ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বারে দায়িত্ব নেয়া নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দ্বন্দ্ব

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার
mzamin

কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই  গত ৬ ও ৭ই মার্চ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। কিন্তু ভোট গণনার দিন রাতে বহিরাগত ও আইনজীবীদের মধ্যে মারধরের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ভোট গণনা। পরে ১০ই মার্চ  ভোট গণনা শেষে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থক সাদা প্যাানেল সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০ পদে জয় লাভ করেন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার পদে জয় লাভ করেন। কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ফোরামের পক্ষ থেকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়। তখন থেকেই বিএনপি প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীদের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে পক্ষে- বিপক্ষে মতপার্থক্য তৈরি হয়। তবে বেশির ভাগ দলীয় কর্মীরা বারে দায়িত্ব নেয়া উচিত বলে মত দেন। তাদের মতে এই অবস্থায় সভাপতির মতো বড় একটি পদে দায়িত্ব নেয়া দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে গতকাল ফোরামের পক্ষ থেকে জয়ী চার আইনজীবী নেতাকে দায়িত্ব না নিতে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় ফোরামের দুই শীর্ষ আইনজীবী নেতা।

বিজ্ঞাপন
এ চিঠির পর সুপ্রিম কোর্ট বারে দায়িত্ব নেয়া- না নেয়া নিয়ে বিএনপি’র চার শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসলো। 

এর আগে ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে ফোরামের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী, মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী এক ফোরাম নেতার বাসায় সভা করেন। তবে ওই সভায় অসুস্থতার কথা বলে অংশ নেয়নি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো প্রার্থী ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ নিবেন না। ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি সমর্থক প্রার্থীরা ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু হঠাৎ ভোট গণনার শেষ মুহূর্তে বিএনপি’র প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ভোট গণনা কার্যক্রমে পর্যবেক্ষণ করতে যোগ দেন। এতে ফোরামের তিন শীর্ষ নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপরে নাখোশ হন। শুরু হয় দ্বন্দ্ব।  

ফোরামের আইনজীবী নেতারা বলেন, ফোরামের এক শীর্ষ নেতার মঙ্গে খোকনের রেশারেশি অনেকদিন ধরে। ওই শীর্ষ নেতা চান না খোকন বারের সভাপতি পদে দায়িত্ব নিক। তিনি দায়িত্ব নিলে ফোরামে তার গ্রহণযোগ্যতা কমতে পারে। এই ভয় থেকেই আসলো এই চিঠি। দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার বিএনপি’র গুলশান কার্যালয়ে দলের শীর্ষ আইনজীবীরা এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে বারে জয়ীদের দায়িত্ব নেয়া না নেয়া প্রসঙ্গে পক্ষে- বিপক্ষে দুই পক্ষই যুক্তি তুলে ধরেন। কেউ কেউ বর্তমান এই অবস্থায় দায়িত্ব নেয়া দলের জন্য মঙ্গলজনক বলে মত দেন। তবে বিপক্ষে মত দেন ফোরামের শীর্ষ তিন আইনজীবী নেতা। এই অবস্থায় গতকাল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয় বারের ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে। চিঠিতে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বিজয়ী অন্য যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- কার্যনির্বাহী সদস্য আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম। 

চিঠিতে বলা হয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৪শে মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি/সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৬ ও ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের পর গত ১০ই মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিঠিতে চার আইনজীবীকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, আপনি/আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। দল আশা করছে, আপনি/আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, পুনঃনির্বাচন হলে আমরা খুশি হবো, আইনজীবীরা খুশি হবেন। পুনঃনির্বাচন হলে আমরা আরও বেশি পদে ম্যান্ডেট পাবো। এই জন্যই সম্ভবত চিঠিটা দেয়া হয়েছে। আর পুনঃনির্বাচনের দাবি যদি না মানা হয় তবে আমরা তো প্রেসিডেন্ট, সদস্য পদে ইলেকটেড হয়েছি। সেটা তো আছেই। এক্ষেত্রে তো পদত্যাগেরও সুযোগ নেই, পুনঃ নির্বাচনেরও সুযোগ নেই। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বারের এই নির্বাচনে ফোরামের এক নেতার ভূমিকা রহস্যজনক। তার সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। সে খুব শক্তিশালী নেতা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার যোগসাজশ ছিল কিনা সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে সাংবাদিকরা সেই নেতার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।  এ ব্যাপারে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। সময়মতো নাম প্রকাশ করবো। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা হলে এবং আমরা যদি ভোট গণনার সময় থাকতাম তাহলে আরও বেশি পদে আমরা বিজয়ী হতাম। কিন্তু ওই নেতার সিদ্ধানে সেদিন আমরা ভোট গণনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা থেকে বিরত ছিলাম। মূলত ওই নেতা আওয়ামী লীগের সবাইকে বিজয়ী করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেন। আমিসহ অন্যরা বিজয়ী হোক তিনি চাননি। সুপ্রিম কোর্ট বারে আমার পরাজয়ের ইতিহাস নেই। আমরা ম্যাজরিটি  বিজয়ী হতাম। শুধুমাত্র ওই নেতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এই অবস্থা হলো।  

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status