প্রথম পাতা
ফেসবুকে নওশিনের প্রতারণার ফাঁদ
মরিয়ম চম্পা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবারনওশিন তাবাস্সুম। বয়স ২২ বছর। সপরিবারে থাকেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর হালিশহরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্থানীয় একটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। ভারত থেকে চুড়ি এনে চুড়ির মেলা নামে একটি ফেসবুক পেজে বিক্রয়ের নামে চলছে তার প্রতারণা। কলেজে পড়াকালীন অর্থাৎ ১৯ বছর বয়সে প্রতারণার হাতেখড়ি তার। বাবা সৌদি প্রবাসী। সামান্য বেতনে চাকরি করেন। চুড়ির মেলা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যেন কয়েক বছরেই আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে বসেন এই শিক্ষার্থী। তার পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক লাখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাকা ইনভেস্ট চেয়ে ওপেন পোস্ট দেন। যার মাধ্যমে তার প্রতারণার শিকার প্রবাসী নারী, আইনজীবী, শিক্ষার্থী, গৃহিণীসহ অনেকে। তার প্রতারণার রসদ জোগাচ্ছেন মা-ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনরা। পাওনার টাকা চাইতে গেলে কখনো ভুয়া চেক দিয়ে প্রতারণা করেন। কখনও মামলার ভয় দেখান। এ পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষ শিক্ষার্থী নওশিনের প্রতারণার শিকার। শাহনাজ আক্তার মণি নামে চট্টগ্রামের এক আইনজীবীর কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। পরে অনলাইন ব্যবসার লভ্যাংশসহ পাওনা টাকা চাইতে গেলে থানা পুলিশ দিয়ে মামলা এবং বাসা থেকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয় এই শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই আইনজীবী। এছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন তিনি। এর আগে পাওনা টাকা চেয়ে নওশিনের চট্টগ্রামের ঠিকানায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠান তিনি। কিন্তু তা গ্রহণ করেনি অভিযুক্ত কলেজছাত্রী। থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে শাহনাজ আক্তার মনি বলেন, আমার ছোটবোনের বান্ধবীর মাধ্যমে নওশিনের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে সে তার ফেসবুক পেজ ‘চুড়ির মেলা’র মাধ্যমে জুয়েলারির ব্যবসার কথা বলেন। মৌখিকভাবে জানায়, তার ব্যবসায়ে ইনভেস্ট করলে লভ্যাংশ সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেবেন। সরলভাবে তার কথা বিশ্বাস করে ব্যবসায় ইনভেস্ট বাবদ গত ২৬শে জুন ২০২২ থেকে গত বছরের ৬ই মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক ধাপে ৮ লাখ টাকা দেই। টাকাগুলো তার মায়ের ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট- হিসাব নম্বর ১১০৩১০৩১৫৮৪০০০১’ এর মাধ্যমে আমার থেকে নেয়। কিন্তু টাকা নেয়ার পর থেকে আমাকে কোনো মুনাফা না দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ফোনে টাকা চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। নওশিন যেকোনো সময় আমার ও পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বর্তমানে আমি আতঙ্কে জীবনযাপন করছি। আইনজীবী শাহনাজ আক্তার মনির স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর অনেক কষ্টের টাকা এই প্রতারক নারী আত্মসাৎ করেছে। আমরা ইতিমধ্যে অর্ধশত ব্যক্তির কাছ থেকে নওশিন এর প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি।
এতদিন তার মামলার হুমকির এবং ভয়ে কেউ আইনি পদক্ষেপ নিতে সাহস পাননি। এখন আমরা ভুক্তভোগী সকলেই যৌথভাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। ঢাকার মিন্টো রোডে অবস্থিত গোয়েন্দা কার্যালয়ে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরেক ভুক্তভোগী ফারিসা তারান্নুম বলেন, আমি গত নভেম্বরে দেশে গিয়েছিলাম। ৭ই ডিসেম্বর কয়েক সেট চুড়ির জন্য ‘চুড়ির মেলা’ পেজে ২৮শ’ টাকা বিকাশ করে অর্ডার করি। পরে সে আমাকে তার ফেসবুক পেজে টাকা ইনভেস্টের জন্য প্রভাবিত করতে থাকে। অর্ডারকৃত চুড়ি না পেয়ে আমি হতাশ হয়ে আমেরিকায় ফিরে আসি। চুড়িগুলো বুঝে পেলে হয়তো আমি তার পেজে বড় অংকের টাকা ইনভেস্ট করে ধরা খেতাম। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে অভিযুক্ত নওশিন উন্মুক্তভাবে তার পেজে টাকা ইনভেস্ট করার জন্য পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন জন থেকে টাকা নিচ্ছে। শাহরিশ মিম নামের আরেকজন বলেন, নওশিন আমাকে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে ইনবক্স করে। জানায়, মাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হবে। আমি গ্যারান্টি চাইলে তিনি একটি স্ট্যাম্প দেখিয়ে বলেন- স্ট্যাম্পে লিখে টাকা নেয়া হবে। কিন্তু তার ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখি অসংখ্য মানুষ তাকে ফ্রড বলে গালি দিচ্ছে। এসব দেখে আমি আর টাকা দেইনি। তাহমিনা আলম নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গত ৫ মাস ধরে লভ্যাংশ এবং মূল টাকা কোনোটাই দিচ্ছে না।
ভুক্তভোগী আরও তিন নারী তাদের পাওনার ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চাইতে সম্প্রতি নওশিনের হালিশহরের বাসায় গেলে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। পাওনাদারদের বাসায় গিয়ে ভাঙচুর চালায় নওশিন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নওশিন এর ৬টি মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলে অধিকাংশ ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। একটি নম্বর খোলা পেলে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ বিষয়ে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এসব ঘটনায় তদন্ত শেষে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটাতো রীতিমতো সাইবার ক্রাইম। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত সোচ্চার এবং কাজ করছি।
বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া কোথাও টাকা ইনভাইট করা উচিত নয় এর জন্য মানুষ ফাঁদে পড়ে।
যে উকিল টাকা দিয়েছে সে মনে হয় বটতলার উকিল। উকিল হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে। এ কথা জানার পর আর কেউ কি তার কাছে আইনি পরামর্শ এর জন্য যাবে? প্রতারক এমন কি ভিআইপি ব্যক্তি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
LOVI Bangali a vabay e dhora khay!!
যে টাকা নিয়েছে, তার চেয়ে বেশী দোষী, যারা তাকে টাকা দিয়ে অসৎ কাজের জন্য সহোযোগীতা করেছে। জীবনের অভিজ্ঞতা টাকা দিয়েই কিনতে হয়। শুধু মনে রাখা দরকার, সৎপথে হউক আর অসৎ পথেই হউক, অর্থ উপর্জনের জন্য প্রচুর অভিজ্ঞিতার প্রয়োজন।
লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। এই সহজ বিষয়টা উপলব্ধি করতে মানুষের অনেক সময় লেগে যায়।
উনি যদি নিজেকে আওয়ামী লীগের কেউ বলে পরিচয় দেন তাহলে আর কোন সমস্যা হওয়ার কথানা।
জ্বি মামনি নওশীন এখন কোথায় যাবা?