শরীর ও মন
শীতে পেশিতে টান ধরার সমস্যা ও পরিত্রাণ
ডা. মো. বখতিয়ার
২২ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবারসাধারণত শীত আসতেই অনেকেরই পায়ের রগে টান ধরার সমস্যা বেড়ে যায়। গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষের পায়ের রগে টান ধরে। আবার ঘুম থেকে উঠতে গেলে কিংবা সকালে হাঁটা শুরু করতেই পায়ের শিরায় টান ধরতে পারে। কখনো বা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই বেঁকে যায় পায়ের আঙুল। হাতের ও কোমরের পেশিতেও একইভাবে টান ধরতে পারে। শিরায় টান ধরলে অনেকক্ষণ অসহ্য যন্ত্রণা থাকে।
মূলত, এই টান ধরার কারণ হলো ডিহাইড্রেশন। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে এই টান ধরার প্রবণতা বাড়ে।
শীত আসতেই পানি খাওয়ার পরিমাণ কম হয়। ফলে শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। ফলে ঘাটতি পড়ে পেশির স্থিতিস্থাপকতায়। শীতে আবার পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলেন অনেকে। এতেও শিরায় টান ধরা বা ক্রাম্পের প্রবণতা বাড়ে। সাধারণত শীতকালে যেসব কারণে পায়ের রগে টান ধরতে পারে-
* শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি।
* অতিরিক্ত ব্যায়াম, পরিশ্রম বা পায়ের পেশির বেশি ব্যবহার।
* পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়া।
* গর্ভকালীন, বিশেষ করে শেষের দিকে প্রয়োজনীয় খনিজের অভাবে রগে টান পড়ে।
* বেশি সময় বসে থাকা, শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, ঘুমের সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণে এমন হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়: হঠাৎ পায়ের রগে টান ধরলে ঘরোয়া উপায়েই তা সারিয়ে তুলতে পারবেন। তবুও যদি না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি-
* হাত-পা-আঙুল বা কোমরে ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থানে ও তার চারপাশে আঙুলের চাপে ম্যাসাজ করুন। এমনভাবে মাসাজ করতে হবে যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
* পায়ে ক্র্যাম্পের ক্ষেত্রে হালকা করে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে স্ট্রেচিং করুন। অন্য কোনো ব্যায়াম এসময় না করাই ভালো।
* থাইয়ের পেশিতে টান লাগলে জায়গাটা নরম করে একটি শক্ত কিছুতে ভর দিয়ে দাঁড়ান। টান ধরা পাকে কোমর অবধি টানটান করুন ধীরে ধীরে।
* হটব্যাগ ব্যবহার করুন টান ধরার জায়গায়। ১০ সেকেন্ড রাখার পর সেখানে বরফ সেঁক দিন। আবার ১০ সেকেন্ড পর হট ব্যাগ দিন। এভাবে ঠাণ্ডা ও গরম সেঁক দিলে ব্যথা কমতে শুরু করবে।
* হঠাৎ পায়ে টান ধরলে শক্ত কোনো কাজ করবেন না। এতে টান ধরা জায়গায় চাপ পড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
পায়ে টান ধরা ব্যথা কমাতে যা যা খাবেন-
* সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন । শরীরে জলের ভারসাম্য রক্ষা করতে ডাবের পানি বা লেবু-পানিও খেতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীরে পানির ঘাটতির জন্যই এমনটি হয়।
* পটাশিয়ামের সেরা উৎস হলো কলা। পটাশিয়াম কার্বন ভাঙতে ও পেশির গঠনে সাহায্য করে। তাই কলা এক্ষেত্রে উপকারী খাবার হতে পারে। পটাশিয়াম কিন্তু স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
* কলার পাশাপাশি মিষ্টি আলুও খেতে পারেন। রাঙা আলু পটাশিয়ামের ভালো উৎস। এ ছাড়াও এতে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম আছে। সাধারণ আলু ও কুমড়া শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের জোগান দেবে।
* শীতকালে শিম ও মটরশুঁটি শরীরে প্রোটিন ও ম্যাগনেশিয়ামের জোগান বাড়াবে। এ ছাড়াও শিমের কালো বীজ খেতে পারেন। এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
মনে রাখবেন, পেশিতে টান এটি যদিও মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়, তবে আপনার অবহেলা বা গাফিলতির কারণে এটি অনেক সময় খারাপ কিছু সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই রকম সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চলাই উত্তম।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।