নির্বাচিত কলাম
সময় অসময়
শিক্ষক প্রশিক্ষণে ‘প্যাঁক প্যাঁক’ আচরণ এবং কিছু জিজ্ঞাসা
রেজানুর রহমান
৬ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবারএকটি বিনীত প্রশ্ন। কর্মমুখী শিক্ষাই সময়ের দাবি। কাজেই সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য আমাদের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী কি আদৌ প্রস্তুত? বছরের পর বছর ধরে দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে তার পরিবর্তন আনতে হলে যারা শেখাবেন অর্থাৎ সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সূত্রের মতে, এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কথাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিজের অযোগ্যতাকে আড়াল করার জন্য ট্রলকারীদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন
একথা তো সত্য যুগ পাল্টেছে। মুখস্থ বিদ্যার দিন শেষ। কর্মমুখী শিক্ষাই এখন জরুরি। এজন্য শিক্ষকদেরকে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়াটাও সময়ের দাবি। কারণ শিক্ষকরাই তো নতুন শিক্ষাক্রমকে জনপ্রিয় করে তুলবেন।
প্রসঙ্গটা ব্যক্তিগত। তবুও প্রাসঙ্গিক হবে বলেই উল্লেখ করছি। আমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। দেশ-বিদেশে তাঁর অনেক ছাত্রছাত্রী ছড়িয়ে আছেন। তারা এখনো আমার বাবাকে ‘খেলার স্যার’ বলে ডাকেন। একবার জাপানের টোকিওতে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা। ১৯৯৬ সাল। জাপান সরকারের আমন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত সংবাদকর্মী মিলে আমরা ১৩ জন তরুণ-তরুণী জাপান সরকারের ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলাম। ১৩টি দেশের প্রায় ৩ শতাধিক তরুণ-তরুণী জাপানের ‘নিপ্পন মারু’ নামে একটি বিলাসবহুল জাহাজে চড়ে কখনো নদী কখনো সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ৬টি দেশ ভ্রমণ করেছি। বিস্ময়কর এই ভ্রমণ নিয়ে ‘সাগর জলের অতিথি’ নামে একটি বইও লিখেছি আমি। দৈনিক ইত্তেফাকের ‘তরুণকণ্ঠ’ পাতায় ধারাবাহিক ভাবে এই ভ্রমণ কাহিনী ছাপা হয়েছিল। অনেকেরই হয়তো মনে আছে সে কথা।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমরা ঢাকা থেকে আকাশ পথে প্রথমে জাপান গিয়েছিলাম। সেখানেই ৭ দিনের নানা কর্মসূচি শেষে সবাইকে ‘নিপ্পন মারু’ নামের জাহাজটিতে তোলা হয়। জাহাজে ওঠার আগে টোকিওতে এক অনুষ্ঠানে একজন বাঙালির সঙ্গে দেখা হয়। টোকিওতেই থাকেন। বাঙালি অধ্যাপক। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে কথা বলার জন্য এগিয়ে এলেন। একথা, সেকথা। বাংলাদেশের কোথায় আমার স্থায়ী ঠিকানা জানতে চাইলেন। সৈয়দপুরের নাম বললাম। তিনি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলেন। জানতে চাইলেন- সৈয়দপুরের কোথায় আপনার বাড়ি? বললাম সৈয়দপুর শহরে... সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইলেন- আপনার বাবা কী করেন? বাবার নাম বললাম। আমার বাবা একজন শিক্ষক, সে কথাও জানিয়ে দিলাম। এবার আনন্দে চিৎকার দিলেন তিনি। এতক্ষণ ‘আপনি’ সম্বোধন করছিলেন। এবার ‘তুমি’ সম্বোধন করে বললেন- তুমি আমাদের খেলার স্যারের ছেলে? আমার নাম রাশেদ। লম্বু রাশেদ বললেই স্যার আমাকে চিনবেন। আমাদের একটা ফুটবল টিম ছিল। আমি ছিলাম গোলকিপার। খেলার স্যার আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে তাঁর তুলনা হয় না।
একজন শিক্ষকের নাম খেলার স্যার হয় কী করে? তার মানে তিনি কী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শুধুই খেলাধুলা শেখাতেন? আসলে তা নয়। তিনি সৈয়দপুরে সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তখনকার দিনে ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সন্তানেরাই বেশি ভিড় করতো। রীতিমতো ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে স্কুলটিতে ভর্তি হতে হতো। মনে পড়ে একবার মাত্র ১০০টি আসনের জন্য (দুটি সেকশন ছিল প্রতিটি ক্লাসে) ৯ শত শিশু ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এই স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সবার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী। বিশেষ করে খেলার স্যারের আকর্ষণে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলটিতে ভর্তি করাতে আসতেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো স্কুলটির প্রধান শিক্ষকও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকার মতো নিয়মিত ক্লাস নিতেন।
