শরীর ও মন
বাচ্চার গলায় হঠাৎ কিছু আটকে গেলে
ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবারছোট শিশুদের বস্তু মুখে দেয়া একটি সহজাত প্রবৃত্তি। তাদেরকে সারাক্ষণ যেমন চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয়, তেমনিভাবে সামনে বসে খেলতে থাকা অবস্থায়ও তারা খেলনা মুখে দিতে পারে। কখনও তারা সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এ সময় হাতের নাগালে পাওয়া যেকোনো ছোট জিনিস মুখে দিতে পারে। তাই শিশুকে নজরে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সামগ্রি নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো ছোট খেলনা দেয়া যাবে না। ভেঙে যাওয়া খেলনা যথাসময়ে সরিয়ে ফেলতে হবে। যেসব খেলনা মুখে দিলে ভিজে ছিঁড়ে যেতে পারে কিংবা বিষাক্ত যেমন- পুরাতন ব্যাটারি বা পয়সা এসব অবশ্যই খেলার মধ্যে থাকা যাবে না। এছাড়া ছোট বাবুদের হাতে নাগালের মধ্যে বাড়ির জিনিসপত্র রাখা যাবে না। সেটি করা সম্ভব না হলে অন্ততপক্ষে বেশিরভাগ জায়গা বাবুর ঘুরে বেড়ানোর জন্য পছন্দসই করে রেখে বাড়ির জিনিসপত্র অল্প জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিতে হবে। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে। এত কিছুর পরও যদি শিশু কিছু গিলে ফেলেছে বলে মনে হয়, তাহলে প্রথমেই মনে করতে হবে সেটি কি ধরনের জিনিস। ধারালো কিছু কিংবা গলায় শক্তভাবে আটকে যাবে এমন হলে কিংবা শিশুর মধ্যে যদি শ্বাসকষ্টের কোনো চিহ্ন থাকে বা শিশুকে যদি বেশি অস্থির বা নেতিয়ে পড়া মনে হয় তাহলে একদম দেরি করা যাবে না। দ্রুত শিশু হাসপাতালে নিতে হবে।
বাচ্চার গলায় কিছু আটকে গেলে তাৎক্ষণিক করণীয়
বাচ্চা একদম ছোট বা ২ থেকে ৩ বছরের হলে বাচ্চাকে উল্টে নিজের বাম হাতের উপর শোয়ান। পিঠের দিকটা একটু উঁচু হয়ে থাকবে এবং মুখের দিকটা নিচে। এবার আপনার ডান হাতের তালু দিয়ে পিঠের ওপরের অংশে কাঁধের কাছে আস্তে আস্তে চাপড় মারুন। এতে মুখ দিয়ে গলায় আটকে যাওয়া খাবার বেরিয়ে আসবে।
যেভাবে বুঝা যায় গলায় কিছু আটকালো
প্রথমত ঘটনার ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। কোনোকিছু খেয়ে ফেললো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকতে হবে।
প্রতিকার
যদি গিলে ফেলা বস্তুটি আপনি খালি চোখে দেখেন এবং মনে করছেন বের করতে পারবেন, তাহলে হাত বা সহায়ক কিছু দিয়ে আপনি তা বের করার চেষ্টা করুন। যদি মনে হয় তা বের করা কঠিন, বা বের করতে গিয়ে বাচ্চা কষ্ট পাচ্ছে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। যদি বাচ্চা কাশি দেয় তাহলে তাকে আরও জোরে কাশি দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুণ। অনেক সময় এটা কাজে দেয়। যদি বাচ্চা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বা অধিক কষ্ট অনুভব করে তাহলে দেরি না করে কোনো হাসপতালের জরুরি বিভাগে নিন। নবজাতক বা শক্ত খাবারে অভ্যস্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিতে থাকুন। দমবন্ধ অবস্থায় সিরিয়াস না হলে এই পদ্ধতি ভালো কাজ করে। তবে বাচ্চার দম বন্ধ অবস্থা বেশ জোরালো বা সিরিয়াস হলে (যেমন বাচ্চা শ্বাস নেয়া বা সাড়া না দেওয়া) নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
# বাচ্চা আপনার হাতের উপর উল্টো করে নিন। যাতে তার মাথা নিচের দিকে আপনার হাতের মুঠোয় থাকে, আর তার দেহ আপনার কনুউয়ে থাকে।
# চেয়ারে বসে আপনার হাতকে আপনার উরুর উপর বা কোন বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন। এরপর বাচ্চাকে তার পিঠে মোটামুটি জোরে ৫ বার চাপড় দিন যা হাতের শক্তিকে পিঠ থেকে মাথার দিকে প্রবাহিত করবে। কতটা জোরে দিবেন এটা আপনি নিজে ঠিক করুন। এতে যদি বাচ্চার শ্বাসনালী পরিষ্কার না হয় তাহলে বাচ্চা কাঁদবে না শব্দও করবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে হাতে উল্টো করে নিন। তার বুকের হাড় যেখানে ডি আকৃতিতে চামড়ার সঙ্গে মিশেছে সেখানে ৫ বার আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন।
প্রতিরোধ
এই বিপদ থেকে বাচ্চা রক্ষার কার্যকরী উপায় হলো- এসব ক্ষুদ্র জিনিস বাচ্চার হাতের নাগাল থেকে দূরে রাখা।
গলায় খাবার আটকে যাওয়া অনেক সময় এত মারাত্মক হয় যে, এখান থেকে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে কোনো জটিলতা ছাড়াই শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই আমাদের সকলের উচিত ছোটশিশুকে সতর্ক নজরদারিতে বড় করে তোলা।
লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার, শাহ্ মখদুম, রাজশাহী। (২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল: ০১৯৮৪-১৪৯০৪৯