ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দুর্ধর্ষ কিলার

স্টাফ রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবারmzamin

আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন মোক্তার হোসেন ও সাহিদা দম্পতি। তাদের সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারের সদস্যদের শারীরিক কিছু সমস্যা নিয়ে বেশকিছু দিন ধরে ভুগছিলেন মোক্তার। অনেক চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। পরে স্থানীয় কবিরাজের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তার পরিবার। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছিলো না। আশুলিয়ার এক কবিরাজের দোকানে মোক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় সাগর আলীর। সাগর তাকে জানায় তার স্ত্রী ইশিতা ভালো কবিরাজ। মোক্তার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক সমস্যার সমাধান করা যাবে। কিন্তু তাতে খরচ পড়বে ৯০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন
সাগরের কথায় রাজি হন মোক্তার। সাগর ও তার স্ত্রী ওষুধ নিয়ে মোক্তারের বাসায় গিয়ে তাদের কৌশলে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে। তারপর অর্থের লোভে বাসায় তল্লাশি চালায়। কিন্তু বাসায় চাহিদামতো কিছু না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মোক্তারকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একইভাবে তার স্ত্রী ও সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করে বাসায় রেখে চলে যায়। 

ঘটনাটি ঘটে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে। ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। পরে ফ্ল্যাট থেকে মোক্তার, তার স্ত্রী সাহিদা ও তাদের ১২ বছরের শিশু সন্তান মেহেদীর অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর রোববার আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। মামলায় ছায়া তদন্ত করে ক্লুলেস ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন করে র‌্যাব। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে সাগর ও ইশিতা দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে গাজীপুরের শফীপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। গ্রেপ্তার সাগর টাঙ্গাইলের মোবারক ওরফে মোগবর আলীর ছেলে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লুট করা আংটি। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গত ২৮শে সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় মোক্তারকে পাশের একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিতে দেখে সিরিয়াল কিলার সাগর। সাগর জানতে পারে, মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফলাফল পাননি। সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আলাপচারিতায় ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি তার আগ্রহ ও আস্থার কথা জানতে পারে। মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশকিছু শারীরিক সমস্যার কথাও সাগরকে জানান। সাগর জানায়, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দেবে। এমন আশ্বাস দিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে ৯০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। সাগর ও তার স্ত্রী পরদিন ২৯শে সেপ্টেম্বর সকালে ওষুধ সহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত হয়। যোগাযোগের জন্য মোক্তারকে সাগর নিজের নম্বর না দিয়ে এক আত্মীয়ের মোবাইল নম্বর দেয়। বাসায় গিয়ে সাগর স্ত্রী ঈশিতাকে পুরো ঘটনা ও পরিকল্পনার কথা জানায়। বিপুল অঙ্কের অর্থ পাওয়ার আশায় রাজি হয় সাগরের স্ত্রী। তারা পরিকল্পনা করে, ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের অর্থ সহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে এক বক্স ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে।

র‌্যাব বলছে, ভুক্তভোগী গৃহকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের কবিরাজি চিকিৎসার নামে ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। মোক্তার, তার স্ত্রী ও ছেলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাঁধে, পরে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাঁধে। পরে তারা মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বঁটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করে সাগর। পরে অন্য কক্ষে গিয়ে ছেলে ও স্ত্রীকে একই বঁটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। পালানোর আগে তারা মোক্তারের হাতে থাকা আংটি খুলে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর  তারা ভিন্ন পথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি যায় এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে আত্মগোপনে থাকাকালেই গাজীপুরের শফীপুর এলাকা থেকে তাদের গত রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। 

২০২০ সালে একই কায়দায় টাঙ্গাইলে চার হত্যা করেছে সাগর: গ্রেপ্তার সাগর সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, সাগর মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতো। ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যায় অভিযুক্ত সাগর। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাগর র‌্যাব-১২ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করে। ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় কিছুদিন অবস্থান করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিক সহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে অবস্থান করে সুযোগ বুঝে চুরি ও ছিনতাই করতো। একটি জেলায় বেশকিছু দিন অবস্থানের পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জেলায় আশ্রয় নিতো সাগর। এ ছাড়াও সে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে জুলাই মাসে গিয়ে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে এবং আগস্ট মাসে দেশে ফিরে কুমিল্লায় কিছুদিন অবস্থান করে।

 

পাঠকের মতামত

এখনও কি জামিন দেওয়া হবে ? সোজা দ্রুত বিচার আদালতে তার ও তার স্ত্রীর ফাঁসি আশা করছি । সমাজের নীরিহ লোক কে বাঁচানোর জন্য দ্রুত ফাঁসি দরকার।

Kazi
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:০০ অপরাহ্ন

বিচারকদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবসতা করা হোক এদের জন্য খুনিরা ছাড়া পেয়ে আরো খুন করে।আমার আগের মন্তব্য ছাপান নি মনে রাখবেন বিচারকের বিচার এই দুনিয়ায় না পেলেও আল্লাহর বিচারে এদের ধংশ অনিবার্য -মন্তব্য ছাপাতে পত্রিকা ভয় পায় কেন বুঝলাম না।

Musa Amin
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status