খেলার স্যার কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এবার সে কথাই বলি। তখনকার দিনে সরকারি-বেসরকারি সব স্কুলেই ক্লাস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক ছিল। এজন্য প্রতিটি ক্লাস থেকে ছাত্রছাত্রীদের বাছাই করে জাতীয় সংগীত বিষয়ে রিহার্সেল করাতেন। সপ্তাহের কোন দিন কোন ক্লাসের ছেলেমেয়েরা জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবে তা ঠিক করা থাকতো। ক্লাস শুরুর আগে অ্যাসেম্বলিতে শারীরিক কসরত প্রদর্শন করতে হতো। যাকে বলা হতো পিটি, প্যারেড। নেতৃত্ব দিতেন খেলার স্যার। ছাত্রছাত্রীদেরকে নিজের ক্লাস নিজেদের পরিষ্কার রাখতে হতো। এজন্য প্রতিটি ক্লাসে ক্লাস ক্যাপটেন থাকতো। চুল বড় না রাখা, বড় না হতেই আঙ্গুলের নখ কেটে ফেলা, হাতের লেখা সুন্দর করার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের আদর দিয়ে শেখাতেন খেলার স্যার। একটি প্রাথমিক স্কুলে ফুটবল টিম গঠন করা হয়েছিল। সাবর্ডিনেট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট হতেও দেখেছি। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীদেরকে দারুণ আগ্রহী করে তুলেছিলেন খেলার স্যার। গান, আবৃত্তি, বক্তৃতা সহ নানা বিষয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিতেন খেলার স্যার। দেশ স্বাধীনের আগের কথা বলছি। ওই সময়েই কর্মমুখী শিক্ষার প্রতিই বেশি জোর দিয়েছিলেন খেলার স্যার। নিজে নেচে গেয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে নানা বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতেন। শুধুমাত্র খেলার স্যারের প্রতি ভরসা করে অনেক বাবা-মা তাদের ‘অস্থির’ সন্তানকে ওই স্কুলে ভর্তি করাতেন। একটা ড্রামা ক্লাবও গঠন করেছিলেন সাবর্ডিনেট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দিতে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কর্মমুখী শিক্ষাই এখন যুগের দাবি। পানিপথের যুদ্ধ কতো সালে অনুষ্ঠিত হয়, বাদশাহ আকবর কতো সালে মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন- এটা জানার চেয়ে বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় কী! স্বউদ্যোগে কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই সময়ের দাবি। সেজন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধন্যবাদ পেতেই পারে। তবে কথা আছে। কর্মমুখী শিক্ষা বলতে আমরা কী বুঝি? সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সে সব ভিডিও কীভাবে কর্মমুখী শিক্ষাকে উদ্বুদ্ধ করবে জানি না। একটি ভিডিওতে দেখলাম একজন সম্মানিত শিক্ষক ‘প্যাঁক প্যাঁক’ শব্দ উচ্চারণ করে নাচছেন। তার সামনে উপস্থিত ২০/২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা তাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের চোখ-মুখ দেখে মনে হলো তারা একটু যেন দ্বিধাগ্রস্ত। একজন বয়স্ক শিক্ষকের চোখ-মুখ দেখে মনে হলো তিনি বেশ বিরক্ত। একই সঙ্গে ফেসবুকে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে। একজন লিখেছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের আর বেশি দেরি নাই। অন্য একটি ভিডিওতে দেখলাম হিজড়া সেজেছেন একজন পুরুষ। বলা হচ্ছে এটাও নাকি শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ। আরেকটি ভিডিওতে দেখলাম জংলী নাচ নাচছেন কয়েকজন যুবক-যুবতী। এটাও নাকি শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়েছে ‘হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক’ জাতীয় যে ভিডিওগুলো দেখে মানুষ ট্রল করছেন তা শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয়। সবই বানানো ভিডিও। সর্তকীকরণ এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে- এমন ভিডিও আপলোড করে বলছেন এসব নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ। অথচ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন শিক্ষাক্রমে সকল ধর্মণ্ডবর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক পরিবেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে...’
