শরীর ও মন
অটিজম শিশুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবারগত কয়েক বছর যাবৎ সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চলছে তাতে পূর্বের চেয়ে সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এখনো অনেক পরিবার শিশুর অটিজমের জন্য মাকে দোষারোপ করে। সন্তানের অটিজমের কারণে মায়ের দুঃখের শেষ নেই; তাদের প্রতিপালন করতে কষ্টের সীমা নেই। এরপর যদি মাকে বলা হয় তার কারণেই সন্তানের অটিজম হয়েছে, তাহলে মায়ের মানসিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। এখানেই শেষ নয়, কোনো কোনো পরিবার থেকে বলা হয় সন্তানকে সুস্থ করে না আনতে পারলে মাকে ডির্ভোস দেয়া হবে। একজন নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসক হিসেবে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা শুনতে হয়।
অটিজম চিকিৎসার বাস্তব চিত্র:
অটিজম শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে অনেক অভিভাবকই ভুলের মধ্যে রয়েছেন। তারা সন্তানের উন্নতির আশায় বিভিন্ন চিকিৎসা এবং থেরাপির পেছনে বছরের পর বছর পার করেছেন। অবশেষে ফলাফল না পেয়ে আমাদের নিকট আসেন। ততদিনে শিশুর বয়স বেড়ে যাচ্ছে, সময় চলে যাচ্ছে। পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অভিভাবকগণ বিশেষ করে মায়েরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটাই বাস্তবতা। নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার নিয়ে আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমনটিই পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতনতা প্রয়োজন।
মায়েদের করণীয়:
আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত শুনে ভেঙে পড়বেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শান্তভাবে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা করুন। শিশুর সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। এ ধরনের শিশুর অবিভাবকদের সঙ্গে পরিচয় থাকলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এদের মধ্যে যদি কারও সন্তানের উন্নতি হয়েছে বলে জানতে পারেন তাহলে কোথা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন? কোথায় লেখাপড়া করে? খাবারের রুটিন কি? এ সকল তথ্যসমূহ জেনে নিন। যদি কারও সন্তান হাইপার থাকে তাহলে তার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। বহুবিধ অসুবিধার মধ্যেও আপনার সন্তানের চিকিৎসার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
চিকিৎসা:
আমাদের চিকিৎসায় শিশুর বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কন্ট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হয়। এ ছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরোডেভেলপমেন্টাল’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি ভিটামিন বি-১২ ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাদ্য ও কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অটিজম শিশুদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
লেখক: পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০;