ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বসুন্ধরা

প্রত্যাশিত ভিড় নেই

শুভ্র দেব
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার
mzamin

অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে এখনো জমে ওঠেনি ঈদ বাজার। এখানকার বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ডিজাইনের, বিভিন্ন মানের পোশাক সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন। অথচ ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, নারীদের ড্রেস, শাড়িসহ কোনো দোকানেই নেই ভিড়। মালিক-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। কেউ মোবাইল টিপছেন কেউ গল্প করছেন। অথচ সবক’টি দোকানেই আয়োজনের কমতি নাই। দেশি কালেকশনের পাশাপাশি বিদেশি কাপড়ও আমদানি করে এনেছেন দোকানিরা। তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি করেন এমন দোকানগুলোতে ক্রেতারা আসা-যাওয়া করছেন। 

বিক্রেতারা বলছেন, ১৩ রোজা পার হয়েছে। অতীতে রোজার এই সময়টা ক্রেতা সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু এ বছর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এমনিতে কাপড়ের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া মানুষের কাছে টাকাও নাই তাই সবমিলিয়ে এবারের ঈদ বাজার কেমন যাবে এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আর ক্রেতারা বলছেন, পছন্দের পোশাক বাজারে আছে তবে দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা আশা করছেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ততই বিক্রি বাড়বে। 

বসুন্ধরা মার্কেটের লেভেল-১ এর লুক অ্যান্ড লাইক নামের একটি দোকানের পরিচালক রাহাত হোসেন বলেন, ছুটির দিনগুলোতে বিক্রি কিছুটা ভালো হয়। এ ছাড়া রোজার অন্যান্য দিন ক্রেতা কম। গত বছর এই সময়টাতে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়েছে আমাদের। অথচ এ বছর বলতে গেলে অলস সময় কাটাচ্ছি। ক্রেতারা আসছেন তবে দেখেশুনে চলে যাচ্ছে। কিছু ক্রেতা এসে কয়েকটা কাপড় পছন্দ করছে। হিসাব করার সময় পছন্দের কাপড় রেখেই চলে যাচ্ছে। কারণ তার পকেটে টাকা কম। এ ছাড়া কাপড়ের দামও বেড়েছে অনেক। সবমিলিয়ে এবারের ঈদ বাজার কেমন হবে বলতে পারছি না। শুধু আমাদের দোকানেই না। সব দোকানে একই অবস্থা। নারীদের বিভিন্ন পণ্যের দোকান স্মার্ট অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ারের ম্যানেজার বন্যা বলেন, আমরা নারীদের টুকিটাকি সবকিছু বিক্রি করি। সকাল থেকে অলস সময় কাটাচ্ছি। বিক্রি নাই। 

শিশুদের বিদেশি ড্রেস বিক্রির দোকান শুকরানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চীন, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন বয়সী শিশুদের ড্রেস ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে। দেশ ভেদে কাপড়ের কোয়ালিটি ভেদে দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। ম্যানেজার রবি বলেন, প্রতিদিন ৬০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। আগে যেখানে ২০ থেকে ২৫ হতো। আশা করছি যত সময় যাবে বিক্রি আরও বাড়বে। তবে এ বছর কাপড়ের দাম ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়তি। তাই ক্রেতাদেরও সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া কাপড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট যোগ করা হয়েছে। ওয়েট ট্যাক্স দিতে হয় ৯৮০ টাকা। সবমিলিয়ে বিক্রেতারা যেমন শান্তিতে নাই ঠিক তেমনি ক্রেতারা ভালো নেই। আগে ১ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হতো। এখন সেটি ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে নেমে এসেছে। তিনি বলেন এ বছর ঈদে আলফা কাট, সারারা ও খাগড়া ডিজাইনের কাপড়ের চাহিদা বেশি। 

শিশুদের কাপড় বিক্রেতা জর্ডান ক্লাবের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, বিক্রি কিছুটা ভালো। তবে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। কারণ অন্যান্য বছর রোজার এই সময়টা আমরা দম ফেলার সময় পাই না। আর এ বছর সব সেলসম্যান বলতে গেলে খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। ছেলেদের বিভিন্ন আইটেমের দোকান সুপার নোভায়ও ক্রেতা নাই। বিক্রেতারা বলেন, মাঝেমধ্যে ২/১ জন ক্রেতা আসেন তবে দামাদামি করে চলে যান। কারণ বেশির ভাগ ক্রেতার অভিযোগ এবারের কাপড়ে দাম অনেক বেশি। এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। কাপড়ের দামও যেভাবে বেড়েছে তাতে কেনাকাটা করার সাধ্য অনেকেরই নাই। সুপার নোভার সেলসম্যান বাবুল বলেন, বিক্রি খুবই কম। 

