শেষের পাতা
ওলামা দল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবারবিএনপি’র অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পরও থামছে না এই বিশৃঙ্খলা। প্রকাশ্যেই ঘটছে মারামারির ঘটনা। দলীয় কর্মসূচিতে কোরআন তিলাওয়াত কে করবেন- এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে দ্বন্দ্ব। জিয়াউর রহমানের হাতেগড়া এই সংগঠনটি নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ই এপ্রিল মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হককে আহ্বায়ক এবং মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ওলামা দলের ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ২৫শে জানুয়ারি ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ মো. নেছারুল হক স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে জানানো হয়, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজাকে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মনোনীত করা হয়। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়কের শূন্য পদে ১৬ জনকে পদায়ন, একজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ২ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ নিয়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করে। ওলামা দলের বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, বিএনপি’র হাইকমান্ডকে অন্ধকারে রেখে সংগঠনের সদস্য সচিবকে বদলানোসহ এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
বিষয়টিকে অগঠনতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গত ২৬শে জানুয়ারি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনও করেন ওলামা দলের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের ৫১ নেতা। ১লা ফেব্রুয়ারি রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওলামা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র আলোচনা সভায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ওলামাদলের দুইগ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় দলটির সিনিয়র নেতারা তাদের নিবৃত করেন। ওদিকে আলোচনা সভার শুরুর জন্য কোরআন তিলাওয়াত করতে যান সংগঠনটির সাবেক আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক। এ সময় তাকে বাধা দেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক হাফেজ জসীমউদ্দিন। নেছারুল হককে প্রতারক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সে আলেম নামের কলঙ্ক। সে কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। আমি ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক। আমি কোরআন তেলাওয়াত করবো। এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদীর তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মিটমাট করে নেছারুল হককে কোরআন তিলাওয়াতের অনুমতি দেন।
সংগঠনটির নেতারা জানান, বিএনপি’র কর্মসূচিতে কোরআন তিলাওয়াত আর দোয়া-মোনাজাতেই সীমাবদ্ধ ওলামা দলের কর্মকাণ্ড। ধর্মীয় ইস্যুভিত্তিক কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি সংগঠনটিকে। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি একেবারে নিষ্ক্রিয়। একসময় ঢাকাসহ সারা দেশে কমিটি থাকলেও এখন অনেক জেলায় কমিটি নেই। দলের কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচিকে ৮-১০ জনের বেশি নেতা উপস্থিত হন না। সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই ধারায় বিভক্ত। একটি কওমি ও আরেকটি আলীয়া। দুই ধারার আলেমদের সমন্বয় করে কমিটি করা হলে সংগঠনের অবস্থান শক্তিশালী হবে। দলীয় কর্মসূচিতে আলেমদের উপস্থিতি বাড়বে। দলের বিভেদও থাকবে না।
নতুন কমিটিতে যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান তারা। এদিকে নতুন কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- ওলামা দলের সাবেক আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক, সাবেক সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম ও সাবেক সহ-সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন মুন্সী। ওলামা দলের সাবেক সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা মহানগরের সভাপতি ছিলাম। এরপর দলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে দায়িত্ব দিলে ওলামা দলকে সক্রিয় করবো। ওলামা দলের সাবেক আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক মানবজমিনকে বলেন, ওলামা দল পুনর্গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে। তিনি যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করেন তাহলে নতুন কমিটিতে রাখবেন, আর যদি প্রয়োজন মনে না করে তাহলে রাখবে না। আমি বিএনপিতে আছি, বিএনপিতে থাকবো। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দলের দু’গ্রুপের মারামারির বিষয়ে জানেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।