শরীর ও মন
ADHD বা অস্থির শিশুর সুস্থতার জন্য করণীয়
ডা. এমএ হক, পিএইচডি
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, সোমবার
আমাদের চারপাশে অনেক অস্থির শিশু দেখা যায়। এসকল শিশুরা অহেতুক ছুটাছুটি করে। কখনো জানালার গ্রিল বেয়ে উপরে উঠছে আবার কখনো ওয়ারড্রপের উপরে উঠছে। কখনো বা খাটের উপরে উঠে লাফালাফি করছে। কখনো বই-খাতা ছিঁড়ে ফেলছে আবার কখনো বা আলনার কাপড়-চোপড় ফেলে দিচ্ছে। কখনো অন্য বাচ্চাকে ধাক্কা দিচ্ছে আবার কখনো বা বাবা-মাকে কামড়ে দিচ্ছে। আবার কখনো কখনো রাগে খামছি দিচ্ছে, চুল টানছে। দ্রব্যাদি ফেলে দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার নিজের হাতে কামড় দেয়, নিজের মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করে, মাথা দিয়ে শক্ত ওয়ালে আঘাত করতে থাকে। এ ছাড়াও অনেক বাচ্চা আছে যারা অটিজম শিশু নয় তারাও স্কুলে, বন্ধুদের সঙ্গে অথবা বাড়িতে খুবই অস্থিরতা করে, মারামারি করে, অন্যের ক্ষতি করে বাবা-মায়ের নিকট অভিযোগের শেষ নেই। এরা যেন এক মূর্তমান আতঙ্ক। যা চাই তাই দিতে হবে। না দিলে রাস্তার উপর গড়াগড়ি শুরু করবে, বাসায় ফিরিয়ে আনা যায় না। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া যায় না। একবার গেলেই আত্মীয়স্বজনেরাও আতঙ্কে থাকে। আজ এরাই আমাদের আলোচনার বিষয়।
উপসর্গ: অউঐউ শৈশবের সবচেয়ে সাধারণ নিউরোডেভেলপমেন্টাল ব্যাধিগুলোর মধ্যে একটি। সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু চঞ্চল হবেই। সুস্থ শিশু মানেই হাসিখুশি ও দুরন্তপনা। তবে অতিচঞ্চল শিশুর সমস্যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার অউঐউ. বাংলায় এ সমস্যাকে অমনোযোগিতা বা অতিচঞ্চল বলে। এটি শিশুর একধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা। এটি সাধারণত শৈশবেই বুঝতে পারা যায় এবং প্রায়ই প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অউঐউ আক্রান্ত শিশুদের মনোযোগে এবং আবেগপ্রবণ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হয়।
যখন শিশুর চঞ্চলতার কারণে সে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অন্যের ক্ষতির কারণ হয় কিংবা সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় তখন সেই চঞ্চলতাকে ADHD বলে।
সুস্থতার জন্য করণীয়: ADHD আক্রান্ত শিশুর জীবন স্বাভাবিক করে তুলতে তাদেরকে নিউরোসাইকিয়াট্রিক চিকিৎসকের সাহায্যে প্রয়োজনমতো ওষুধ সেবন করাতে হবে।
শিশুর জন্য একটি রুটিন তৈরি করতে হবে। বাড়ির সবাই সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন- নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া ও খেলার সময়ে খেলা ইত্যাদি।
শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। শিশুর সঙ্গে রাগারাগি করবেন না।
শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন এবং ভালো কাজে উৎসাহিত করুন।
শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রাকৃতিক খাবার ও তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।
বাইরে খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে এতে তার পর্যাপ্ত ঘুম হবে।
এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্য ও কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অভিভাবকদের শিশুর অউঐউ চিকিৎসায় আরও যতœবান হয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এমফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭০৭-০৭৩১৪১