দেশ বিদেশ
সেই ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
স্টাফ রিপোর্টার
৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবারশেরপুর জেলার নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে তথ্য কমিশন। মঙ্গলবার তথ্য চাইতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড পাওয়া সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে অসহযোগিতার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তথ্য কমিশনের তলবে হাজির হন নকলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এদিন সকাল সোয়া ১০টায় তিনি তথ্য কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হন। বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশনের কার্যালয়ে তার ব্যাখ্যা দেন তিনি। বের হয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, যা বলার আমি তথ্য কমিশনকে বলেছি। আমি কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। তিনি অপরাধ করেছিলেন বলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৫ই মার্চ নকলা ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে একটি সরকারি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন শফিউজ্জামান রানা। এ সময় আবেদন প্রাপ্তির অনুলিপি চান তিনি। তবে, আবেদন প্রাপ্তির অনুলিপি দিতে গড়িমসির অভিযোগ করেন রানা। একপর্যায়ে অসদাচরণের অভিযোগে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের নির্দেশনায় উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে দণ্ডবিধির দুটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে তাকে পুলিশ ডেকে সাজা পরোয়ানার মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে। দেশে এবং বিদেশে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা রানার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দেয়। ৯ই মার্চ তথ্য কমিশনের সদস্য, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ শহিদুল আলম শেরপুরে যান। তিনি কারাগারে থাকা রানাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠান। সাজার বিরুদ্ধে আপিল ও জামিনের পর গত ১২ই মার্চ রানাকে জামিন দেয় জেলা প্রশাসন। ওই দিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। আগামী ১৬ই এপ্রিল শেরপুর জেলা প্রশাসনে আপিলের ওপর শুনানির দিন ধার্য আছে। রানাকে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য দিতে অসহযোগিতার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গত ২২শে মার্চ তথ্য কমিশন নকলার ইউএনওকে তলব করে। এর ধারাবাহিকতায় তিনি কার্যালয়ে আসেন।
গতকাল সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে কমিশনের কার্যালয়ে আসেন সাদিয়া উম্মুল বানিন। ষষ্ঠতলার অতিথি কক্ষে তিনি ৪০ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। এরপর পৌনে ১২টার দিকে এজলাস কক্ষে তার ডাক পড়ে। তবে, গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা তখন বলেন, শুনানি ও কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণসংযোগ শাখা থেকে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রায় আধ ঘণ্টা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানি হয়। তাকে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার শুনানিতে প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আব্দুল মালেকসহ দুই সদস্য শহীদুল আলম ঝিনুক ও মাসুদা ভাট্টি উপস্থিত ছিলেন। দুপুর পৌনে একটার দিকে তিনি এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাকে প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। দ্রুত লিফটে উঠে পড়েন। এসময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন উপস্থিত সাংবাদিকদের লিফটে উঠতে বাধা দেন। কয়েকজন সাংবাদিক দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে ইউএনওকে প্রশ্ন করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। যা বলার কমিশনকে বলেছি। তিনি (শফিউজ্জামান রানা) অপরাধ করেছেন। ফাইল নিয়ে টানাটানি করেছেন। একজন নারী কর্মকর্তাকে উত্ত্যক্ত করেছেন। এ জন্যই তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার সময় শফিউজ্জামান রানার এসএসসি পড়ুয়া ছেলে উপস্থিত ছিলেন। কোনো ব্যক্তি তার সন্তানের সামনে কোনো নারীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে নিরুত্তর থাকেন সাদিয়া উম্মুল বানিন। একপর্যায়ে দ্রুত তিনি কার্যালয়ের সামনে থাকা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে উঠে পড়েন। শফিউজ্জামান রানা ইউএনও কার্যালয়ে ফাইল টানাটানি করেছেন, উত্ত্যক্ত করেছেন- এমন কোনো প্রমাণ বা কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় আছে কিনা-এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ নিরুত্তর থাকেন তিনি। একপর্যায়ে বলেন, ‘প্রমাণ আছে’। সাংবাদিকেরা তখন বলেন, তাহলে প্রমাণ দেখাচ্ছেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি আর কোনো কথা বলেননি। একপর্যায়ে দ্রুত কার্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। দুপুর ১টার পরে কমিশনের কার্যালয় থেকে বলা হয়, তথ্য সরবরাহে অসহযোগিতার অভিযোগে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তথ্য কমিশন। তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক বলেন, ‘আমরা তাকে ডেকেছিলাম। তার ব্যাখ্যা আমরা শুনেছি। ওখানে অন্য কী বিষয় (ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা) ঘটেছে সে বিষয়ে আমাদের কোনো তদন্ত বা বক্তব্য নেই। আমরা শুধু দেখেছি তিনি (সাদিয়া উম্মুল বানিন) তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য চাওয়া ব্যক্তিকে অসহযোগিতা করেছেন কিনা।’ একটু পর কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লিটন কুমার প্রামাণিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ৭ই মার্চ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রথম কলামে ‘তথ্য চেয়ে আবেদন করে দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক জেলে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি তথ্য কমিশন পর্যালোচনা করে স্বতঃপ্রণোদিত অনুসন্ধান করে। আজকের (গতকাল) শুনানিতে নকলার ইউএনও’র বক্তব্য শুনেছে কমিশন।