জেন্টল ব্রিজের পরিচালক খোকন বলেন, কেউ যদি এখন এসে ১০ লাখ টাকার কাপড় কিনতে চায় তবে আমরা ৫ মিনিটের ভেতরে কাপড় দিতে পারবো। যেসব কাপড় আমাদের কালেকশনে আছে সেগুলো ক্রেতাদের পছন্দও হবে। কিন্তু কাপড়ের জায়গায় কাপড় পড়ে আছে। ক্রেতা পাচ্ছি না। গত বছরও আমরা ইফতার করার সময় পাইনি। ভালো বিক্রি ছিল। দোকানের দিকে আঙ্গুল দিয়ে তিনি বলেন, এই যে ৮ থেকে ১০ জনকে দেখছেন সবাই আমাদের স্টাফ। কিন্তু ক্রেতা নাই একজনও। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। 

পাঞ্জাবি বিক্রেতা ইসনাসের ম্যানেজার মো. জামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বসুন্ধরায় ব্যবসা করছি। এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আর হয়নি। প্রতিটা দোকানের মালিক-কর্মচারীরা মোবাইল টিপে টিপে সময় কাটাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে গলি দিয়ে ২/১ জন ক্রেতা গেলে অনেকেই গুলিস্তানের মতো ডাকাডাকি শুরু করেন। ডাকাডাকিতে মার্কেট কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু কেউ কারও কথা শুনে না। ক্রেতা নাই তাই সবাই ফুটপাথের দোকানদারের মতো আচরণ করে। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে ভারতীয় অনেক পাঞ্জাবির কালেকশন আনা হয়েছে। দামও খুব একটা বেশি না। 

শাড়ি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধ বড় বড় দোকানগুলোতে ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন কালেকশন আনা হয়েছে। মালিক-কর্মচারীরা প্রস্তুত। কিন্তু তারা ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। বসুন্ধরার লেভেল-৪ এর প্রত্যেকটি নামিদামি অভিজাত শাড়ি বিক্রেতারা একবাক্যে বলেন, বিক্রি মোটেও ভালো নয়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে খারাপ। শাড়ি সেন্টারের মালিক আনোয়ার বলেন, কাপড়ের দাম বেশি, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সবমিলিয়ে এবার ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ ভালো নেই। এই সময় আমরা ক্রেতা ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলার সময় পাই না। আর এখন মালিক-কর্মচারী মিলে গল্প করছি। প্রবেশ পথ দিয়ে তাকিয়ে থাকি কখন ক্রেতা এসে ঢুকবে। 

ঢাকা জামদানির মালিক শাহরিয়ার হাসান বলেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেশি মানুষ খাওয়া-দাওয়া করবে না কাপড় কিনবে? ১৩ রোজার দিন আমরা বিকাল ৪টার সময় প্রথম বিক্রি করেছি। ভাবতেও অবাক লাগে। এতটা খারাপ বাজার যাবে চিন্তাও করিনি। এই দুটি শাড়ির দোকান ছাড়া, প্রেমময়, শাড়ি বাজার, জামদানি কর্নার, নীল আচল, কালঞ্জয়ী, জ্যোতি, জামদানি হাউজ, গুলশান শাড়ি, জামদানি মেলা, পুষ্প শাড়ি, তাঁত ঘর, আধুনিকা শাড়ি, মনেরেখ শাড়ি, নগর শাড়ির দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ক্রেতা নাই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে কেউ এসে দামাদামি করে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কিনছেন। শাড়ির দোকান ছাড়া, বোরকার দোকানগুলোতে গিয়ে ক্রেতাশূন্য দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে ২/১টি বোরকা বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরার আরশি বোরকা, ইরানি বোরকা, আল মদিনা বোরকা, অ্যারাবিয়ান বোরকা হাউজের বিক্রেতারা বলেন, বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের মতো। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি বিক্রি বা ক্রেতা কিছুই হচ্ছে না।   

ক্যাটস আই ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, ক্রেতারা আসতেছে। কমবেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে আশানুরূপ হচ্ছে না। অন্য বছর আরও ভালো বিক্রি হতো। সেই তুলনায় এখনো জমে ওঠেনি। আশা করছি ১৫ রোজার পর ভালো হবে। রিচম্যানের ম্যানেজার মেহেদি বলেন, ঈদ কেনাবেচা এখনো শুরু হয়নি। এখন যেসব ক্রেতা আসতেছেন স্বাভাবিক সময়ের মতো আসতেছেন। আমাদের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি। ঈদ ঘনিয়ে আসলে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে বিক্রিও ভালো হবে। প্লাস পয়েন্টের ম্যানেজার পারভেজ বলেন, যারা চাকরি করেন তারা এখনো বেতন পাননি। পকেটে টাকা নাই তাই মার্কেটে আসে না। আমাদের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের মতোই হচ্ছে। আশা করছি ২০ রোজার পরে মানুষের কাছে টাকা চলে আসবে তখন মার্কেটে আসবে কাপড় কিনবে। 

পাঠকের মতামত

বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার ঢেউ লেগেছে । এই শব্দটির অর্থ বাঙালি বুঝতে পারে কি না আমার সন্দেহ । কারণ বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ । মন্দার ধাক্কা কম লাগে । তাই ব্যবসায়ী পশরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছে । ঈদ বাংলাদেশেই । প্রবাসে নামাজ পড়া ছাড়া ঈদ বলতে কিছু নাই ।

Kazi
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ২:০৯ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status