ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

গাজীপুরে শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যা

৮ মাস পর চার্জশিট দিলো পুলিশ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

গাজীপুরের টঙ্গীতে আলোচিত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। হত্যার ৮ মাস পর শনিবার রাত ৮টায় ১৪ জনকে আসামি করে অনলাইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) এবং স্থানীয় এক প্রভাবশালী আমির হোসেন আছেন। এই দুজনের ইশারাতেই শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) ও মামলার তদন্ত কমিটির প্রধান ইমরান আহম্মেদ অভিযোগপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের মিটালু গ্রামের বাসিন্দা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা ১৪ আসামি হলেন- মাজাহারুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আহম্মেদ ওরফে বাবুল (৪৩), রাসেল মণ্ডল (৩৫), রাইতুল ইসলাম ওরফে রাতুল (১৯), সোহেল রানা (২৩), জুলহাস আলী (২৩), সোহেল হাসান সোহাগ (২৬), শাহীনুল ইসলাম (২১), শাকিল মোল্লা (২৩), আমির হোসেন (৪০), হালিম মিয়া (৪২), রফিকুল ইসলাম (৪৬), জুয়েল মিয়া (২২) ও আবু সালেহ (৩৯)। গেল বছরের ২৫শে জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকায় ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায়ে কাজ করতে গিয়ে নিহত হন শহিদুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। এ ঘটনায় ২৬শে জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭জনের বিরুদ্ধে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার মামলা করেন। প্রাথমিক অবস্থায় মামলার তদন্ত করছিল টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ৬ই জুলাই মামলার তদন্তভার পায় জেলা শিল্প পুলিশ।

আসামি আমির হোসেন টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার প্রভাবশালী। স্থানীয়রা জানান, হালিম মিয়া আমির হোসেনের ভাই কামরুলের জমি ব্যবসার প্রজেক্ট ইনচার্জ হিসেবে এলাকায় পরিচয় দেন। আবু সালেহ প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার)। মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক। বাকি আসামিরা কেউ শ্রমিক নেতা, কেউ স্থানীয় বাসিন্দা। 

জানা গেছে, শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বেতনের সমস্যা নিয়ে কাজ করতেন। তার সঙ্গে কাজ করতেন মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফসহ আরও তিন শ্রমিক নেতা। বিভিন্ন কারখানায় কমিটি দেয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে শ্রমিকনেতা মাহাজারুল ও রাসেল মণ্ডলদের বিরোধ হয়। ঘটনার দিন ২৫শে জুন শহিদুল ও তার সহেযাগীরা হঠাৎ করেই বেতন ভাতার সমস্যা সমাধান করতে টঙ্গীর সাতাইশের প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় ঢুকে পড়েন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মাজাহারুল ও তার লোকজন।

মামলার বাদী কল্পনা আক্তার বলেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (এডমিন ম্যানেজার) জড়িত থাকলে কারখানার মালিক জড়িত থাকে না কীভাবে?। আসামি আমির হোসেন ও হালিম মিয়া প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ী কামরুলের লোক। কামরুলের নির্দেশেই তারা কাজ করতেন। কিন্তু অভিযোগপত্রে কামরুল বা কারখানার মালিকের নাম নেই। আমরা এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।
শহীদুলের স্ত্রী জানান, তার স্বামী শহীদুল কারখানায় গিয়েছিল শ্রমিকদের দাবি ও পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য। সেখানে শহীদুলের কোনো শত্রু নেই। কারখানা মালিকের একজন লোক রয়েছে যার নাম হানিফ, সে নিজে ঘটনাস্থলে থেকে তার স্বামী শহীদুলকে হত্যা করিয়েছে। পরে পুলিশ হালিম নামে একজন বয়ষ্ক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তাহলে যেই হানিফ আমার স্বামীকে হত্যা করিয়েছে সেই হানিফ কোথায় গেল? আমার কাছে এ প্রশ্নগুলো শুধু ঘুরপাক খায়। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে ইন্ধন ছাড়া মারেনি। আমি চাই সঠিক তদন্ত হোক। নামের সঙ্গে মিল তৈরি করে প্রকৃত আসামিকে যেন লুকানোর চেষ্টা করা না হয়।

নিহত শহীদুল ইসলামের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র সাদিকুল ইসলাম অপূর্ব জানান, তার বাবার প্রকৃত হত্যাকারীরা যেন আইনের ফাঁক-ফোকর থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। তারা যেন সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে আইনের দ্বারা দণ্ডিত হয়। মামলার তদন্ত কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) ইমরান আহম্মেদ বলেন, মামলাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ছিল। তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আমির হোসেন ও কারখানার কর্মকর্তা আবু সালেহর নাম উঠে এসেছে। মুলত তাঁদের ইশারা-ইঙ্গিতেই অন্য আসামিরা শহিদুলের ওপর হামলা চালিয়েছে। সবকিছু পঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগ পত্র দায়ের করেছি।

পাঠকের মতামত

আইন হলো মাকড়সার জালের মতো ছোটরা আটকে যায় এবং বড়রা ছিড়ে বের হয়ে যায়। বর্তমানে বিচার বিভাগ আর প্রশাসনের কথা কিবা বলল । তারা হলো হেমিওলের বাঁশিওয়ালার ইঁদুরের ন্যায় টাকা যেদিকে যায় সেদিকেই তারা যায়।

Rafiqul Islam
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:২২ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status