শেষের পাতা
বইমেলায় বেড়েছে অনুবাদ গ্রন্থের চাহিদা
হাসনাত মাহমুদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবারঅমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা ভাষায় রচিত বইয়ের বিশাল রাজ্যের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়। উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী- সাহিত্যের প্রতিটি জগতের হাজারো বইয়ের সমাহার এই বইমেলা। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মেলায় অনুবাদ সাহিত্য খুঁজছেন পাঠকরা। দেশীয় লেখকদের লেখা বইয়ের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনুবাদ সাহিত্যের। বিশ্বের খ্যাতনামা সব লেখকদের উপন্যাস, থ্রিলার, গোয়েন্দা সিরিজ, তাত্ত্বিক ও ইতিহাসনির্ভর বইগুলো সহজ বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে নিয়ে আসছে বড় বড় সব প্রকাশনা সংস্থাগুলো।
মূল বইয়ের তুলনায় অনেক সস্তা এবং নিজের ভাষায় পড়ার সুযোগ থাকায় এসব বইয়ের কদর বাড়ছে। অনুবাদ গ্রন্থ পাঠকেরা শুধু যে সাহিত্য চর্চার জন্যই কিনছেন তা নয়, চলতি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের জন্যও পাঠকেরা এসব গ্রন্থের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
ইতিহাস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন খালিদ হোসেন। তিনি গতকাল মেলায় এসেছিলেন মধ্যযুগে বাংলা ও ভারতের ইতিহাস নিয়ে ফারসি ভাষায় রচিত অমূল্য গ্রন্থ ‘ত্ববাকত-ই-নাসিরী’র অনুবাদ কিনতে। তিনি বলেন, মধ্যযুগের ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে মিনহাজ-ই-সিরাজ বইটির কোনো বিকল্প নেই। এমনকি বাংলায় মুসলমান শাসনের প্রথম ৫০ বছরের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদেরকে এ গ্রন্থই কেবল তথ্য দেয়।
তবে কলেজ পড়ুয়া ফাহমিদার জ্ঞানগর্ভ পড়াশোনার ধৈর্য এখনো গড়ে উঠেনি। তার পছন্দ বিদেশি থ্রিলার ঘরনার বই। বইমেলায় তার হাতে দেখা গেল দুইটি বই। জানালেন, প্যাট্রিসিয়া কর্নওয়েল তার প্রিয় লেখক। তার লেখা দুইটি ধারাবাহিক থ্রিলার- ‘পোস্টমর্টেম ও বডি অব এভিডেন্স’ কিনেছেন। দেশীয় থ্রিলার লেখকদের মধ্যে নাজিমউদ্দিন আহমেদের লেখাও ভালো লাগে বলে জানালেন এই বইপ্রেমী।
প্রতিষ্ঠিত সব প্যাভিলিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেল গন্ধগুলোর কাটতি গতবারের তুলনায় এবার বেশি। ঐতিহ্য প্রকাশনীতে এবার বেশি চলছে- কাশ্মির ও আজাদির লড়াই, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ‘মিথস অব ব্যাবিলনিয়া অ্যান্ড অ্যাসিরিয়া।’ অন্বেষা প্যাভিলিয়নে পাঠকরা কিনছেন মোগল সম্রাট বাবরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের অনুবাদ ‘বাবরনামা’। পাঞ্জেরি প্যাভিলিয়নে গিয়ে জানা গেল তাদের বিক্রির শীর্ষে থাকা প্রথম দশ বইয়ের মধ্যে আছে বেশ কয়েকটি অনুবাদ সাহিত্য।
গতকাল ছিল মেলার ২৪তম দিন। চোখে পড়ার মতো জনসমাগম এদিন মেলা প্রাঙ্গণে ছিল না। তবে শেষ মুহূর্তে যারা মেলায় তারা বই কিনেই বাড়ি ফিরছেন। বিক্রেতাদের আশা করছেন শেষ কয়েকদিনে জমজমাট বই বিক্রি করতে পারবেন তারা। এদিন পূর্ণ দিবস মেলা থাকায় নিজেদের সুবিধামতো সময়ে মেলায় এসেছিলেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। বই কেনার পাশাপাশি ছুটির দিনে প্রাঙ্গণে পরিবার প্রিয়জনকে নিয়ে সময়ও কাটিয়েছেন তারা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলাকেন্দ্রিক একাডেমির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমগুলো গতকালও সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। লেখক বলছি, মঞ্চে নতুন লেখকদের নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা কিংবা মূলমঞ্চে আলোচনা সবক’টি আয়োজনই ছিল প্রাণবন্ত। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। এখন পর্যন্ত মেলায় বের হওয়ার নতুন বইয়ের সংখ্যা ২,৭৩৯টি।