খেলা
প্রযুক্তির নিদর্শন দেখিয়ে হাংজু এশিয়াডের বর্ণিল উদ্বোধন
সামন হোসেন, হাংজু (চীন) থেকে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার
কয়েকদিন ধরেই অঝোরে কাঁদছে হাংজুর আকাশ। তবে উৎসবের উপলক্ষে এতটুকু ভাটা পড়েনি। আগ্রহের কমতি হয়নি দর্শকদের। সবুজায়নের পরিচ্ছন্ন নগরীতে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর কৃষ্টিকালচার তুলে ধরে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেছে আয়োজকরা। যেখানে থ্রিডি স্ক্রিনে প্রযুক্তির নতুন নিদর্শনগুলো বিশ্বকে দেখিয়েছে চীন। সবুজের মিশেলে, নাচেগানে ১৯তম এশিয়ান গেমসের বর্ণিল উদ্বোধন হয়েছে হাংজুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এবার ছিল না আতশবাজি; যা এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে প্রথম। তবে থ্রিডি লাইটে এমনভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যাতে মনে হবে আতশবাজি হচ্ছে। ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের জমকালো উদ্বোধনের শুরুটা করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
৪৫ দেশের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ক্রীড়াবিদের এই আয়োজনে মাঠের লড়াই শুরু হয়েছে পাঁচদিন আগে। ফুটবল ক্রিকেটের লড়াইটা জমজমাটই হচ্ছে। তবে এসব ছাপিয়ে গেছে গতকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চীনের ঝিঝিয়াং প্রদেশের এই শহরের জনসংখ্যা মাত্র আট মিলিয়ন। প্রযুক্তি নির্ভর বিরাট এই শহরের সবকিছুতেই পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট। ১৯তম এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়েও তাদের পরিকল্পনা যে ব্যাপক, তার প্রমাণ মিলেছে স্টেডিয়ামে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে। যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেই অলিম্পিক স্টেডিয়ামটির ধারণা ক্ষমতা ৮০ হাজার। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে স্টেডিয়াম ভর্তি হয়ে যায়। অটোমেটিক সিকিউরিটি চেকের মাধ্যমে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করানো হয় দর্শকদের। উদ্বোধনের পুরো আয়োজনটাই হয়েছে ডিজিটাল। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের স্টেডিয়ামে প্রবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ১১৫ মিনিট ব্যপ্তির এই অনুষ্ঠান। শুরুতে মনমুন্ধকর ডিসপ্লেতে মোহ বেষ্টিত করে ফেলে আয়োজকরা। প্রথমে চীনের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ী সাঁতারু কিন হাইয়াং। মার্চপাস্টে অংশ নেয় চীনের ক্রীড়াবিদরা। এরপর একে একে মার্চপাস্টে অংশ নেয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্রবেশ করেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু নিয়াজ মোরশেদ ও সাফ জয়ী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তাদের সঙ্গে ছিলেন এ পর্যন্ত হাংজুতে আসা বাংলাদেশের দশ ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদরা। মার্চপাস্টে আর্টিস্টিকস নাচের সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে গেমসের থিম সং ‘লাভ উই শেয়ার’। এর আগেও দুই বার এশিয়ান গেমসের আয়োজন করেছে চীন। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে এবং ২০১০ সালে গুয়াংজুতে হয়েছিল এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় এই আসর। অলিম্পিকের আসরও আয়োজন করেছে দেশটি। তাদের আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছে এবার। বিশেষ করে মার্চপাস্টে দলগুলোর সঙ্গে যে ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে তা আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রতিটি গ্যালারির সামনে ভেসে উঠেছে ডিজিটাল এনিমেশন, সামনের গ্যালারির দর্শকরা সেটা দেখলেও পেছন থেকে তা আবার দেখা যায়নি। মার্চপাস্টে আলাদা নজর কেড়েছে ভারতের পোশাক। সামুরাইয়ের দেশ জাপান মার্চপাস্টে এসেছে সাদা-মাটা ভাবে। স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে ফেরা উত্তর কোরিয়া এখানেও নিজেদের আলাদা করেছে তাদের আচার আরচণ দিয়ে। যথারীতি নিজেদের ট্রেডিশনাল পোশাক কাবলি কোটি পরে মার্চপাস্টে আসে পাকিস্তান। সবার শেষে মার্চপাস্টে আসে চীন। স্বাগতিকদের আগমনে মুখরিত হয় গ্যালারি। তাদের বিদায়ের মধ্যদিয়ে একঘণ্টার মার্চপাস্ট শেষ হয়। এরপর অলিম্পিক কমিটি অব এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রাজা রানধীর সিং, অলিম্পিক কমিটি অব চায়নার প্রেসিডেন্ট জাং জিধানকে নিয়ে গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরই শুরু হয় মুল ধামাকা। প্রযুক্তির ছোয়ায় নানা আয়োজনে দর্শকদের মোহ বেষ্টিত করে রাখে আয়োজকরা। সবেচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল তিন মাসকট নিয়ে তৈরি করা অ্যাক্রোবেট শো। ডিসপ্লের মাধ্যমে হাংজুর ঐতিহ্য তুলে ধরার পদ্ধতিটাও মুন্ধ করেছে দর্শকদের। আধুনিক প্রযুক্তিতে চাইনিজরা যে বিশ্বসেরা সেটা আবার প্রমাণ হয়েছে হাংজু এশিয়াডের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে।