বিনোদন
নেত্রকোনায় শিক্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন ইত্যাদি
স্টাফ রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার
প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার গত ২৯ তারিখ প্রচারিত নেত্রকোনায় ধারণকৃত ইত্যাদিতে বলেছেন, ইত্যাদিতে যে বক্তব্যগুলো দেয়া হয় তা সবাই ধারণ করতে পারে কিনা সন্দেহ। এজন্য তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও তুলে ধরেছেন। সুতরাং এ কথাটি থেকেই ইত্যাদির মান সম্পর্কেও বোঝা যায়। আর এজন্যই ইত্যাদি গত সাড়ে তিন যুগ ধরেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনুষ্ঠান হিসেবে দেশের মিডিয়া জগতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইত্যাদি যে কতোটা জনপ্রিয় তা সর্বশেষ নেত্রকোনায় ধারণ করা অনুষ্ঠানের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। রাতের আঁধারে বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দলে দলে মানুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে, গাছে ঝুলে, কেউবা লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখেছেন। বিজয়পুরের সাদা মাটির পাহাড়ের সামনে বিশাল মাঠটি ছিল লোকে লোকারণ্য। পুরো এলাকাজুড়েই একটা উৎসবের আমেজ।
দোকানদাররা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে দোকান সাজিয়ে বসেছেন। নেত্রকোনার এই এলাকার নৈসর্গিক দৃশ্য ধারণের সুবিধার জন্য গোধূলিলগ্নে ধারণ করা হয়েছে ইত্যাদি। যে কারণে সাদা মাটির পাহাড়, লেক, আশেপাশের সবুজের সমারোহ সবই দেখা গেছে। নেত্রকোনার বিজয়পুরে অনুষ্ঠান ধারণ করা হলেও হানিফ সংকেত তার টিম নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন নেত্রকোনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে রয়েছে হাওরের সৌন্দর্য, রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য-আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে অবস্থিত অসাধারণ স্থাপনা শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বাউল সাধক উকিল মুন্সির স্মৃতিকেন্দ্র, রোয়াইল বাড়ি দুর্গ, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও কবি নির্মলেন্দু গুণের পৈতৃক ভিটা এবং বিভিন্ন উপজেলার হাওরের সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে এবারের ইত্যাদিতে। অসাধারণ লেগেছে অধ্যাপক যতীন সরকারের সাক্ষাৎকার। শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়ে তার মূল্যায়ণ, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার উপদেশ অত্যন্ত সময়োপযোগী। ভালো লেগেছে দুই জনপ্রিয় পালাকার কুদ্দুস বয়াতি ও ইসলাম উদ্দিন পালাকারের ভিন্নধর্মী পরিবেশনা। রেল যাত্রীদের নিরাপদ রেলযাত্রা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একদল তরুণ রেলপথে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে ৯টি জেলার বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ ও শিশু-কিশোরদের রেলে পাথর নিক্ষেপের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছে। যা প্রশংসনীয়। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে সাজা ভোগ করা অসহায় মানুষদের মুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের অমলেন্দু কুমার দাশ। এবারের ইত্যাদিতে সবশেষ আইটেম ছিল অমলেন্দু কুমার দাশের এই মানবিক কর্মকাণ্ডের ওপর।
পরশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, তথ্যগত ভুল, ভাষা সমস্যা ও যোগাযোগের অভাবে এই সব অসহায় বন্দি বছরের পর বছর সাজা ভোগ করার পরও কারাভোগ করেছেন। অমলেন্দু কুমার দাশ নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে দিনরাত পরিশ্রম করে এই অসহায় বন্দিদের মুক্তিতে সহায়তা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০০ বন্দিকে মুক্ত করেছেন। তবে এই কাজগুলো তিনি করেছেন নীরবে-নিভৃতে। ইত্যাদিতে অমলেন্দু কুমার দাশের এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবেদনটি দেখে অনেকেরই চোখ ভিজে গেছে। এবারের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিটি নাট্যাংশই ছিল শিক্ষণীয়, বাস্তবধর্মী ও সচেতনতামূলক।
এভাবেই হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, উদ্যোগ-উচ্ছ্বাস সবকিছু মিলিয়ে এবারের ইত্যাদিও ছিল ব্যতিক্রমী। হানিফ সংকেত ও কেয়া কসমেটিকসকে অনেক অভিনন্দন।