প্রথম পাতা
রোজার আগে বাড়ছে গ্যাস বিদ্যুতের দাম
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবার
রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এই হিসাবে বিদ্যুতের দাম গড়ে ইউনিট প্রতি ৫২ পয়সা করে বাড়বে। শতকরা হিসাবে তা ছয় শতাংশের মতো। বিদ্যুতের নতুন দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে জ্বালানি তেলেও মূল্য সমন্বয়ের কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের যে দাম তাতে দেশের বাজারে দাম আরও কমার কথা বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে তেলের দাম আরও বেশি হওয়ার কথা।
এদিকে বাসাবাড়ির গ্রাহক ও শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের দাম এখন বাড়বে না বলে সরকার জানিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি তুলে দিতে চায় সরকার। এ কারণে পর্যায়ক্রমে আগামী তিন বছর ধরে মূল্য সমন্বয় করা হবে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম আরও হু হু করে বাড়বে। মানুষ আরও চাপে পড়বে। ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাবে ভোক্তারা। ফলে ভোক্তারা পণ্যসেবা কমিয়ে দেবে। সরকারও বিপদে পড়বে। কারণ ভ্যাট ও ট্যাক্স কমে যাবে। সরকার রাজস্ব হারাবে। বাজেটে ঘাটতি দেখা দিবে। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা কমে যাবে। সরকার এমনিতেই ডলার সংকটে রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে মানুষ চাপে পড়বে। সামনে রমজান। এমনিতেই মানুষ নিত্যপণ্যের দামে যথেষ্ট চাপে রয়েছে। সরকার নিজেই বলেছিল মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষ চাপে আছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এই খারাপ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। বরং এটা জুনের পরে করা যেতো বলে তিনি মনে করেন। ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আগে তো বিইআরসি গণশুনানি করে মোটামুটি একটা দাম নির্ধারণ করে দিতো। এখন তো তাও নেই। সরকার নিজেই দাম ঠিক করে দিচ্ছে। আর এর চাপ মানুষের ওপর পড়ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো শীতেও চালিয়েছে। অথচ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগ কম।
নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি খুচরায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার, যা মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। সে সময় খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। ওই দর অনুযায়ী খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড় হয় ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা ফেব্রুয়ারিতে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা ছিল। আর জানুয়ারিতে ছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়লো: বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে মূল্যবৃদ্ধির এই ঘোষণা আসে, যা চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে। সরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আগে গ্যাসের ইউনিট মূল্য ছিল ১৪ টাকা। দাম বাড়ায় তার সঙ্গে যোগ হবে ৭৫ পয়সা। আগে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, স্মল পাওয়ার প্লান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ছিল ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা; এখন সেখানেও যোগ হবে ৭৫ পয়সা অর্থাৎ ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে সার কারখানার জন্য আগের মতোই প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা, শিল্প সংযোগের জন্য প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা, চা বাগানের জন্য ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, হোটেল রেস্তরাঁর জন্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য ৩৫ টাকা এবং গৃহস্থালির জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।
৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম: বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের নতুন দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের দামও বাড়ছে। তবে বাসাবাড়ির গ্রাহক ও শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের দাম এখন বাড়বে না। শুধু যে গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সেই গ্যাসের দাম বাড়ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দেশে জ্বালানির ওপরই বিদ্যুতের দাম ওঠানামা করে। কাজেই ওটার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হবে, এ ছাড়া উপায় নেই। আমরা এখন যে কাজটা করছি খুবই অল্প পরিমাণ নিচের লেভেলে ৩৪ পয়সা। লাইফ লাইন গ্রাহক আছেন এক কোটি ৪০ লাখ, তারা চার টাকা করে বিল (ইউনিটপ্রতি) দেন, ওপরে যারা আছেন, ৭ টাকা করে তাদের চার্জ হয়। কিন্তু গড়ে আমাদের উৎপাদন খরচ ১২ টাকা। সরকারের একটা বড় অংশ এখানে ভর্তুকি হিসেবে দিতে হয় জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে ভর্তুকি আরও বেশি বেড়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো আগামী তিন বছর আমরা এটাকে সমন্বয় করবো। যাতে সহনীয় পর্যায়ে থেকে সমন্বয়টা হয়, সেটার একটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নিচের লেভেলে হয়তো ৩৪ পয়সা, ওপর লেভেলে হয়তো ৭০ পয়সা, এভাবে আমরা মূল্যটা সমন্বয় করবো।
