শরীর ও মন
মস্তিষ্কের এক বিশেষ ধরনের স্ট্রোক
ডা. মো. রকিবুল ইসলাম (রকিব)
১৫ জুন ২০২২, বুধবারমস্তিষ্কের এক বিশেষ ধরনের রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক হয়ে থাকে। মেডিকেল পরিভাষায় এই স্ট্রোক-এর নাম হলো ‘সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ’। এর কারণে ব্রেইন ও এর অ্যারাকনওয়েড নামক আবরণের মাঝে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এই জাতীয় স্ট্রোক করলে বিলম্ব না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
কারণ: ব্রেইন-এর রক্তনালীতে অনেক সময় ফোসকা বা ব্লিস্টার জাতীয় রোগ হয়, যাকে অ্যানিউরিজম বলে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অ্যানিউরিজম ফেটে এ ধরনের রক্তপাত বা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়া মাথায় আঘাত এটির একটি বড় কারণ।
প্রাথমিক লক্ষণ ১. হঠাৎ বজ্রাঘাতের মত তীব্র মাথা মাথাব্যথা, ২. বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া, ৩. খিঁচুনি ৪. জ্ঞানের মাত্রা কমে ৫. ঘাড় ব্যথা ৬.দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ৭. একই বা একটি জিনিসকে দু’টি দেখা। মনে রাখতে হবে সাব- অ্যারাকনয়েড হেমোরেজের উপসর্গগুলো হঠাৎ করেই হয়। আর এ রকম যদি ঘটে তাহলে বিলম্ব না করে রোগীকে জরুরি হাসপাতালে নিতে হবে। ঝুঁকির কারণগুলো: এই রোগটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা মস্তিষ্কে আঘাত উভয় কারণে ঘটতে পারে। যদি এটি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তাহলে এটি মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণে হতে পারে।
সাধারণত এই রোগটি নারীদের মাঝে বেশি দেখা যায় আবার, অনেকের জন্মগতভাবেই থাকে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপান, অ্যালকোহল আসক্তি রোগটির ঝুঁকি বাড়ায়। আবার রক্ত পাতলা করার ওষুধের ব্যবহার বা ধমনি বিকৃতি থেকে রক্তপাতের কারণেও হেমোরেজ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়: সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে দ্রুত রক্তক্ষরণ শনাক্ত করা হয়। এছাড়া এনজিওগ্রাম (ব্রেইন এনজিওগ্রাম) করলে রক্তক্ষরণের কারণ (অ্যানিউরিজম শনাক্ত) জানা যায় এবং কী চিকিৎসা করতে হবে তা নির্ণয় করা যায়। মনে রাখতে হবে দ্রুততম সময়ে মাথার সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়। ট্রান্সস্ক্যানিয়াল আলট্রাসাউন্ড মস্তিষ্কের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে।
চিকিৎসা প্রাথমিক চিকিৎসা: দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। দেরি বা বিলম্ব করলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এই জন্য উল্লেখিত লক্ষণগুলো বা কোনো একটি দেখা দিলে দ্রুত রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হবে।
নির্দিষ্ট চিকিৎসা: দুইটি অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যানিউরিজম বন্ধ করে দেওয়া হয় যেন ভবিষ্যতে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণ না হতে পারে।
এই চিকিৎসাগুলো হলো- (১) মাথার খুলি কেটে অ্যানিউরিজম ক্লিপিং সার্জারি (অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপ-এর সাহায্যে এ অপারেশন হয়ে থাকে)। (২) মাথার খুলি না কেটে উরুতে কুঁচকির রক্তনালীর মাধ্যমে সর্বাধুনিক অপারেশন অ্যানিউরিজম কয়েলিং (ক্যাথল্যাবে এ অপারেশন হয়ে থাকে)। মনে রাখতে হবে দেশে এখন সর্বোচ্চ সফলতার সঙ্গে অ্যানিউরিজম ক্লিপিং ও কয়েলিং অপারেশন হচ্ছে, যা দশ বছর আগেও ছিল কল্পনাতীত।
লেখক: ব্রেইন, স্পাইন ও স্ট্রোক সার্জন, সহকারী অধ্যাপক. নিউরোসার্জারি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। অ্যাপয়েন্টমেন্ট: ০১৭৮৯-৯৫৫৫৫৫