শেষের পাতা
ইমিগ্রেশনে অফলোড সিলে ভোগান্তি
মরিয়ম চম্পা
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারমুসকান চৌধুরী। উত্তরার একটি কলেজের শিক্ষার্থী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও আদি নিবাস কলকাতার উত্তর-চব্বিশ পরগণায়। সেখানে তার নানার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন। সম্প্রতি কলেজে দীর্ঘ ছুটি পাওয়ায় ভারতে নানা বাড়ি বেড়াতে যাবেন। ভিসা পেয়েছেন। বিপত্তি বাধে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে গিয়ে। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বিমানের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। বিমানের ডিপার্চার (ছাড়া) শিডিউলের এক ঘণ্টা আগে গিয়ে উপস্থিত হই। ভেতরে প্রবেশ করে ইমিগ্রেশনে গিয়ে বাধে বিপত্তি।
সম্প্রতি ব্যবসার কাজে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছলে ইমিগ্রেশনে থাকা এক কর্মকর্তার প্রশ্নের ভুল উত্তর দেয়া এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী নামের বানান লিখতে না পারায় ইমিগ্রেশন অফিসার সন্দেহজনক মনে করে পাসপোর্ট অফলোড করে দেয়। জাপানি এক নাগরিক বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। ২০ দিন পর দেশে ফিরে যাওয়ার সময় তাকে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশে কোথায় অবস্থান করেন তিনি। জাপানি নাগরিক তার অবস্থান করা ঠিকানা সম্পর্কে বলতে না পারায় তার পাসপোর্ট অফলোড করা হয়। সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভারতগামী ১৬টি বাংলাদেশি অফলোড পাসপোর্ট জব্দ করে। বেনাপোল রেলস্টেশন ও বেনাপোল স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের অফলোড পাসপোর্টগুলো জব্দ করা হয়। এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অফলোড হয়। পাসপোর্টগুলো বিভিন্ন কারণে অফলোড করা হয়েছে। এরপরও এসব যাত্রী কৌশলে রুট পরিবর্তন করে ভারত প্রবেশের চেষ্টা করে। ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ধরা পড়লে এরপর ওই সব পাসপোর্ট জব্দ করে ঢাকা এসবি সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে ব্যক্তির পাসপোর্ট অফলোড হতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে ইমিগ্রেশন অফিসার যদি মনে করে স্টুডেন্ট পড়াশোনা নয় বিদেশে যাচ্ছেন কাজের উদ্দেশ্যে সেক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া অনেকেই ভ্রমণের নাম করে ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে গিয়ে অনেক সময় থেকে যান। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা যদি এমন সন্দেহ করেন সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফলোড করা হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তাহলে তাকে এসবি অফিসে যেতে হবে। এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে অফলোড উঠানোর জন্য আবেদন করতে হবে। যদি অফলোড না উঠানো হয় সেক্ষেত্রে তাকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে ই-ভিসা করে পুনরায় ফ্লাইট নিয়ে যেতে পারবেন। নাম না প্রকাশের শর্তে ইমিগ্রেশন ও এসবি সূত্র জানায়, সাধারণত ভিসা জটিলতা বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ না থাকলে পাসপোর্ট অফলোড করা হয় না। শীর্ষ সন্ত্রাসী, মোস্ট ওয়ান্টেড, রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত, সন্দেহজনক আচরণ, মিথ্যা তথ্য এসব ক্ষেত্রে অফলোড করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে যে সকল থানায় অভিযোগ থাকে সেখান থেকে আগেই ইমিগ্রেশন এবং এসবিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়। পরে ওই ব্যক্তি দেশ ত্যাগ করতে চাইলে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আগে পাসপোর্ট অফলোড করে তাকে আটকে দেয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা অভিযোগের ভিত্তিতে পাসপোর্ট অফলোড করা হয়। এর বাইরে কারোর পাসপোর্ট অফলোড করার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট কারণের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন থেকে এটা করা হয়। এবং অফলোড প্রক্রিয়া সমাধানে এসবি কাজ করে। এ বিষয়ে বিস্তারিত এসবি সদর দপ্তর বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এই সব অতি উৎসাহী কর্মকর্তা দেশের শত্রু।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ একটি রীতিমত আতংক।