মার্চ থেকে নতুন বিদ্যুতের দাম কার্যকর হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে মূল্য সমন্বয়ে হয়তো আমরা অল্প, ধীরে ধীরে যাবো। নসরুল হামিদ বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে তেলের অ্যাডজাস্টমেন্ট শুরু হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে। আমরা ডায়নামিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি। ডায়নামিক প্রাইসিংয়েও একই অবস্থা, যদি বিশ্ববাজারে ক্রুডের দাম বাড়ে সেটার সঙ্গে সমন্বয় হবে। যদি বিশ্ববাজারে ক্রুডের দাম কমে সেটার সঙ্গে সমন্বয় হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে বলা যায় যে, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মূল্য সমন্বয়ে যাচ্ছি। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ডায়নামিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির গেজেট গতকালই হয়েছে। বিদ্যুতেরটা দু-একদিনের মধ্যে এসে যাবে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানান নসরুল হামিদ। গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয় তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য সমন্বয় গ্রাহক পর্যায়ে হচ্ছে না, বিদ্যুতের হচ্ছে। গ্যাসের আবাসিক পর্যায়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দাম বাড়ছে না। শিল্পেও গ্যাসের দাম বাড়ছে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ডলারে দামের কারণে যে বাড়তি অংশ ভর্তুকিতে দিতে হচ্ছে, সেই জায়গাটায় আমাদের মূল্য সমন্বয় করতে হচ্ছে। এ বছর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি আসবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি আসবে। এগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা সমন্বয়ে যাবো। এরইমধ্যে আমরা কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে এসেছি। ডিজেল থেকে বেরিয়ে এসেছি।
পাঠকের মতামত
We are wanton in the name of a free nation!
আমাদের গ্যাস আমরা বেশি দামে কিনি, অথচ ভারতের মানুষ কম দামে কিনে ।
রমজানে জনগণকে তোহফা প্রদানের জন্য সরকারকে মুবারকবাদ জানাই।
দেশের মেরুদন্ড তো ভেঙ্গেই গেছে। নতুন কারিকুলামের নামে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস করে জাতিকে মেরুদন্ডহীন করতে সরকার সফল। এখন জাতিকে উচ্চবিত্ত বানাতে যা প্রয়োজন তা হল নিন্ম ও মধ্যবিত্তকে মেরে ফেলা। আর তার জন্য দরকার নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা-সেই পথেই হাটঁছে। বাপ দাদারা কি জীবন দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল যা মুষ্টিমেয় কিছু অদক্ষ, দেশপ্রেমহীন, লোভী, অসাদু মানুষরুপি হায়নার কাছে পরাধীন হয়ে থাকবে। আল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করুন। আল্লাহ তাদেরকে সুন্দর বুঝ দান করুন।
রোজায় সবাই দাম বাড়ায়, সেক্ষেত্রে সরকার বসে থাকবে কেন? সরকারেও তো খরচ-খরচা আছে! সরকার তো আর দান-সদকার বাক্স নিয়ে বসে থাকলে চলবে না! যারা সরকার টিকিয়ে রাখে তাদের স্বার্থে জনগণের উচিত এটা মেনে নেয়া!
উন্নত দেশে কম দামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা দেশ ও জাতির জন্য লজ্জা জনক। তাই আমাদের জন দরদি প্রধানমন্ত্রি দেশ ও দেশের মানুষকে এই লজ্জার হাত থেকে বাচাতে এই মহৎ উদ্দ্যোগ নিয়েছেন।
সকল জিনিসের দাম বৃদ্ধি রোজার আগেই কেন ?
আমাদের অলসতার পরিণতি আমাদেরকে ভোগ করতে হবে।
আশা করি, বর্তমান জন দরদী সরকার প্রতি মাসে ১ বার করে গ্যাস পানি বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।
আমাদের অলসতার পরিণতি আমাদেরকে ভোগ করতে হবে।
দেশের উন্নয়ন চাইলে দাম না বাড়িয়ে আর কোন উপায় নেই। সরকার আর কত দিন নিজের পকেট থেকে চালাবে, সবচাইতে ভাল হয় যদি একবারে ২০০% বাড়িয়ে দিত। পাবলিক ৬% বাড়ালেও লাফালাফি করবে আর ২০০% বাড়ালেও করবে। অল্প শোকে কাতর হবার থেকে অধিক শোকে পাথর হওয়া ভাল। জয় বাংলা।
আরব আমিরাতের সরকার সেই দেশের জনগণের জন্য ১০ হাজারর ও বেশি পণ্যের দাম কমিয়েছে রমজানের জন্য। আর আমাদের সরকার গাস বিদ্যুৎ এর দাম বাড়িয়েছে। সাবাস সরকার বাহাদুর।
রোজার পর নাহয় দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। বিদ্যুৎ গ্যাস বলে কথা।