কথা স্পষ্ট। ধরা যাক যে ভিডিওগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয়। যদি তাই হয় তাহলে যার আইডি থেকে ভিডিওগুলো ছড়ানো হচ্ছে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতাটা কোথায়?
এবার একটি বিনীত প্রশ্ন। কর্মমুখী শিক্ষাই সময়ের দাবি। কাজেই সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য আমাদের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী কি আদৌ প্রস্তুত? বছরের পর বছর ধরে দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে তার পরিবর্তন আনতে হলে যারা শেখাবেন অর্থাৎ সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সূত্রের মতে, এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কথাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিজের অযোগ্যতাকে আড়াল করার জন্য ট্রলকারীদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
একথা তো সত্য যুগ পাল্টেছে। মুখস্থ বিদ্যার দিন শেষ। কর্মমুখী শিক্ষাই এখন জরুরি। এজন্য শিক্ষকদেরকে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়াটাও সময়ের দাবি। কারণ শিক্ষকরাই তো নতুন শিক্ষাক্রমকে জনপ্রিয় করে তুলবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই একটি ভিডিওতে দেখলাম বাবা তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে প্রশ্ন করছেন- মা স্কুলে তোমরা কি শুধু রান্নাবান্না ও গান বাজনাই শিখছো? মেয়ে প্রতিবাদের সুরে বললো- তোমার ধারণা ভুল বাবা। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা আমার খুউব পছন্দ। তুমি কি জানো আমাদের এই ঘরে কতোটুকু কাঠ লেগেছে। কতোগুলো ইট লেগেছে, আমি হিসাব করে বলে দিতে পারবো। স্যারদের পরামর্শে আমি সায়েন্স ফিকশন নিয়ে একটা লেখা লিখেছি। আমার একজন টিচার বলেছেন আমি নাকি ভবিষ্যতে ভালো লেখক হতে পারবো। অন্য একজন টিচার বলেছেন- আমি নাকি ভালো বিতার্কিক হতে পারবো। আমার আরেকজন টিচার বলেছেন, ভবিষ্যতে আমি নাকি ভালো ম্যাথমেটিশিয়ান হবো। আরেকজন বলেছেন আমার মধ্যে নাকি ভালো বিজনেস ওম্যান হওয়ার যোগ্যতা আছে... বাবা আমাকে এর আগে কেউ এভাবে বলেননি।
মেয়েটির কথা শুনে মনে হলো তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যোগ্য শিক্ষাগুরুর পাশাপাশি তার প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছে। বর্তমান যুগে সম্মানিত শিক্ষকদের এই যোগ্যতাটাই বোধ করি জরুরি।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।
লেখাটি চমৎকার। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর এই লেখাতে রয়েছে। লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।
স্যার, আমি একজন মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, ৫ দিনের প্রশিক্ষণের মধ্যে প্রথম ২ দিন শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য থাকলেও ৩য় দিন থেকে শিক্ষকরা এ কারিকুলামকে প্রসংশা করতে থাকেন এবং সর্বশেষ এক বাক্যে স্বীকার করেন এটি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে। এমনকি অনেক শিক্ষক আনন্দের সাথে আমার কাছে ফোন করে NCF সম্পর্কে বিভিন্ন সময় ধারণাও নিয়েছেন। তবে আমাদের শিক্ষকদেরকে নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজন। তাহলে নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে এ বিরুপ মন্তব্য ইনশাআল্লাহ আর থাকবে না।
