ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বাংলাদেশ কখনো চাপের কাছে মাথানত করেনি

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো কোনো চাপের কাছে মাথানত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, বরং জনগণের শক্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে। বুধবার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। সাময়িক নানা প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার আমাদের শিখাতে আসবে কারা যারা খুনিদের আশ্রয় দেয়, স্কুলে গুলি হয়, ছাত্রছাত্রী মারা যায়, রাস্তাঘাটে পুলিশ মানুষকে গলায় পাড়িয়ে মেরে ফেলে তারা কি মানবাধিকার শেখাবে? তাদের উস্কানিতে আমাদের দেশের কিছু মানুষের আস্ফালন হবে এটা ঠিক কিন্তু আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়েই চলবো, জনগণের শক্তি নিয়েই চলবো।  তিনি বলেন, যেনতেনভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়াও আমার লক্ষ্য নয়। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে থেকে গড়ে ওঠা প্রাচীন রাজনৈতিক দল, আমরা নির্বাচনে জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাসী। বাংলাদেশ কখনো চাপের কাছে মাথানত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।

 আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে তা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো এবং জনগণের শক্তি নিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষের সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি।

বিজ্ঞাপন
দেশের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সময়েই তা বলে দেবে। বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওদের (বিএনপি) জন্য কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ওদের পুঁজিটা কি? বিএনপি’র কি একটাও যোগ্য নেতা নেই যাকে চেয়ারম্যান করতে পারে?  সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মানটা ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের সকলের একটা পারসেপশন ছিল, একটা মানসিকতা ছিল যে, আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই যে একটা পরনির্ভরশীলতা, পরমুখাপেক্ষিতা- এটাই কিন্তু আমাদের মাঝে ছিল। একটা দৈন্যতা ছিল। বিশ্বব্যাংক যখন এই টাকাটা তুলে নিয়ে গেল, আমরা অন্তত সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। 

সেই অচলায়ন ভেঙে আমরা যে একটা আত্মমর্যাদাশীল জাতি, আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ার পর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তা বাস্তবায়নের কঠিন যাত্রার সঙ্গে থাকায় দেশের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারবো, সেটাই বলবো। যেটা বলবো, করবো। করে দেখাতে পারি, সেটা করেছি। এই জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।  আওয়ামী লীগকে গণমানুষের দল অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে করতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আমাদের অন্য দলগুলোর কি অবস্থা? তাদের জন্ম কোথায়? তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান একজন সামরিক শাসক। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যায় জড়িত। ১৫ই আগস্টের পর  খোন্দকার মোশ্‌তাক ক্ষমতায় এসে তাকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছিলেন। তারপর নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। নিজেই একাধারে সেনাপ্রধান, নিজেই একাধারে রাষ্ট্রপতি। 

পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মতো। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দিয়ে (জিয়াউর রহমান) ক্ষমতায় থাকলেন। সেই ভোট কেমন হয়েছিল, মানুষ জানে। সেই জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল থেকে নেতাদের নিয়ে। এক গাছের বাকল ও অন্য গাছের ছাল নিয়ে ক্ষমতায় বসে তৈরি করা দল হচ্ছে বিএনপি। জাতীয় পার্টিও একইভাবে গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরেক সামরিক শাসক (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) ক্ষমতায় বসে আরেকটি দল গঠন করলেন। জাতীয় পার্টি গঠন করা হলো। এভাবে মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেছে। কিন্তু আমি তো জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আমিই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সেটা করতে গিয়ে গ্রেনেড-বোমার মুখে পড়েছি। অনেক কষ্ট করে গণতন্ত্র চর্চা করতে পেরেছি এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন করতে পেরেছি।  ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন একেক সিটে দিনে তিনবার করে প্রার্থী পরিবর্তন করে। ঢাকা থেকে একজন ঠিক হয়। আবার লন্ডন থেকে আরেকজন। যে যত টাকা দিয়েছে, বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তার মাঝখানে নির্বাচন ছেড়ে চলে গেল।

