ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

ফলোআপ

অভিজাত চোর জুবাইদা করতেন ইয়াবার ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার

বাবা ছিলেন যুগ্ম সচিব। ২০২২ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকাকালীন অবসর নিয়েছেন। বোন গ্রামীণফোনের মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিসের প্রধান ছিলেন। উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি ছেড়েছেন। পরিবারের আদরের সন্তান ছিলেন জুবাইদা সুলতানা। অভিজাত ঘরে জন্ম। চলাফেরাও ছিল অভিজাত পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে। লেখাপড়া করেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও হাবিবুল্লাহ কলেজ থেকে। স্কুল জীবন থেকেই তার চুরির স্বভাব ছিল।

বিজ্ঞাপন
বন্ধুদের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করতেন। আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় গেলেও চুরি করতেন। এ নিয়ে অভিভাবকদের অনেক বকাঝকা খেয়েছেন। শাস্তিও পেয়েছেন। তবুও শুধরাননি বরং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুরি বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে যান। চুরির এই স্বভাব বড় হয়েও যায়নি জোবাইদার। তাইতো ৪৪ বছর বয়সে এসে ঢাকার অভিজাত হোটেল, ক্লাব, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চুরি করতেন। দৃশ্যমান অন্যকোনো পেশা না থাকলেও এক দশকের বেশি সময় ধরে চুরির টাকা দিয়ে তার অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতেন। বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে পোশাক, মেকআপ, বিলাসবহুল চলাফেরা, মামলার খরচ সবই করতেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এক নারী চিকিৎসকের ব্যাগ চুরি করে শেষ পর্যন্ত তাকে ডিবি পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মহিলাদের ব্যবহৃত ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি ক্রেডিট কার্ড, অলঙ্কার, সুপার শপের কার্ড পাওয়া গছে। 

এই নারীকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) কর্মকর্তা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, শুটিং ক্লাব, রাওয়া ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবে অবাধে যাতায়াত ছিল জুবাইদার। এ ছাড়া সোনারগাঁও, রেডিসন, ওয়েস্টিন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, লা-মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন পাঁচ-তারকা হোটেল ও অভিজাত রেস্টুরেন্টে আসা- যাওয়া করতেন। এসব ক্লাব ও হোটেলে প্রবেশ করে মোবাইল ফোন, ব্যাগ, ল্যাপটপ, টাকা, অলংকার চুরি করতেন। পরে এসব চুরির সামগ্রী তার কথিত স্বামীর মাধ্যমে বিক্রি করে দিতেন। যা আয় হতো সেটা দিয়েই সে অভিজাত জীবন যাপন করতেন। গত ১২ বছর ধরে এভাবে একটানা চুরি করেছে জুবাইদা। এসময়ে অন্তত ৮০০ দামি মোবাইল চুরি করে বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া অসংখ্য দামি ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ, অন্তত ৫০ ভরি স্বর্ণসহ আরও মূল্যবান সামগ্রী চুরি করেছেন। বিশেষ করে অভিজাত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী, চাকরিজীবীর স্ত্রী, সন্তান, নারী চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত করার সুবাদে সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে আয়োজক, অতিথি সবাই তাকে চিনতেন। নিজেকে বড় চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এতে করে সবাই তাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতেন। 

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, জুবাইদার দুজন স্বামী। ২০১০ সালে তার প্রথম স্বামী মারা যান। ২০১৭ সালে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করছেন। যদিও এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ওই ব্যক্তির আরও কয়েকজন স্ত্রী আছেন। জুবাইদাও সেই স্বামীর সঙ্গে সংসার করে না বলে জানিয়েছেন। তবে স্বামী তাকে চলাফেরা করার জন্য টাকা দেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা মূলত স্বামী হিসেবে পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির মাধ্যমে জুবাইদা তার চুরি করা বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যখন কোনো কিছু বিক্রির প্রয়োজন হয় তখন তার স্বামী একজন ব্যক্তিকে পাঠান। তার কাছে দিলে বিক্রি করে টাকা দেন। 

