শরীর ও মন
ক্যান্সার সচেতনতায় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২৪
‘আমরা পারি, আমি পারি
মাহমুদুল হাসান সরদার
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবারগত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ব্যাপক প্রচারণায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়ে গেল ‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২৪’। এই দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘আমরা পারি, আমি পারি’। ব্যক্তি ও সমাজের মিলিত পদক্ষেপে ক্যানসার প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন- এই ভাবনা থেকেই এই স্লোগানটিকে এ বছরও প্রতিপাদ্য হিসেবে নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ ও ভয়াবহতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে এবারের দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার পরিস্থিতি খুবই ভীতিকর ও উদ্বেগজনক। প্রতিবছর এক দশমিক দুই কোটি নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে দুই কোটি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্যান্সার বিষয়ক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। সামাজিক ট্যাবু, অসচেতনতা, চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতা, উচ্চ ব্যয় ইত্যাদি ক্যান্সার চিকিৎসাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বেড়ে যাচ্ছে ক্যান্সারের প্রকোপ ও ভয়াবহতা। শুধু সামাজিক সচেতনতা ও প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তকরণের মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে এর হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশের নারীরা যে দু’টি ক্যান্সারে বেশি ভোগে সেগুলো হলো- জরায়ু মুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার। পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার ও মুখের ক্যান্সার বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। । ক্যান্সারই সচেতনতা ও প্রাথমিক শনাক্তকরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, ধূমপান বর্জন করে এই ক্যানসারগুলোর প্রবণতা অনেকখানিই কমিয়ে ফেলা যায়। তাই সবার সচেতন অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নিজে জানতে হবে, অপরকেও জানাতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- এই মৃত্যুদূতকে ঠেকাতে চাইলে।
ক্যান্সার আক্রান্তের কারণ ও প্রতিকার
ক্যান্সারের কারণ হিসেবে পান-সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ, কিছু কিছু ভাইরাস (হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, এবস্টেইন বার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস), কিছু পরজীবী (সিস্টোসোমিয়াসিস), সূর্যকিরণ, তেজস্ক্রিয়তা, কীটনাশক, রঙিন খাবার, বায়ুদূষণ প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, ওপরের কারণগুলো প্রতিহত করতে পারলে তিনভাগের একভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলুন। এসব নিয়মের মধ্যে সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরকে সচল রাখা। সব ধরনের তেজস্ক্রিয়তা এড়িয়ে চলা। পেশাগত কারণে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিয়ে কাজ করা। সময়মতো টিকা গ্রহণ করা (যেমন- ‘হেপাটাইটিস বি’ টিকা লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে)। রঙিন খাদ্য ও পানীয়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এবং কসমেটিক বর্জন করা। সর্বোপরি খাদ্য, ওষুধ ও কসমেটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা। পর্যাপ্ত উদ্ভিজ খাবার (শাকসবজি, ফলমূল) এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। খাবারে অতিরিক্ত লবণ বর্জন করা। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা বা এড়িয়ে চলা। যেসব অসুখ থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলোর দ্রুত চিকিৎসা করানো। ধূমপান ও মাদকবিরোধী আইন মেনে চলা অথবা বাস্তবায়ন করা। ক্যান্সারের কারণ, প্রতিরোধ, দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় এবং ক্যান্সারের পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
লেখক: ক্যান্সার চিকিৎসক ও চিফ কনসালটেন্ট, সরদার হোমিও হল, ৬১/সি আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