ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

নতুন ইতিহাস

নূরে আলম জিকু ও হায়দার আলী, শিবচর থেকে
২৬ জুন ২০২২, রবিবার
mzamin

ছবি: পিআইডি

পদ্মাপাড়ে রচিত হলো নতুন এক ইতিহাস। উন্মোচন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে গতকাল। দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এই সেতু এখন বাস্তব। আজ থেকে পদ্মার থই থই জলের উপর দিয়ে উড়ে যাবে একের পর এক যান। ফেরির জঞ্জাল, দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিশ্চিত সময়ের উৎকণ্ঠার অতীত পেরিয়ে পদ্মা বয়ে নিয়ে এসেছে নতুন এক দিন। নতুন এক উদ্দীপনা। দক্ষিণের সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব কমিয়ে আনা এই সেতু হবে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাণিজ্য বিনিয়োগ আর অর্থনীতির প্রাণসঞ্চারি এক মাধ্যম। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে পদ্মাপাড় ছিল উৎসবে বর্ণিল। উৎসবে যোগ দিয়েছিল পুরোদেশ।

বিজ্ঞাপন
বর্ণিল আয়োজনে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে স্বপ্নের সেতুর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুর উপর দাঁড়িয়ে বিমান বাহিনীর মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগ করেন। এরপর শিবচরে জনসভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সেতুর দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ তিতিক্ষা আর রক্ত ধারায়। 

কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কবির ভাষায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতো বারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার, দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস।  সকাল ১০টায় সভামঞ্চে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহরও অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরা। জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করেছি বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে -প্রধানমন্ত্রী:  সেতু উদ্বোধনের পর মাদারীপুরের শিবচরে আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন। জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে সফল হয়েছি। প্রয়োজনে, দেশের উন্নয়নে জীবন দিয়ে হলেও কাজ করে যাবো। আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

 আরও উন্নত জীবন যেন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পায় তার ব্যবস্থাও আমি করবো। আজকে আপনাদের কাছে এটাই আমার ওয়াদা। শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা একটা সময় বলছেন- ‘নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়’। আজকে নিজেদের টাকায় কীভাবে পদ্মা সেতু করতে পারলাম। কারণ, আজকে আপনারা বাংলাদেশের জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতারাও বলেছে-আওয়ামী লীগ কোনোদিনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আজকে খালেদা জিয়াকে বলছি আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশে যেমন আমরা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও গৃহহীনদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আরও উন্নত জীবন যেন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পায় তার ব্যবস্থাও আমি করবো। 

বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মা’য়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, আপনাদের পাশেই আমি আছি, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সব সময় প্রস্তুত।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আপনাদের, এই দেশ আমাদের। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং এই দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, ২০০১ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকারে এসে সেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে বয়সের কারণে চলে যেতে হলো, তখন তিনি আমেরিকায় গিয়ে তদবির করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেন।

 

 

সে সময় বলা হলো দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে। যে সেতু আমাদের প্রাণের সেতু, যে সেতুর সঙ্গে আমার এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এই সেতু নির্মাণে কেন দুর্নীতি হবে? বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি-ষড়যন্ত্র বলে টাকা বন্ধ করলো। তিনি আরও বলেন, তখন জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলাম যে, বাংলাদেশ বসে থাকবে না, আমরা নিজের টাকায় এই পদ্মা সেতু তৈরি করবো। অনেকে অনেক ভাবে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তাদের একটা ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশ নিজের টাকায় এই সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু, আমি জনগণের শক্তিতে আস্থা রেখেছি। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পর আমার উদ্যোগে জনগণ ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে এবং আমার মাঝে শক্তি সঞ্চারিত করেছে বলেই আজকে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছেও শুকরিয়া।  শেখ হাসিনা বলেন, আর কাউকে এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান বা আপনজনকে হারাতে হবে না, আপনারা সেখানে নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন।

