শরীর ও মন
গরমে ছেলেদের ত্বকের যত্ন আত্তি
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২৫ জুন ২০২২, শনিবার
মেয়েদের চেয়ে পুরুষের ত্বকের যত্ন নেয়া বেশি প্রয়োজন। কারণ আমাদের দেশসহ উপমহাদেশের বেশির ভাগ দেশেই মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে কাজের তাগিদে বাহিরে থাকেন বেশি। ফলে ছেলেদের ত্বকে বেশি ধুলোবালি বা ময়লা জমে। আর দেখা যায়, ছেলেদের ত্বক মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি পুরু ও গরমে ত্বক আরও নিষ্প্রাণ ও তামাটে বর্ণ হয়ে যায়। আবার অনেক ছেলেদের ত্বক খসখসে হয়ে যায়। তাই এই খসখসে ভাব দূর করতে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসাকেন্দ্রে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ছেলেদের উপস্থিতি বড্ড বেশি দেখা যায়। কারণ একটাই ছেলেরা আজকাল নিজেদের ত্বকের সৌন্দর্যের ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়ে উঠেছেন। ছেলেদের ত্বকের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য নষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের ব্রণ। ছেলেদের ব্রণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ও এলোমেলো জীবনযাপন, অতিরিক্ত ভাজা পোড়া খাওয়া, পর্যাপ্ত না ঘুমানো, বেশি সিগারেট খাওয়া। এছাড়া রোদ, ধুলাবালি, ঘাম ইত্যাদি তাদের ত্বক রুক্ষ ও মলিন করে, দেখা দেয়া নানা ধরনের সমস্যা।
বিশেষ করে তৈলাক্ত ও ঘামে ভেজা ত্বকে ধুলাবালি মিশে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ব্রণ হয়। ব্রণ সমস্যার জন্য ভালো কোনো স্কিন মেডিকেল সেন্টার আপনার ভালো সহায়ক হতে পারে। আজকাল একনেস্কার ও অত্যাধুনিক অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসায় ব্রণ দ্রুত নিরাময় হয়। এমনকি ব্রণজনিত কালো দাগ ও গর্তও পরিত্রাণ হয়। ব্রণে কখনো নখ লাগাবেন না। এতে দাগ পড়তে পারে। বেশি ব্রণ এবং সে কারণে ব্যথা বা অস্বস্তি তীব্র হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া মৌসুমী ফলমূল ও শাকসবজি খেলে ব্রণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ব্রণ প্রতিরোধে ত্বক পরিস্কার রাখা, খোঁচাখুঁচি না করা, প্রচুর পানি পান করা, কোষ্টকাঠিন্য যেন না হয় তাই নরম খাবার খাওয়া। এছাড়া ব্রণ প্রতিরোধে চা কম খাবেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত জাগবেন না। আর যাদের ব্রণ বেশি তারা প্রতিদিন শেভ না করে একদিন পরপর করাই ভালো। শেভ করার পাঁচ-দশ মিনিট আগে কোনো ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগানো যেতে পারে। শেভের আগে রেজারটি অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে উষ্ণ গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা প্রয়োজন। শেভিংয়ের সময় রেজার নিচের দিকে টানতে হবে।
কোনোভাবেই উল্টা টানা যাবে না। এতে ত্বকের চামড়ার ভীষণ ক্ষতি হয়। দেখা যায়, অনেকেরই শেভ করার পর ত্বকে র্যাশ হয়। সেজন্য হালকা কোনো শেভিং ক্রিম বা ফোম ব্যবহার করুন। লক্ষ্য রাখতে হবে র্যাশ হওয়ার প্রবণতা যাদের রয়েছে, তাদের আফটার শেভ লোশন এড়িয়ে চলা ভালো। আর শেভিংয়ের পরে কোনো অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বা অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম অবশ্যই লাগাতে হবে। সানবার্নে ত্বকের করণীয় গরমে ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ ও সানবার্ন হয়ে থাকে। ছেলেদের হাতে ও মুখে সানবার্ন বেশি দেখা যায়। তাই বাইরে যাওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন ত্বকে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিমের এসপিএফ ৪০-৫০ ব্যবহার দরকার। প্রতিদিনের ব্যবহার্য প্রডাক্ট যেন অতি বেগুনী রশ্মি প্রতিরোধক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম লাগানোর ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে আবার লাগিয়ে নিন। ১ ঘণ্টা পর সানস্ক্রিন লোশনের কার্যকারিতা থাকে না। যদি সম্ভব হয় আপনার প্রছন্দের সেলুনে সপ্তাহে একদিন আপনার ত্বক স্কারভিং করুন বা নিয়মিত ফেসিয়াল করুন।
ধরন অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিন যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা ঘুমের আগে ভালো মানের ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে স্ক্রিন টোনার বা ব্যবহার্য প্রডাক্ট লাগাতে পারেন। ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম দিতে পারেন ঘুমের আগে। এছাড়া দেখা গেছে ফলের রস ত্বক কোমল করার সঙ্গে সঙ্গে রোদে পোড়া ভাব দূর করে। ঘরে বসে যত্নের পাশাপাশি ত্বকের ধরন বুঝে মেডিকেল সেন্টারে কেমিকেল পিলিং, পিআরপি, ফেস পিআরপি, ও বিভিন্ন ডার্মাটো চিকিৎসা আপনার ত্বককে আরও সুন্দর ও লাবণ্যময় করতে পারে। এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন ডিপ ক্লিনজিং, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, হার্বাল, স্পেশাল হার্বাল, অ্যালোভেরা, ডায়মন্ড ও ফ্লাওয়ার ফেসিয়াল। আর ছেলেদের ত্বকের সৌন্দর্য অনেকটাই ফুটে উঠে নিয়মিত হেয়ার কাট করলে। এটি ব্যক্তিত্বেরও প্রকাশ।
লেখক, সহকারী অধ্যাপক চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কামাল হেয়ার এন্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭১১৪৪০৫৫৮