শরীর ও মন
দারিদ্র্য মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে
মানবজমিন ডিজিটাল
(৫ মাস আগে) ২৬ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞানীরা দারিদ্রের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে শ্বেত পদার্থের ( white matter )দ্রুত ক্ষয়ের একটি যোগসূত্র আবিষ্কার করেছেন। যদিও এই শ্বেত পদার্থ বয়স বাড়ার সাথে সাথে হ্রাস পেতে থাকে, তা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষদের মস্তিষ্কে এর ক্ষয় দ্রুত গতিতে হয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
৫০ থেকে ৯১ বছর বয়সী ৭৫১ জন ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এই বিশ্লেষণগুলো তৈরি করা হয়েছে। লুসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল এই পরীক্ষা চালিয়েছেন। বয়স, লিঙ্গ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে মাথায় রেখে গবেষকরা দেখেছেন, ধনী পরিবারের তুলনায় যারা দরিদ্র পরিবারে বাস করেন তাদের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যানে শ্বেত পদার্থের বার্ধক্যের লক্ষণ স্পষ্ট। গবেষকরা তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লিখেছেন, এই অধ্যয়নের লক্ষ্য আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলোর ওপর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা-মধ্য বয়স থেকে প্রবীণ হবার সাথে সাথে পরিবারের আয়, পেশাগত অবস্থান এবং জীবন ধারার আর্থ-সামাজিক ট্র্যাজেক্টোরিজ- মস্তিষ্কের মাইক্রোস্ট্রাকচার এবং জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের চারপাশে বার্তা এবং সংকেতগুলো পাঠানোর ক্ষেত্রে শ্বেত পদার্থটি অতি প্রয়োজনীয় এবং এটি মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী আর্থ-সামাজিক অসুবিধা এর সংস্পর্শে আসা মানুষ দীর্ঘকাল ধরে দুর্বল স্বাস্থ্য এবং দ্রুত জ্ঞানীয় পতনের সম্মুখীন হন।
গবেষক দলটি ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে চেয়েছিল কেন এমন হয়? তারা বলছেন, মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন (নিউরাইটের ঘনত্ব) থেকে বেরিয়ে আসা তন্তুগুলির সংখ্যা এবং এই ফাইবারগুলিতে প্রতিরক্ষামূলক আবরণের পরিমাণ (মাইলিনেশন) শ্বেত পদার্থের হ্রাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি অবদান রেখেছে। মস্তিষ্ক এবং আর্থ-সামাজিক স্তরের অন্বেষণের পূর্ববর্তী অধ্যয়নগুলি বেশিরভাগই সামগ্রিক মস্তিষ্কের ওপর বিবেচিত হয়েছিল। এখন যেহেতু সূক্ষ্ম কাঠামোগত ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের পিছনে সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলি আরও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। নতুন গবেষণা দেখিয়েছে যে, কীভাবে অবাধে অণুগুলি মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে চলাচল করে (মানে ডিফিউসিভিটি), যা মাইলিনের পরিমাণ এবং নিউরন শাখাগুলোর ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ আয়ের লোকদের মস্তিষ্কের মধ্যে শ্বেত পদার্থ জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতার উপর তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
দেখা যাচ্ছে যে, ‘অর্থ’ জ্ঞানীয় পতনের বিরুদ্ধে এক ধরণের বাফার হিসাবে কাজ করে। এর আগে কোনো গবেষণায় মস্তিষ্কের মাইক্রোস্ট্রাকচার এবং মানুষের আয়ের স্তরের মধ্যে এরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়নি। বৃহত্তর অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করার সময় বিষয়টিকে নিয়ে আরো তদন্ত করা যেতে পারে। গবেষকদের এই পরীক্ষা সামগ্রিকভাবে প্রমাণ করে দেয় যে, আর্থিকভাবে ভালো থাকার অর্থ একটি স্বাস্থ্যকর জীবন ।গবেষণাটি JNeurosci-তে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র : সায়েন্স এলার্ট