 তিনি বলেন, যখন মাঝপথে কেউ নির্বাচন ছেড়ে চলে যায়, তখন তো মাঠ ফাঁকা। বাকিরা তখন যা খুশি, তা-ই করতে পারে। সেই দোষ তো আওয়ামী লীগের না। এখানে গণতন্ত্রের দোষ কোথায়? তবে বাংলাদেশ কোনো চাপের মুখে কখনো নতি স্বীকার করেনি, করবেও না।  আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি: পদ্মা সেতু নিয়ে যারা বিরোধিতা করেছে, সংবাদ সম্মেলনে তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের বিরোধিতার কারণে আমরা যে আত্মমর্যাদাশীল, আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। এতেই আমরা খুশি। এর বেশি নয়। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক বা বিরোধিতাকারীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা হলো, নিজের ভার ভালো না, গোয়ালার ঘি’র দোষ দিয়ে লাভ কি? বিশ্বব্যাংককে আমি কী দোষ  দেবো। তারা অর্থায়ন বন্ধ করলো কাদের প্ররোচনায়। সেটা তো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা। আর যারা বিভিন্ন কথা বলেছেন, তাদের কিছু কথা আমি উঠালাম। কথা আরও আছে। সেখানে আমার তো কিছু বলার দরকার নেই। এটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। আর না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বিরোধিতাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই এ জন্যই যে, এই ঘটনাটি ঘটেছিল বলেই আমরা সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। 

আজকে বাংলাদেশের সম্মানটি ফিরে এসেছে। আমাদের দেশের বিষয়ে সবার একটা পারসেপশন ছিল, একটা মানসিকতা ছিল যে, আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই যে পরনির্ভরশীলতা, পরমুখোপেক্ষিতা আমাদের মাঝে ছিল, দৈন্যতা ছিল। বিশ্বব্যাংক যখন টাকাটা তুলে নিয়ে গেল অন্তত আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সেই অচলায়তন ভেঙে আমরা যে আত্মমর্যাদাশীল, আমরা যে পারি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। বিরোধিতাকারীদের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দাওয়াত দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা যারা এগুলো বলেছে, বিরোধিতা করেছে। আমরা ওদের দাওয়াত দিচ্ছি, ওদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাবো পদ্মা সেতুতে।  পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও বাংলাদেশের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তারা ফেরত নিতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নেই। যে টাকাটা বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে, সেটা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। পদ্মা সেতু থেকে টাকা তারা বন্ধ করছে, কিন্তু ওই টাকা আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকা আমরা অন্যান্য প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাংক কোনো একটি দেশের একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে দেশটি চাইলে অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে- এমনটি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কিন্তু করা যায়। তা কিন্তু অনেকে জানেন না।

 কেন জানেন না জানি না। আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ, যারা কাজ করে, তারা কেন মাথায় রাখেন না। এরা (বিশ্বব্যাংক) দাতা নয়। আমরা তাদের থেকে ভিক্ষা নেই না। ব্যাংকের একটি অংশীদার হিসেবে আমরা লোন নেই এবং ?সুদসহ সেই লোন পরিশোধ করি। কাজেই আমার নামে, বাংলাদেশের নামে যে টাকা হবে, সেই টাকা তাকে (বিশ্বব্যাংক) দিতে হবে। জ্ঞানী-গুণীরা বলেন, টাকা বন্ধ হয়ে গেছে। কীসের জন্য? আমরা তো  লোন নিচ্ছি। যে লোন বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে সেই লোন কোনো না কোনোভাবে তাকে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই দাতা কথাটি বন্ধ করে দিলাম। আমি বলেছি, কীসের দাতা। এরা তো উন্নয়ন সহযোগী। গণমাধ্যমেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। আমরা কিন্তু কারও থেকে ভিক্ষা নেই না। আমরা ঋণ নেই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধও করি। এটুকু ঠিক, সুবিধাটা স্বল্প সুদে। আমাদের কেউ করুণা করে না, আমরা কারও করুণা ভিক্ষা নিইনি। তাই আমাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’  বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার পদ্মা সেতুতে: সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগত মানে কোনো আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। 

ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে উঠবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন. পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে ওই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিঙ্ক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পাড়ে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য পুনর্বাসিত এলাকাকে ‘পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুমুখী এই সেতুর উপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন।  সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি  যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।  

দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সহযোগিতার জন্যই আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ বছরই মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল উদ্বোধন করা হবে। ঢাকায় এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গৃহীত  মেগাপ্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজও যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে সেতু নয়: আয়োজন থাকলেও এই মুহূর্তে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না- এমন ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বড় একটা খরচ করেছি, আগে সেটার টাকা উঠুক, তারপর ওটা করবো। তিনি বলেন, আমরা সরকারে আসার পর বিভিন্ন সেতু নির্মাণ করে সারা দেশটাকেই সংযোগ করেছি। যে পদ্মা  সেতুটি  তৈরি করলাম, এটা চালু হওয়ার পর দ্বিতীয়টার জন্য আমাদের মোটামুটি আয়োজন আছে, তবুও আগে দেখতে হবে এটার প্রয়োজনীয়তাটা কতোটুকু। সেটা বিবেচনা করে এটা করা হবে। কাজেই এখনই এত বড় একটা কাজ শেষ করে আবার আরেকটা শুরু করতে পারবো না।  এবার সব থেকে ভয়াবহ বন্যা আমরা পেয়েছি: সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকি যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  থাকে, সে কথা তুলে ধরে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বন্যা শুরু হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকিটা আমাদের থাকে, পানিটা নেমে আসবে দক্ষিণাঞ্চলে। সে জন্য আগাম প্রস্তুতি আমাদের আছে। সিলেট অঞ্চলে এবারের ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরে সেখানে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতার বিস্তারিত বিবরণ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, ‘আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছিলাম, পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে, প্রয়োজনে রাস্তা যেন কেটে দেয়। এটাও আমাদের একটা শিক্ষা, কোন জায়গা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। কারণ আমাদের এখানে তো বন্যা আসবেই। বন্যার সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে। সেটা চিহ্নিত করে রাখতে বলেছি, সেখানে ব্রিজ, কালভার্ট এমনভাবে করে দেবো, যাতে পানি জমা থাকতে না পারে। ওই অঞ্চলে আরও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র করার পাশাপাশি বন্যার কথা মাথায় রেখে অবকাঠামো করার কথাও বলেন তিনি। অনেকদিন এরকম বন্যা হয়নি, আবার বন্যা আসলো। সেইভাবে অবকাঠামো  তৈরি করতে হবে। বন্যার পর কৃষক যেন কৃষিকাজ করতে পারে, সেজন্য বীজ, সারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  দুর্যোগ প্রশমনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও ত্রাণতৎপরতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১শে জুন ২০২২ পর্যন্ত আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর যেই কার্যক্রম, সেখানে সেনাবাহিনীর ১৭ ও ১৯ পদাতিক ডিভিশন তারা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেছে। প্রায় ১১ হাজার ৩৮০ জন এবং ২৩ হাজার ৪৪৬ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার ৩১৪ পরিবারকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা ও ডুবুরি মিলে ১০৬ জন, তারা সেখানে প্রায় ২০০ পরিবার উদ্ধার করেছে এবং ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে এবং ৩০ পরিবারকে চিকিৎসা দিয়েছে। 

বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিক মিলে প্রায় ১ হাজার ৬২০ জন, তারা ১ হাজার ২৫০ পরিবারকে উদ্ধার করেছে;  ৪ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে এবং পাঁচশ’ পরিবারকে চিকিৎসা দিয়েছে। কোস্টগার্ডের ৮০ জন একশ’ পরিবারকে উদ্ধার করেছে, ৬০০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে, ৩০টি পরিবারকে উন্নত চিকিৎসা দিয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে: সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদে জানিয়েছেন, দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ও অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আন্তরিক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। গতকাল  জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন। আইন অনুযায়ী কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ সম্পাদন করে। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সহায়তা করে থাকে। স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সরকার ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব।

 আশাকরি সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। একই প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, বর্তমান কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইনের অধীনে জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ দলীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠন, ইভিএম চালু, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন করেছে। তিনি জানান, ভোটার নিবন্ধন, ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ-আলোচনা করে থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর হতে আচরণ বিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড নিয়োগ করা হয়। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, মেগা প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ কোনো প্রভাবের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান সহায়তায় গ্রহণ করা হলেও এসব ঋণ নমনীয় প্রকৃতির। 

সুদের হার তুলনামূলক কম ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এবং গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। উন্নয়ন সংস্থার দেয়া ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। সরকারি দলের সদস্য মো. আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনবল সৃষ্টি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরিসহ সার্বিকভাবে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে চারটি প্রধান কৌশলগত দিক সম্বলিত স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে একটি সামগ্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কৌশলগুলো ছিল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা, যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হয়। 

তিনি বলেন, হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কৌশলের আলোকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ২৮টি আর্থিক ও প্রণোদনা প্যাকেজ চালু ও তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status