প্রথম পাতা
প্রসঙ্গ বাহার
সিইসি’র ইউটার্ন
স্টাফ রিপোর্টার
২১ জুন ২০২২, মঙ্গলবারকুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় স্থানীয় এমপি আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার চিঠি দিয়ে আলোচনায় এসেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন। যদিও এমপি তা আমলে নেননি। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। দুই নির্বাচন কমিশনার সমালোচনা করেছিলেন বাহারের। তবে বাহার বলেছিলেন, ইসির চিঠিই এখতিয়ার বহির্ভূত। এতো কিছুর পর এসে ইউটার্ন করলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। নিজের অবস্থান বদলে তিনি জানিয়েছেন, এমপি বাহার কোনো নির্দেশনা ভঙ্গ করেননি। কুমিল্লার নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই সিইসি এই বক্তব্য দিলেন। তার এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাওয়া আগের নির্বাচন কমিশনগুলোর রেখে যাওয়া পুরনো জুতোতেই পা ঢুকিয়েছে নতুন কমিশন।
গতকাল নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী উনি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তাকে এলাকা ত্যাগ করার আদেশ করিনি। তাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, সেই চিঠি আমাদের কাছে আছে। কিন্তু চারদিকে ছড়িয়ে গেল আদেশ করার পরও তিনি প্রতিপালন করতে পারলেন না। এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। নির্বাচন কমিশন কাউকে এলাকা ত্যাগ করার আদেশ দিতে পারে না। তিনি বলেন, এর আগে বলা হয়েছিল একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গিয়েছিলেন তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ত্যাগ করাতে পেরেছিলাম। সেটা ভিন্ন কথা। সেই মন্ত্রী ছিলেন বহিরাগত। আর বাহাউদ্দিন সাহেবের তো ওটা স্থায়ী ঠিকানা। একজন মানুষ তার বাড়িতে থাকতে পারবে না তা তো নয়। হয়তো উনি ডিস্টার্ব করছেন বা কৌশলে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেজন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা আইনকানুন দেখে চিঠি দিয়েছিলাম।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাহাউদ্দিন সাহেব কোনো আইন ভঙ্গ করেননি। অভিযোগ আসছিল তিনি গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাই তাকে অনুরোধ করেছি। তবে উনি চলে গেলে হয়তো ভালো হতো।
কুমিল্লার ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি, কোনো বিপর্যয় দেখিনি। সিসিটিভির মাধ্যমে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কিন্তু একটা টেলিফোনে ফলাফল পাল্টে গেল-এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে একটা ফোনে ফল পাল্টে যায়, এটা একেবারে অসম্ভব। একটা বা দুইটা টেলিফোন আমি নিজেও করেছিলাম। আমাদের রিটার্নিং অফিসার আমাকে খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় ফোন করে বললেন, আমি বিপদে পড়েছি। আমি সেখানে প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি ভাবলাম তাকে মারধর করা হচ্ছে।
আমি এরপর ডিসি-এসপিকে ফোন করেছিলাম। তারা তখন জানালেন তাৎক্ষণিক বিষয়টি দেখছেন। এরপর রিটার্নিং অফিসারকে বললাম, সমস্যা হবে না।
পরে তিনি জানালেন, পুলিশ এসেছে মানুষকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল ঘটনাটা মাত্র ১৫ মিনিট ছিল। কোনোভাবেই ২০ মিনিটের বেশি দীর্ঘ হয়নি। এরপর তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে ফলাফল ঘোষণা করলেন, সেটি আমরা দেখেছি। সিইসি বলেন, একটা ফোনে পাল্টে গেল, এটা একজন বলার পর হাজার মানুষ বললো। এটা আমাদের দেশের কালচার, এটা গুজব। মেশিনের ফল অথবা হাতের রেজাল্ট আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছি। এমন ঘটনা ঘটেনি।
সিইসি বলেন, ফলাফলের সময় মিছিলের বিষয়টি হয়েছে মানুষের আবেগ উচ্ছ্বাসের কারণে। এটা আমাদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত কিন্তু তাদের কাছে কাক্সিক্ষত। তারা উচ্ছ্বাসের কারণেই এটা করেছেন। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার সময় টয়লেটে গেছেন বলে যেটি বলা হচ্ছে, তিনি ন্যাচারাল কলিং হলে যেতেই পারেন। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আপনারাও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন পাঁচ মিনিটে ফল পাল্টানো সম্ভব না।
সিসিটিভিতে কোনো ভোট ডাকাত ধরা পড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সিসিটিভির মাধ্যমে নির্বাচনের দিন ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে গোপন কক্ষে একাধিক মানুষের উপস্থিতি সিসিটিভিতে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।
সিইসি বলেন, মানুষ আমাদের চেয়ে টকশোকে বেশি বিশ্বাস করে। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার কুমিল্লায় দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় কমিশনার বলেননি আমরা দেখে নেবো। তিনি বলেছেন ওয়েট অ্যান্ড সি। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন আমাদেরও সময় আসবে।