কার জন্য কি প্রযোজ্য, কতটুকু প্রযোজ্য, কোনোরকম গবেষণা ছাড়া হঠাৎ জগাখিচুড়ি বাধিয়ে দেয়া দু:খজনক। তবে, কর্মমুখী শিক্ষায় আমাদের আত্মনিয়োগ করতেই হবে। তার আগে কারিকুলাম কারজন্য কতটুকু প্রয়োজন নির্ধারণ করা জরুরি।
বিষয় টা একে অপরের ত্রুটি না খুঁজে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো - আমাদের শিক্ষর্থীদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে গড়ে তোলা সেটি না করতে পারলে তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে পিছিয়ে পড়বে। শিক্ষর্থীদের প্রযুক্তিগত ও বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষা প্রদান করে তাদের যুগ-উপযোগী করে তুলতে হবে পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায় ও গুরুত্ব দিতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম অবশ্যই ভাল,কিন্তু বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন,অন্তত গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষকদের যে অবস্থা তাতে সব জগাখিচুরি হবার সম্ভাবনা বেশি,বললেন কর্মমুখী শিক্ষা,যদি তাই হয় তবে এত নিম্ন মানের জিনিস যেমন কাগজের নৌকা,ফুল,ঘর, রান্না বান্না মাধ্যমিক পর্যায়ে শিখিয়ে কি অর্জন করতে চায়, যা আমরা ছোটবেলায় সহজেই শিখে গেছি,যদি শিখাতে চান,তবে, ফ্যান,মোটর,কম্পিউটার, মোবাইল খুলে পার্ট বাই পার্ট শিখান,পানি থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্যিজেন লবন থেকে সডিয়াম, ক্লরিন আলাদা করে দেখিয়ে শিখান,এটাই হবে কর্মমুখী শিক্ষা,কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘুরে ফিরে নাচ,গান আর ফালতু সব উপকরণ এর কাজ, একটা উদাহরণ, যদি পাশের ধনি লোকটা যদি সকালে নাস্তা করে ডিম,কলা,আপেল দিয়ে তাই বলে সব লোক কি পারবে এসব দিয়ে নাস্তা করতে,হ্যা পারবে যদি মিনিমাম একটা উপার্জন থাকে,এখন আমরাও এ শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নিব,যদি মিনিমাম কাম্যযোগ্যতা যদি প্রতিটা স্কুলে থাকে,আর লটারির মাধ্যমে এদেশে স্কুল ভর্তি মানে ভাল স্টুডেন্ট দের ভবিষ্যৎ নষ্ট।
অবশ্যই কর্মমুখী শিক্ষা এবং একটিভিটি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই জন্য প্রথমে দরকার সঠিক শিক্ষক তৈরি করা নৈতিক এবং যোগ্য শিক্ষক। কোচিং এবং প্রাইভেট বাতিল হোক আমিও চাই। তাই বলে ধর্ম ও ইতিহাস বিকৃতি যৌন শুড়শুড়ি মুলক পাঠদান এগুলো রেক্টিফাই করতে হবে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রাকটিকাল শিক্ষা থাকতে হবে।
আপনি কি শিক্ষককে দুষছেন, শিক্ষকগণ কি সব জান্তা নাক।
সর্বনাশা শিক্ষা কার্যক্রমের পক্ষে দালালী না করলেও পারতেন
নতুন কারিকুলামের সমালোচকরা কি জানেন প্রশিক্ষনটা কোথায় হয়েছে, কবে হয়েছে কাদের উদ্যোগে হয়েছে বা এর লক্ষ্য কী ছিলো? বিষয়টি নিয়ে কি আয়োজক, উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষনার্থী এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কারো কথা হয়েছে? যেসব দল বা গোষ্ঠী নতুন কারিকুলাম নিয়ে কথা বলছে তাদের কি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী বা ছায়া শিক্ষানীতি আছে? নতুন কারিকুলামের ঠিক কোন কোন জায়গায় ক্ষত আছে অথবা এরচেয়ে উন্নত কারিকুলাম কীভাবে তৈরি হতে পারে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা আছে?