প্রথম পাতা
পাল্টা অবস্থানের ঘোষণা যুবলীগের
প্রতিরোধের ডাক
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ জুলাই ২০২৩, শনিবার
আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ - ছবি: শাহীন কাওসার
ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলার পথই বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে স্থান দেবে। তবে সংঘাত সহিংসতা করলে ছেড়ে দেবে না। প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দেবে। বিএনপি’র কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তা বন্ধ করবেন, আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেবো। চোখ রাঙাবেন না, দেশি-বিদেশি যারাই চোখ রাঙাবেন তাদের বলে দিচ্ছি, আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না, কারও চোখ রাঙানোর পরোয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা করেন না। আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, কোথায় দাঁড়াবেন, আমরা ছেড়ে দেবো। আমরা সংঘাত চাই না, আমরা শান্তির জন্য এই সমাবেশ করছি। যত লাফালাফি তাফালিং করেন ফখরুল সাহেব, এই তারেক জিয়ার লাফালাফিতে কাজ হবে না। যতই তাফালিং করুন ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বহুদূরে। রাজনীতির মাঠে আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবেন না। আন্দোলনে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আগুন নিয়ে আসবেন, আগুনে হাত পুড়িয়ে দেবো, ভাঙচুর করতে আসলে হাত ভেঙে দেবো।
আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
এদিকে বিএনপি’র নতুন কর্মসূচি ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরমধ্যে রয়েছে- আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, গাবতলী ও আমিনবাজারে যুবলীগের শান্তি সমাবেশ। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজধানীর সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল: বিরোধী দলগুলোর সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গতকালের শান্তি সমাবেশে ঢল নামে সাধারণ নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের সহযোগী তিনটি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সমাবেশস্থলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর বিভিন্ন সাংগঠনিক শাখাগুলো সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দলে দলে, সেøাগানে সেøাগানে উপস্থিত হয়ে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করে সমাবেশকে। সমাবেশ স্থলে আসা নেতাকর্মীদের হাতে হাতে দেখা যায় ‘দেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে না বলুন’ ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ সহ নানা প্ল্যাকার্ড। এ সময় সমাবেশে আগত মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াতবিরোধী নানা সেøাগান দিতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, বার বার স্থান, সময় পরিবর্তন ও নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিএনপি’র পাশাপাশি আওয়ামী লীগও সমাবেশ করে গতকাল। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গতকাল দুপুর ২টা থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। তাদের এই সমাবেশের বিপরীতে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন- আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের তারেক রহমানের সমালোচনা করে বলেন, তারেক জিয়া লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছে, এখানে ফখরুল-আমীর খসরুরা লাফালাফি করছে। তাদের কথায় নাকি জাতিসংঘ নির্বাচন পরিচালনা করবে। গণভবন তোমার বাবার? জনগণ শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে গণভবনে বসিয়েছে, জনগণ যতদিন চাইবে ততদিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। তারেক রহমান কিছুই করতে পারবে না। ‘লন্ডনে বসে তারেক রহমান পুলিশকে ধমক দিচ্ছে, প্রশাসনকে ধমক দিচ্ছে, বলছে ফখরুলদের টাকার অভাব হবে না। তোমার বাবা দম্ভ করে বলেছিল, মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় গেল তোমার বাবা? তুমি তো এবারো তাই বলছো।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়ে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে, কংগ্রেসের কিছু লোকজন দিয়ে জাতিসংঘের অ্যাম্বাসেডরের কাছে চিঠি পাঠায়- জাতিসংঘের আন্ডারে নির্বাচন করতে হবে। ‘রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছে, সেই তারেক রহমান এখন নেতা। এই তারেককে ধরবে বাংলাদেশের মানুষ। যতই লন্ডনে থেকে আস্ফালন করছে ততই মানুষ থেকে দূরে যাচ্ছে তারেক রহমান ‘কারা কারা ঘন ঘন লন্ডন যান, টাকা তুলে দিচ্ছেন তারেকের হাতে, সেই খবরও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নমিনেশনের জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছে, পরে সুবিধা নেয়ার জন্য টাকা দিচ্ছে এই বুঝি ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে। যারা আমার মাতৃভূমির টাকা লুট করছে, গণতন্ত্রকে গিলে খাচ্ছে, আমার বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছে, তাদের হাতে আমার জন্মভূমির ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি না। সরকারের পদত্যাগের ‘একদফা’ দাবিতে বিএনপি’র আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যতই লাফালাফি, তাফালিং করেন, কাজ হবে না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন অনেক দূরে চলে গেছে। ওটা পাবেন না। