শরীর ও মন
সবার জন্য চাই ব্রণমুক্ত ত্বক
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২৮ এপ্রিল ২০২২, বৃহস্পতিবারকিশোর বয়সে ব্রণ একটি সাধারণ বিষয়। ব্রণ বয়ঃসন্ধিকালের ত্বকের প্রধান সমস্যা বটে। তবে বয়ঃসন্ধিকাল ছাড়াও বিভিন্ন বয়সেও নারী ও পুরুষ উভয়েরই ব্রণের সমস্যা দেখা যায়। যদি ত্বকে বেশি ব্রণ হয়, পুঁজ বা ক্ষত হয়, ইনফেকশন হয় তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে।
ব্রণ হওয়ার জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকাল ছাড়াও হরমোন ক্ষরণের তারতম্য বা অভাব, পারিবারিক বা বংশগত কারণ, জীবাণুর সংক্রমণ, ত্বকের প্রতি অবিচার বা অযত্ন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক দুশ্চিন্তা, তৈলাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ইত্যাদি। আবার কিছু রোগের কারণেও হতে পারে, যেমন- pco`s। অযাচিতভাবে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারও ব্রণ হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ব্রণ সাধারণত মুখমণ্ডল, বুক ও পিঠের উপরের অংশে দেখা যায়। ব্রণ সাধারণত লালচে দানা বা ফুসকুড়ি নিয়ে উঠে আবার কখনো পুঁজযুক্ত দানাও হতে পারে। কারণ জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হয়, যেমন-হরমোন (টেসটসটেরন FSH, LH, PROLACTIN). PCO`S নির্ণয় করার ULTRASONOGRAM OF ABDOMEN করা হয়।
কারণ ও করণীয়:
ব্রণ হলো ত্বকের সমস্যা এবং এটি ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে। তাই ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ত্বকে একদম ধুলাবালি লাগাতে দেয়া যাবে না। ত্বকে ধুলোবালি জমার ফলে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং এই কারণে দেখা দিতে পারে ব্রণ।
ত্বকে পানিশূন্যতা
প্রচণ্ড গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে ছাড়াও পানি বেরিয়ে যায় বিভিন্নভাবে। এতে করে পানি কমে যায়। শরীরে পানি কমে যাওয়া ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই গরমে বাহির থেকে এসে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
সঠিক পরিমাণে ঘুম না হওয়া অনেক রোগের কারণ। ব্রণও হওয়াও এর জন্য দায়ী। সাধারণত দেখা যায় ঘুমের সময়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ বা তৈরির মতো জটিল বিষয়গুলো ঘটতে থাকে শরীরে। না ঘুমালে, কম বা অনিয়মিত ঘুমালে ব্রণ প্রতিরোধকারী হরমোন তৈরিতে বাধা সমস্যা হয় এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে ব্রণসহ অন্য কোনো রোগের সমস্যা এড়াতেও চাই পর্যাপ্ত ঘুম।
বয়ঃসন্ধিকাল
ব্রণ সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে এলে প্রথমেই বয়ঃসন্ধিকাল এর কথাটি বিবেচনা করা হয়। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে থাকে। তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। অনেক সময় তাদের মাঝে অবসাদ তৈরি হয়, দুশ্চিন্তা হয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। এসব কারণে শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক অবস্থা বাধাগ্রস্ত হয় বা হরমোনের অভাব দেখা দেয়। যা ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। বেশি করে ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুড খাওয়া, কোমল পানীয় বা কোলা জাতীয় পানীয় বেশি খাওয়া হলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দিবে। এসব খাবার আবার ঠিকমতো হজমও হয় না। খাবার হজম না হলে পেট পরিষ্কার থাকে না, দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ফলে ব্রণ বেড়ে যায় আবার অনেক রোগের কারণ এই খাবারগুলো।
চিকিৎসা:
ব্রণের তীব্রতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা আছে। যেমন-মুখে ও ত্বকে লাগানোর অ্যান্টিবায়োটিক ইরাইথ্রমাইসিন, ক্লিনডামাইসিন, রেটিনয়িক এসিড ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে সর্বাধুনিক কিছু ডার্মাটো চিকিৎসা। ব্রণের ক্ষত ও দাগ দূর করার জন্য কেমিকেল পিলিং চিকিৎসা। আর যাদের ব্রণের জন্য মুখের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে বা সমস্ত মুখে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে তাদের চিন্তা করার কারণ নেই। তাদের একনেস্কার চিকিৎসার মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যেই সমাধান করা হয় এবং ব্রণ ত্বক থেকে চলে যায়।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, বিটিআই সেন্টার গ্রান্ড (২য় তলা),গ্রীনরোড, ফার্মগেট, ঢাকা
প্রয়োজনে-০১৭১১৪৪০৫৫৮