ঢাকা, ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বিদায় পোপ ফ্রান্সিস

মানবজমিন ডেস্ক
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

মারা গেছেন বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে মারা যান তিনি। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ষোড়শ বেনেডিক্টের পর ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। ফ্রান্সিসের মৃত্যুর বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভ্যাটিকান সিটি। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ২১শে এপ্রিল সোমবার দিনের প্রথম প্রহরে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন  পোপ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। 

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। শ্বাস-প্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে  পোপকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। দিন কয়েক আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন পোপ। ভ্যাটিকানের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ‘দি হোলি সি’-এর তথ্যমতে, পোপ ফ্রান্সিসের আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ই ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। পিতা মারিও আর রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী পিতা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক। কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ধর্মের পথে পা বাড়ান জর্জ মারিও। পরবর্তী সময়ে তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সালে ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদ ছেড়ে দিলে পোপ নির্বাচিত হন জর্জ মারিও। নতুন নাম নেন ফ্রান্সিস। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।

যেভাবে হবে শেষকৃত্য: আগে পোপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান একটি জটিল বিষয় ছিল। তবে সম্প্রতি পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেন পোপ ফ্রান্সিস। আগের পোপদের সাইপ্রেস, সিসা এবং ওক দিয়ে তৈরি তিনটি নেস্টেড কফিনে সমাহিত করা হতো। তবে পোপ ফ্রান্সিস দস্তা দিয়ে ঢাকা একটি সাধারণ কাঠের তৈরি কফিনকেই বেছে নিয়েছেন। এ ছাড়া সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় জনসাধারণের জন্য পোপের মৃতদেহকে উঁচু ক্যাটাফাল্কে রাখার ঐতিহ্যকেও বাতিল করেছেন তিনি। এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তে মৃতদেহ কফিনের ভেতরে থাকা অবস্থায় শোকাহতদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেয়া হবে। পোপ ফ্রান্সিসই হবেন এই শতকের প্রথম ধর্মগুরু যাকে ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত করা হবে। রোমের চারটি প্রধান পোপের ব্যাসিলিকার মধ্যে অন্যতম সেন্ট মেরি মেজরের ব্যাসিলিকায় সমাহিত করা হবে। 

বিশ্ব নেতাদের শোক: পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে পুরো বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একে একে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। এ বিষয়ে সর্ব প্রথম পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি বলেন, পোপ একজন নম্র মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া তিনি দুর্বল মানুষদের পাশে ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন ম্যাক্রন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। পোপের নেতৃত্বের ওপর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বৃটেনের নেতারা। দেশটির রাজনৈতিক দলের নেতারা পোপের সাহসিকতা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।  পোপের নম্রতা, সাহস ও দৃঢ়প্রত্যয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন রক্ষণশীল দলের নেতা কেমি ব্যাডনোচ। পোপ ফ্রান্সিসকে করুণা ও সাহসের নেতা হিসেবে অভিহিত করেন লিবারেল ডেমোক্রেট দলের নেতা স্যার ইডি  ডেভি। বৃটেনের সংস্কারপন্থি নেতা নাইজেল ফারাজ বলেন, ক্যাথলিক চার্চের সকলের প্রতি তার সহানুভূতি আছে। পোপের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ওয়েলশের ফার্স্ট মিনিস্টার এলুনড মরগান। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি বলেন, পোপ- আশা, আশ্বাস এনেছিলেন। তবে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ও রাজা তৃতীয় চার্লস। এদিকে পোপের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। বলেন, আমি মাত্রই তার মৃত্যুর খবর পেলাম। পোপকে ভালোবাসেন এমন লাখ লাখ খ্রিষ্টানের প্রতি সংহতি জানান ভ্যান্স। শুক্রবার রোমে যান  জেডি ভ্যান্স। শনিবার ভ্যাটিকানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পোপের সঙ্গে একান্তে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎও করেন তিনি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরশুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, নিজের নম্রতা ও ভালোবাসা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন পোপ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবরে তিনি মর্মাহত।  পোপ ফ্রান্সিসকে একজন ভালো ও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টাস্ক। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, পোপ-শান্তি, ভালোবাসা ও সহানুভূতির বাহক ছিলেন। দুর্বলদের প্রতি পোপের প্রতিশ্রুতির জন্য তার প্রশংসা করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। এ ছাড়া এক্সে এক পোস্টে পোপের মৃত্যুতে শোক জানান তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, এ খবরে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তার বন্ধুত্ব উপভোগ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তিনি আরও বলেন, পোপ পৃথিবীবাসীকে ধ্বংসের পথ পরিবর্তন করে নতুন পৃথিবী গড়ার পথ অনুসরণের আহ্বান জানান। তার দেয়া শিক্ষা পৃথিবীতে থেকে যাবে। দুঃখভরা হৃদয়ে তাকে অভিবাদন জানালেও আমরা জানি তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে শান্তিতে আছেন। পোপের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, ইয়র্কের আর্চবিশপ ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্টেফেন কোটরেল। তিনি বলেন, ধর্মীয় বিভেদ হ্রাস করতে পোপের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এসময় তিনি পোপকে ‘ঈশ্বরের পবিত্র পাত্র’ হিসেবে সম্বোধন করেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্তো মেসটোলা বলেন, তার হাসি বিশ্ব জুড়ে লাখ লাখ মানুষের হৃদয় জয় করে। পোপের সীমাহীন মমতার জন্য তার প্রশংসা করেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status