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে পারবেন না। আন্দোলনের রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আন্দোলনে পারবেন না। নির্বাচনে তো আপনারা আসবেনই না। ওবায়দুল কাদের তার পরিচিত ‘খেলা হবে’ বক্তব্য টেনে বলেন, ‘খেলা হবে... তারেকের বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভুয়া তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ও ভুয়া একদফার বিরুদ্ধেও খেলা হবে। সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
শান্তি সমাবেশ থেকে ৫ দফা ঘোষণা: শান্তি সমাবেশ থেকে ৫ দফা ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এ যৌথ ঘোষণা দেন। পাঁচ দফাগুলো হলো- ১. ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজ সংগঠিত আগুন সন্ত্রাস রুখবো। ২. অপশক্তিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে রুখে দাঁড়াবো। ৩. সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার থাকবো। ৪. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখবো। ৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বদা সোচ্চার থাকবো।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা যা বললেন:
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, যারা স্বাধীনতার অর্জন লুণ্ঠন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আজ আপনারা এখানে এসেছেন। বিএনপি সন্ত্রাস নৈরাজ্য আর আগুন সন্ত্রাস করে শত শত মানুষ হত্যা করেছিল, তারা আজ মাঠে নেমেছে। তাদের দাবি হলো- শেখ হাসিনার নাকি পদত্যাগ করতে হবে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ শেখ হাসিনাকে শাসনভার দিয়েছে। পলাতক তারেকের ইশারায় তারা মামাবাড়ির আবদার নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, বিএনপি কখনো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। নেতৃত্বশূন্য দল, তাই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। লাভ নেই। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ পুনরায় শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কটের নামে রাস্তা-গাছপালা, রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল। বিএনপি এখন বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নানা খেলা শুরু করেছে। দলটি এখন গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। যতই চক্রান্ত হোক, জবাব দেয়া হবে। কোনো চক্রান্ত টিকবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি এখন বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খেলছে। তিনি আরও বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বিএনপি-জামায়াতের যখনই মিটিং হয়, যখনই সমাবেশ করে, সমাবেশের দিন বা তার আগের দিন বিশেষ একটা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের অফিসে বৈঠক করে। কেন? এর কারণ একটাই, বিএনপি এখন বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খেলছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশিদের বলবো, কাদের নিয়ে আপনারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, যারা ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত খুন করেছে? আপনারা কাদের গণতন্ত্রের কথা বলেন, যে দলের জন্মই হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে? এগুলো দেশের মানুষ বোঝে। যাদের নিয়ে আপনি (সেই রাষ্ট্রদূত) এই খেলা শুরু করেছেন, এই খেলা দেশের জনগণ বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, বিএনপি এখন গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। এখানে লাখো শান্তির সৈনিক সমবেত হয়েছে। আমাদের কর্মীরা শান্তি রক্ষা করতে এসেছে। আমরা শান্তি রক্ষা করবো।
সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আজকের সমাবেশ তারুণ্যের সমাবেশ। বিএনপির এখন কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শহীদ হবো, তারপরও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করতে দেবো না।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, সন্ত্রাসীদের বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। আজকে তো মাত্র শুরু হলো। আজকে আমরা লড়াই শুরু করেছি, এই লড়াই শেষ করবো। আবারো যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের চূর্ণ করে দেয়া হবে।