শরীর ও মন
হোমিওতে অটিজম চিকিৎসা ও কিছু কথা
ডা. এম এ হক, পিএইচডি
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবারঅনেক অভিভাবক আমাদের নিকট এসে বলেন, ডাক্তার সাহেব, আমার সন্তান কথা বলে না, ওর মধ্যে অস্থিরতা আছে। সারাক্ষণ কিছু একটা করতে চাই। সে আমাদেরকে ঠিকমতো চিনতে পারে না। এ ছাড়া তার শরীরে কোনো রোগ-ব্যাধি নেই। আমার সন্তানকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না যে, তার কোনো সমস্যা আছে। তবে, সে কিন্তু অটিজম শিশু না। অমুক ডাক্তার বলেছেন তার অটিজম আছে। এটা শোনার পরে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। ডাক্তার সাহেব আপনেই বলেন তো আমার সন্তান কি অটিজম? তখনই জানতে ইচ্ছা হয় অটিজম সন্তান আসলে দেখতে কেমন।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকগণ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। তাদের পরিবারে নেই কোনো আনন্দ। তারা ধরেই নিয়েছেন এর কোনো চিকিৎসা নেই। এদেরকে বলা হয় স্পেশাল চাইল্ড। এদের সুস্থতার জন্য অভিভাবকগণ অটিজম স্কুল ও থেরাপি সেন্টারে ছোটাছুটি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাইপার ও ঘুমের সমস্যা হলে কিছু মেডিসিন সংগ্রহ করেন। নিউরোডেভেলপমেন্টের কোনো চিকিৎসাই তাদের দেয়া হয় না। ফলে, দিন শেষে আবার হতাশা! অটিজম শিশুদের জীবন-যাপন স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতেই আজকের আলোচনা।
অটিজম কখন বলা যায়
অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। পিতা-মাতার বংশের জেনেটিক রোগ-ব্যাধি, তাদের খাদ্যাভাস ও গর্ভকালীন মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে যখন নেগেটিভ ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন শিশুর মস্তিষ্কের নিউরোনের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়ে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। ব্রেনের নিউরোনসমূহ সাইন্যাপ্সের মাধ্যমে সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারায় শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। এধরনের শিশুকেই আমরা অটিজমে আক্রান্ত শিশু বলি। ব্রেন ডেভেলপমেন্ট হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোনসমূহ সাইন্যাপ্সের মাধ্যমে সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হবে।
ট্রিটম্যান্ট
নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারে অটিস্টিক শিশুদের নিউরোডেভেলপমেন্ট চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, ধৈর্য, আই-কন্ট্রাক্ট, আচরণ, কথা-বার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হচ্ছে। এ ছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। চিকিৎসা শুরুর স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন অটিজম চিকিৎসায় আশার আলো দেখিয়েছে। চিকিৎসা শুরুর পর শিশুর মানসিক উন্নতি হলে, পূর্বের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। এই পরিবর্তন প্রথম দিকে ধীরে-ধীরে হয় এবং শিশুর চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ করতে দীর্ঘ দিন লেগে যায়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রুগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতএব, অটিজম শিশুদের নিয়ে বিব্রত নয় আমরা চাই তারা আমাদের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। সেদিন আর দূরে নয় যেদিন অটিজম সন্তানকেও স্পেশাল চাইল্ড নয় সমাজের অন্য সাধারণ শিশুদের মতোই গণ্য করা হবে।
লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এম.ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলেপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, (ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিষ্ঠান), বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭০৭-০৭৩১৪১।