শরীর ও মন
ফিস্টুলা পরিত্রাণে করণীয়
অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান
২২ জুন ২০২২, বুধবারজনাব জাহিদুল হক আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় বসবাস করেন, বর্তমানে সেখানকার নাগরিকও তিনি। হঠাৎ তার পায়ুপথে তীব্র ব্যথা শুরু হয় এবং এক জায়গায় ফুলে ওঠা অনুভব করেন। পায়ুপথে ফুলে ওঠা জায়গা থেকে ধীরে ধীরে পুঁজ ও রক্ত যাওয়া শুরু হয়। হঠাৎই এমনটি হওয়ার ফলে তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। চিকিৎসক তাকে দেখে ও কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বললেন, তার ফিস্টুলা ও পেরিএনাল এবসেস (Fistula in ano & Perianal abscess) হয়েছে। এটি জরুরি অপারেশন করতে হবে। তিনি রাজি হলে চিকিৎসক অপারেশন করেন। অপারেশনের পর ফোলা এবং ব্যথা কমলো কিন্তু পুঁজ পড়া কমলো না। রোগী আবার চিকিৎসকের কাছে গেলেন।
এমনটি শুনে জনাব জাহিদুল ভয় পেয়ে গেলেন। আর আমেরিকাতে অপারেশনে বিশাল খরচ। বারবার অপারেশন করে এত খরচ কীভাবে করবেন? পরক্ষণে তার স্ত্রীর পরামর্শে বাকি চিকিৎসাটি বাংলাদেশে করবেন বলে স্থির করলেন। স্ত্রী বললো বাংলাদেশে একজন চিকিৎসক আছেন। যিনি জটিল ফিস্টুলার চিকিৎসা আধুনিক লেজার পদ্ধতির সাহায্যে একবার অপারেশন করেই ভালো করেন বলে জেনেছেন। যাতে কোনো কাটাছেঁড়াও লাগে না (আমেরিকায় কেটে অপারেশন করার কথা বলা হয়েছিল)। তিনি বাংলাদেশে আসলেন। আমার এখানে লেজারের সাহায্যে অপারেশন করলেন এবং একবারেই ভালো হয়ে গেলেন। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার আমেরিকাতে চলে গেলেন। দীর্ঘ পরিসরে কেস স্টাডিটি বলার একটিই উদ্দেশ্য বর্তমানে বাংলাদেশেও উন্নতমানের চিকিৎসা হচ্ছে, বিশেষ করে কোলোরেক্টাল রোগসমূহের। আর এ ধরনের জটিল ফিস্টুলার লেজারের সাহায্যে যথাযথভাবে অপারেশন করলে একবারে ভালো হওয়া সম্ভব।
আর দেখা যায়, অনেকেরই পূর্বে দুই-তিনবার জটিল ফিস্টুলার অপারেশন হয়েছে কিন্তু ভালো হয়নি, কিন্তু লেজারের সাহায্যে অপারেশন করে ভালো হচ্ছে- এমন অনেক উদাহরণ আছে। আর এই পদ্ধতি বা লেজার পদ্ধতিতে অপারেশনের বাড়তি সুবিধা হলো অনেকে কাটাছেঁড়ার কারণে অপারেশন করতে চান না, এতে রোগও ভালো হয় না। কিন্তু লেজারে কোনো কাটাছেঁড়া লাগে না। লেজারের সাহায্যে ফিস্টুলা চিকিৎসাকে বলা হয় ফাইলাক (FILAC) অর্থাৎ (Fistula Laser Closer) এই পদ্ধতিতে একটি চিকন তারের মতো ফাইবার ফিস্টুলার নালীতে প্রবেশ করিয়ে লেজার প্রয়োগ করে ফিস্টুলা বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ফিস্টুলার নালী যদি একাধিক থাকে তাহলে একাধিক নালীরও চিকিৎসা করা সম্ভব। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি অপারেশন করতে হয়।
প্রত্যেকটি করা হয় লেজারের সাহায্যে। ফলে কোনো কাটাছেঁড়া নেই। রোগী একদিনেই বাড়িতে চলে যান। এই চিকিৎসায় সাফল্যের হার দেখা যায় ১০০% বা শতভাগ। আরও বাড়তি সুবিধা হলো কোনো ক্ষত থাকে না, সেলাই থাকে না এমন কী রক্তপাতও হয় না। আবার রোগীকে অপারেশনের পর ড্রেসিং করতে হয় না (যেটা অন্যান্য অপারেশনে লাগে)। সাধারণ ফিস্টুলা অপারেশনে রোগীর ভালো হতে ১/২ মাস সময় লাগে। অপারেশন পরবর্তী জটিলতাও অনেক। কিন্তু লেজার ফিস্টুলা চিকিৎসায় এমন নেই। তাই বলা চলে লেজার ফিস্টুলার চিকিৎসা একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা। পাঠকের আরও সুবিধার জন্য জনাব জাহিদুল সাহেবের সাক্ষাৎকারের ভিডিও আমাদের ফেসবুক পেজে এবং ইউটিউব চ্যানেলে দেখে নিতে পারেন।
লেখক: (সাবেক অধ্যাপক) এইচ এম শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পথিকৃৎ কলোরেক্টাল ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন, বাংলাদেশ। চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ (শ্যামলী শাখা), মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর রোড (কিডনি হাসপাতালের বিপরীতে)। হেল্পলাইন: ০১৮ ৬৫ ৫৫ ৫৫ ১১, ০১৮ ৬৫ ৫৫ ৫৫ ০০, ফেসবুক পেজ: Prof. Dr. SMA Erfan ইউটিউব চ্যানেল: Professor Dr. SMA Erfan.