শেষের পাতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির নির্বাচনী রঙ-তামাশা
জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবারবরাবরের মতো এবারো সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচনায় জাতীয় পার্টি। আর এ আলোচনা কোন আসনে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয় তা নিয়েই। আর এটি হয়ে আসছে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার কারণে। যদিও এবার জেলায় জাতীয় পার্টির ছেড়াবেড়া দশা রওশন-কাদের বিভক্তিতে। সংগঠনও ভেঙে কয়েক টুকরো। এই অবস্থাতেও জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি জেলার ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া নিজে ২টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে রওশনের অনুসারী জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক জামাল রানা বিএনএম মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সদর আসনে। আরেকজন জিয়াউল হক মৃধা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমানে রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় এই নেতা এর আগে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে তার বদলে তার মেয়ের জামাই রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে মহাজোটের মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে শ্বশুর-জামাইয়ের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। জামাইকে বাদ দিয়ে মহাজোটের মনোনয়ন নিজে পেতে মহাসড়কে আন্দোলনে নামেন মৃধা। ব্যাপক আলোচিত হয় বিষয়টি। পরে রেজাউলকে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু লাঙ্গল প্রতীক পাননি মৃধা। তবে জেলায় রওশন অনুসারী নেতাদের মধ্যে নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছেন কাজী মামুনুর রশিদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে এর আগে দু’টি নির্বাচন করেন তিনি।
জিএম কাদের অনুসারীদের মধ্যে জেলার ৬টি আসনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা হচ্ছেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে মুহাম্মদ শাহনুল করিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মো. আবদুল হামিদ। রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩(সদর) আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে তারেক আহমেদ আদেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মো. মোবারক হোসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে মো. আমজাদ হোসেন।
ওদিকে জেলায় রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জামাল রানা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে। গত ৬ই ডিসেম্বর বিকালে হেলিকপ্টারেযোগে সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডায় তার নিজ গ্রামে এসে আলোচিত হন এ প্রার্থী। এ সময় তার সমর্থকরা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং ফুলের মালা পরিয়ে দেন। পরে নিজ বাড়িতে এলাকার লোকজনের সঙ্গে সভা করেন। হেলিকপ্টারে এসে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সেলিম শেখ তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন। এর আগে ১৯শে নভেম্বর রওশন এরশাদ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে জামাল রানাও তার সঙ্গী হন।
বিএনএম থেকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জামাল রানা বলেন-পরিস্থিতির কারণেই তিনি এখানে এসেছেন। জাতীয় পার্টিতে থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এখানে আমার যেমন এমপি হওয়ার সুযোগ নেই তেমনি যে ব্যক্তি বারবার লাঙ্গলটা নিচ্ছে তার দ্বারাও সম্ভব নয়। সে বারবারই লাঙ্গল বেচাকেনা করছে। ওর জন্যেই লাঙ্গল আনতে পারিনি। তাই ৩৫ বছর দল করার পর বাধ্য হয়েছি দল ছাড়তে।
এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন- এমনিতে স্বতন্ত্রই নির্বাচন করবো। তারপরও দেখা যাক কি হয়। স্বতন্ত্রের সঙ্গেও তো সরকারের আঁতাত হতে পারে। গতবারও তো হয়েছিল।
এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন- দলের সিদ্ধান্তেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এখন কোন আসনে আমাকে প্রতীক দেয়া হয় দেখি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি ১৬ বা ১৭ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি। ২০১৪ সালে তাকে মহাজোটের মনোনয়ন দেয়ার পর সেটি প্রশাসনিক ক্যু করা হয় বলেও জানান। তবে এবার যেকোনো প্যাটার্নেই হোক নির্বাচন করবেন জানিয়ে বলেন- আমার নির্বাচন করার সুযোগই হয়নি। একবার প্রশাসন আমাকে কেটে দিলো। আমি জোটের প্রার্থী ছিলাম। তারপরও ৩ বার আমার অফিস ভাঙা হয়েছে, বাড়ি ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টি এখন কয়েক ভাগে বিভক্ত। জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। আর সদস্য সচিব মো. নাসির। রওশনের জাতীয় পার্টির কমিটি জামাল রানা ও আবদুল্লাহ আল হেলালের নেতৃত্বে। এছাড়া রওশনের জাতীয় পার্টির আরেকটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পীরজাদা সৈয়দ জুবায়ের আহমেদ ও আবু কাউসার খান।
এডভোকেট আবদুল্লাহ আল হেলাল বলেন- রওশন অনুসারীদের জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। প্রথমে তাকেই আহ্বায়ক করা হয়। পরে জামাল রানাকে আহ্বায়ক করা হলে আমাকে সদস্য সচিব করা হয়। রওশনপন্থি জাতীয় পার্টি অর্থাৎ তাদের কোনো প্রার্থী নেই বলে জানান তিনি।
রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির আরেকটি অংশের নেতা আবু কাউসার খান বলেন- জিএম কাদেরের গ্রুপ থেকে যিনি মনোনয়ন নিয়েছেন তিনি এখানে ২০টি কেন্দ্রেও এজেন্ট দিতে পারবেন না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির আরেক নেতা বলেন- দলের লেজেগোবরে অবস্থা এখানে। জাতীয় পার্টির নিজস্ব শক্তি বা যোগ্যতায় এখানে কারও এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে জোটের দিকেই চেয়ে থাকতে হয়।
নির্বাচন হবে জাতীয় পাটির প্রার্থীর নিজ গ্রামে।এখানে ই লাঙল পাশ করবে কিনা আল্লাহ জানে।বাকি কেন্দ্রের অবস্হা তো আরো খারাপ।