প্রথম পাতা
পুঁজিবাজার
আস্থাহীনতায় ধুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৫ মে ২০২৫, সোমবারছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে সরকার বদলের পর নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কেউ ভালো নেই। কারণ শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন। সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার। উত্থানের চেয়ে পতনটাই বেশি ঘটছে। এতে করে মূলধন হারিয়ে ধুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে ঈদের ছুটি কাটিয়ে শুরু হওয়া লেনদেনে লাগাতার পতনে ঢাকার বাজারে প্রধান সূচক কমেছে ৩০২ পয়েন্ট এবং বাজার পুঁজি হারিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারের পরিবর্তন দেখা যায়নি। যে কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এ ছাড়া হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এ ছাড়া বাজারে তারল্যপ্রবাহে ভাটা, অব্যাহতভাবে কমছে মূল্যসূচক এবং নতুন কোনো কোম্পানি আসছে না। পাশাপাশি বিএসইসির শীর্ষ নেতৃত্ব বনাম কর্মকর্তাদের অন্তঃকলহে সংস্থাটিতে দেখা দেয় স্থবিরতা। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক প্রবণতা নিয়ে সক্রিয় হলে বাজার ঘুরতে বেশি সময় লাগবে না।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওই সময় লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল। আট মাস পর বাজারের লেনদেন কমে নেমেছে ৪০০ কোটির ঘরে, আর সূচকও ১ হাজার পয়েন্ট কমে আবার ৫ হাজারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজারের সংশ্লিষ্টরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিসংখ্যান বলছে, গত এক মাসে ১১ হাজার ৪২৯ জন বিনিয়োগকারী নিজেদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়েছেন। বাজারে জিরো ব্যালেন্সের বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চালু থাকা বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এক মাসে ১০ হাজারের ওপরে কমেছে।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, পুঁজিবাজারে দৃশ্যমান সংস্কার তুলনামূলক অনেক পিছিয়ে। বিএসইসির অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাজারমুখী নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগ যেমন আসছে না তেমনি পুরোনো বিনিয়োগকারীরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আর বিএসইসিও যেন অনেকটা অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে পতন হতে থাকলে দেশের শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। প্রতিদিনই আশাভঙ্গ হচ্ছে তাদের। বাজারের প্রতি তাদের আস্থা নেই।
বিনিয়োগকারী তারেকুল ইসলাম বলেন, আগে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হতো, ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে না।
বিনিয়োগকারীরা মন্দ শেয়ারে বিনিয়োগ করে, তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত কয়েক মাসে যেসব শেয়ারের দাম কমেছে তার বেশির ভাগই ভালো কোম্পানি।
আরেক বিনিয়োগকারী মোহাম্মাদ আলী বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মার্জিন ঋণের কারণে। এই ঋণ নিয়ে যারা শেয়ার কিনেছেন, ফোর্স সেলের কারণে তাদের ভালো শেয়ারও বিক্রি হয়ে গেছে। এতে বাজারে প্রতিটি শেয়ারের ওপর খারাপ প্রভাব পড়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। এসব কোম্পানি বাজারে আনতে পারলে বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
কমিশনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর শেয়ারবাজারে বড় কোনো আইপিও আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, বাজার এখন অনেকটাই দিকনির্দেশনাহীন। বর্তমান বিএসইসি বাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেগুলোর সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।