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ মানবজমিনকে বলেন, জুবাইদা চিকিৎসকদের কোনো একটি লিংকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতেন। তার মূল উদ্দেশ্য থাকতো চুরি করা। এজন্য সবসময় খোঁজখবর রাখতেন কখন কোথায় কি প্রোগ্রাম হচ্ছে। এক্ষেত্রে তার কথিত স্বামীও সাহায্য করতেন। অভিজাত হোটেল-ক্লাবে যখন প্রোগ্রামের খবর পেতেন তখন সেটি তাকে জানাতেন। জুবাইদা আগেভাগে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করে রাখতেন। যাতে তার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে সমস্যা না হয়।  সারাদিন আলোচনা, খাওয়া-দাওয়া করে একসময় তার উদ্দেশ্য হাসিল হলে সটকে পড়তেন। সাইফ বলেন, জুবায়দা নিজেকে এতটা পরিপাটি ও গুছিয়ে চলাফেরা করতেন দেখে বা তার সঙ্গে কথা বলে বুঝার উপায় নাই সে একজন চোর।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে জুবায়দা ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে দাবি করছে তার নামে ৮টা মামলা রয়েছে। তবে বাস্তবে ৬টি মামলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ১২ই মার্চ রমনা থানার একটি মামলার তদন্তে নেমে ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে। ৩রা মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিষয়ক এক  সেমিনারে অংশগ্রহণ করে জুবাইদা চুরি করে ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গহনা। দামি সব জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও ডা. ফারহানার মোবাইল নম্বরটি স্থানান্তর করে নেয় নিজের মোবাইলে। সেই নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করেন। রোগী ও অভিভাবকরা ডা. ফারহানা ভেবে সেই হোয়াটঅ্যাপস নম্বরে কল,  মেসেজ দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতেন। আর জুবাইদা ডা. ফারহানা সেজে ওভাবেই কথাবার্তা বলতেন রোগীদের টাকার বিনিময়ে দিতেন প্রেসক্রিপশন। অনেকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিতেন। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জুবায়দা গ্রেপ্তার হয়েছে এমন খবর চাউর হওয়ার পরে অসংখ্য ভুক্তভোগী আমাদের সঙ্গে তাদের হারানো সামগ্রী ফিরে পেতে যোগাযোগ করছেন। এর বাইরেও অসংখ্য ভুক্তভোগী আছেন। নিজে বড় চাকরি করেন আবার বড় চাকরিজীবীর স্ত্রী, সন্তানদের দামি সামগ্রী চুরি করতেন। রাওয়া ক্লাব থেকে এক নারীর ব্যাগ চুরি করেছে ওই ব্যাগে ১১ ভরি স্বর্ণসহ দামি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ছিল। ডিবি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান আজাদ এসব চুরি ঠেকাতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন হোটেল, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টগুলোতে শুধু পোশাকের চাকচিক্য দেখে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। যেকোনো জায়গাতেই নিজের হ্যান্ডব্যাগ, মোবাইল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী সাবধানে রাখতে হবে। আরও বেশি সংখ্যক জায়গাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও আমন্ত্রিত অতিথির বাইরে অপরিচিত সন্দেহজনক লোকজনের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। 

পাঠকের মতামত

ধন্যবাদ ডিবি কে।ঠিক এমনি ভাবে যদি স্বপ্রণোদিত ভাবে যতসব ছোট থেকে বড়ো চোরদের ধরার কাজ করতেন; ওহে, রিপোর্ট পড়ে মনে হলো সেই ৭৯/৮০ ধারার চোর নয়। সে অনেক বড়ো খেলোয়াড়। তাই অনুগ্রহ করে ঐ জুবাইদাকে ছোট মামলা দিয়ে বেচারী ও তার সাথে সংশ্লিষ্টদের হেয় না করে একটু খতিয়ে দেখে তার কর্মনোযায়ী একটু বড়ো সড় মামলা দেওয়া যায় কি না।ধন্যবাদ।

হোসেন মাহবুব কামাল
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

এটা একটা সাইকো ডিজিস।তার চিকিৎসা প্রয়োজন।

রাশিদ
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ৪:১৮ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status