেকে ভিন্নও হয়। শিশুর নৈতিক আচরণের প্রশংসা করুন। এতে তারা অনুপ্রাণিত হবে এবং আরও সততার সঙ্গে কাজ করবে।
কৌতূহল: সব শিশুই কৌতূহলী হয়। কৌতূহল শিশুকে বিভিন্ন কিছু শিখতে আগ্রহী রাখে এবং নতুন, অনিশ্চিত বা চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোকে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খেলা, খেলনা, পেইন্ট বা লেগোর মতো সৃজনশীল উপাদানের মাধ্যমে শিশুর কৌতূহল গড়ে তুলুন। বাবা-মা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমেও শিশুকে কৌতূহলী করে তুলতে পারেন।
অধ্যবসায়: এমন একটি গুণ, যা সারাজীবন শিশুর কাজে আসবে। কোনো কাজে হাল ছেড়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতিতেও শিশুকে অনুপ্রাণিত রাখতে পারে এই গুণ। বাচ্চারা কোনো কাজ করতে গেলে ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। এই ভুলের কারণে সে হয়তো নিরুৎসাহিত হতে পারে। কিন্তু বাবা-মা এক্ষেত্রে শিশুর ভুল শনাক্ত করে দিতে পারেন এবং ব্যর্থতাকে বড় করে না দেখে তাকে আরও অনুপ্রাণিত করতে ভূমিকা পালন করতে পারেন। কীভাবে একটি কঠিন কাজও সহজে ও দ্রুত করা যায়, তা সন্তানকে শেখাতে পারেন। এতে শিশুরা কোনো কাজকে চাপ মনে করে সেটিকে এড়িয়ে যাবে না।
আশাবাদ: আশাবাদী হওয়া খুব ভালো একটি গুণ। এটি বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জকে অস্থায়ী হিসেবে দেখতে সাহায্য করবে, ফলে তারা সহজে হতাশ হবে না। যেহেতু শিশুরা অন্যদের দেখে দেখে শিখে, তাই বাসায় ইতিবাচকতা প্রদর্শন করা বাবা-মার জন্য গুরুত্বহ।
লেখক: কনসালটেন্ট, শিশু বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার শাহ্ মখ্দুম, রাজশাহী। (২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল ০১৯৮৪-১৪৯০৪৯।