 সেই ব্যবস্থাই আমরা করে দিয়েছি। আর যারা এই সেতু নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করেছিল তাদেরকে এই পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে উপযুক্ত একটা জবাব আমরা দিতে পেরেছি। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।  ’৭৫-এ বাবা, মা, ভাইদের হারানোর কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, সমগ্র বাংলাদেশ তখন ঘুরে বেড়িয়েছি। সে সময় শরীয়তপুরে আসার স্মৃতিচারণ করে বলেন, লঞ্চে করে আসার পর লঞ্চ নষ্ট হয়ে গেলে নৌকায় করে প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছি, কাদা-পানিতে নেমেছি, মিটিং করেছি। আজকে শরীয়তপুরের চেহারা পাল্টে গেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রিজ করেছে এবং সার্বিক উন্নয়ন করেছে। সে সময় মাদারীপুরও সেই লঞ্চে যেতে হতো এবং গোপালগঞ্জ যেতে ঢাকা থেকে ২২ ঘণ্টা সময় লাগতো। এসব এলাকা অত্যন্ত দুর্গম ছিল। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়নসহ আমাদের সরকার শিকারপুর, দোয়ারিকা এবং গাবখান সেতু করে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি করেছে।  এ সময় করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি সকলকে টিকা গ্রহণের এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। কলকারখানা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পসহ নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অন্তত ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমরা করতে পারবো। কেননা, আমাদের সরকার দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। যাতে দেশের মানুষের দুঃখ ঘুচে গিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।  শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে বন্যা হচ্ছে সেখানে আমরা ত্রাণ পাঠিয়েছি। এখন বর্ষাকাল এখানেও বন্যা হতে পারে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আপনারাও প্রস্তুতি নেবেন। কেননা, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার শক্তি বাংলাদেশ এবং এর জনগণ রাখে। জাতির পিতার কন্যা বলেন, দেশের আর কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। এমনকি পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা জমি দিয়েছেন তাদের সবাইকে জমি ও ঘর প্রদানসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সমাবেশ শুরুর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।  

পদ্মা সেতুতে মানুষের ঢল: বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে সেখানে। অনেকে পায়ে হেঁটে পদ্মা সেতুতে উঠে পড়েন। পদ্মা সেতুতে উঠে সবাই নিজেকে মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দি করছেন। শনিবার দুপুরে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এমনই চিত্র দেখা যায়। দর্শনার্থীর জানান, ইতিহাসের সাক্ষী হতে পদ্মা সেতুর ওপর সেলফি তুলছেন তারা।  এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুর শিরচরের কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় অংশ নিতে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢল নেমে। এদিন ভোর থেকেই সভাস্থলে আসতে শুরু করেন মানুষ। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে সেখানে পৌঁছান। ভোলা, বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ লঞ্চযোগে সভাস্থলে পৌঁছান। বিভিন্ন স্থানের শতাধিক লঞ্চ বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় নৌঙ্গর করে রাখা হয়। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে জনসভায় যোগ দেন। লঞ্চে আসা অধিকাংশ মানুষ এর ভেতরেই অবস্থান করেন। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ বাস, ট্রাকযোগ সভায় অংশ নেন। এসব পরিবহন সভাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রাখা হয়। ফলে কাঁঠালবাড়ি জনসমভায় অনেকে পায়ে হেঁটে আসেন।  সরজমিনে দেখা যায়, সভাস্থলের সামনেই উপস্থিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সেখানে দলে দলে আসছেন আরও মানুষ। কেউ কেউ কিছু সময় অপেক্ষা করে সুবিধা মতো জায়গায় অবস্থান করেন। জনসভা দেখতে পদ্মাপাড়ে ভিড় করেছেন ওই অঞ্চলের আশেপাশের মানুষ। অনেকেই পরিবার পরিজনসহ এসেছেন। 

জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা সেজেছে রঙিন ফেস্টুন-ব্যানারে। শিবচরের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে মিছিল-স্লোগান দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরছেন উজ্জীবিত নেতা-কর্মীরা। তাদের কারো গায়ে লাল-সবুজ টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ। রাস্তার দুই পাশও বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। পুরো এলাকা সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিট এবং এসএসএফ সদস্যরাও চেকপোস্ট বসিয়েছেন। কাউকে সন্দেহ হলেই করেছেন তল্লাশি। সমাবেশস্থলে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়। পর্যবেক্ষণ করার জন্য ছিল দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।  এদিকে জনসভার মঞ্চ তৈরি করা হয় পদ্মা সেতুর আদলে। মঞ্চে সেতুকে আরও জীবন্ত রূপ দিতে এটি নির্মাণ করা হয় জলাধারের ওপর। সেখানে থাকা পানিতে রাখা হয় একটি নৌকা। দুপুর ১২টা ৫২ মিনিট। জনসভাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও মঞ্চে উঠেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখোরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের পর দুপুর ১টা ৯ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যখন প্রায় শেষের দিকে। তখন তার সামনেই পানিতে নেমে সাঁতার কাটেন এক কিশোরী।

 সাঁতরে এগিয়ে যায় মঞ্চের দিকে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে বাধা দিতে যায়। উপস্থিত জ্যেষ্ঠ নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাধা দিতে মানা করেন। পরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই কিশোরীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন।  উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলবাসী, রাজধানী এখন হাতের মুঠোয়: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকা এখন দক্ষিণাঞ্চলবাসীর হাতের মুঠোয়। দিন গুনতে গুনতে অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ফলে এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঢাকাকেন্দ্রিক একটি বাজার তৈরি হবে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সহজেই ঢাকা পৌঁছানো যাবে। আবার ঢাকা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি গ্রামাঞ্চলে নিয়ে আসা যাবে। সেতুর ফলে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি খরচও কমে আসবে। এতে করে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে পদ্মাপাড়ের এই অঞ্চলে। তাতে করে বাড়বে জীবন-যাত্রার মানও। মাদারীপুর জেলার শিবচরের উৎরাইল নয়াবাজারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘উৎরাইল হাট থেকে রসুনসহ নানা শস্য কিনে ঢাকার টঙ্গীতে পাঠাই। সপ্তাহে দুই-তিনদিন ঢাকা যেতে হয়। ভোরে গিয়ে আবার তাড়াহুড়া করে বিকালে রওনা দিয়ে বাড়ি ফিরি। ঝড়-বৃষ্টি হলে ঘাটে আটকে থাকতে হয়। অনেক সময় প্রয়োজন হলেও ঢাকা যেতে পারি না। সেতু চালু হলে ঢাকা যাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।

মালামাল পৌঁছাতেও কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। সরাসরি মালামাল নিয়েই ঢাকায় যাওয়া যাবে। সময়ও কম লাগবে। ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারও হবে।’ স্থানীয় শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, ‘এই পদ্মা নদী পার হতে গিয়েই পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে প্রাণহানি হয় অসংখ্য মানুষের। স্বজনহারা হয় অসংখ্য পরিবার। অনেকের মরদেহ শনাক্ত করতে পারেনি স্বজনরা। পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে স্পিডবোট ডুবে একসঙ্গে নারী-শিশুসহ ২৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে এই নৌরুটে। আজ পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। এ নৌরুটে আর দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে না যাত্রীদের। পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, পদ্মা সেতু আমাদের আবেগ!’ সহিদুজ্জামান সোহেল নামের শিবচরের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ঢাকায় চাকরি করি। বাড়িতে মা থাকে। মাকে দেখতে যখন-তখন ছুটে আসতে মন চাইলেও পদ্মা নদী বাধার সৃষ্টি করে। বাড়ি আসতে চাইলে হিসাব-নিকাশ করতে হয়। ফেরি পাবো কি-না, রাত হয়ে যাবে কি-না বা ঝড়-বৃষ্টি হলে তো নৌযান বন্ধ থাকবে। আমরা যারা পদ্মার ওপারে বাস করি তাদের কাছে এই সেতুর গুরুত্ব অনেক! পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status