ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সময় অসময়

একজন ভিসির ফর্মুলা এবং একজন ক্রিকেটারের নাজুক মন্তব্য কতোটা প্রাসঙ্গিক?

রেজানুর রহমান
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবারmzamin

লেখার শুরুতে রুচির দুর্ভিক্ষের কথা তুলেছিলাম। আবারো সেই প্রসঙ্গই তুলতে চাই। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার ও একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ প্রসঙ্গটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দু’জনই তরুণ প্রজন্মের আইডল। হতে চাই তার মতো? কার মতো? তানজিমের মতো। ধরা যাক তানজিম বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে অনেক সম্মানিত করলো, কিন্তু তার বিশ্বাসের এতটুকু পরিবর্তন হলো না। তাহলে বাংলাদেশ কী আদৌ লাভবান হবে? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক যদি তালেবানি কালচারকে সমর্থন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান সেটা কি সমর্থনযোগ্য? এর জবাব কী?


রুচির দুর্ভিক্ষের কথা তুলেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। এই নিয়ে কতো যে কথা হলো। কথা এখনো চলছে। সব কথাই ভালো কথা নয়।

বিজ্ঞাপন
মামুনুর রশীদের পক্ষে যারা কথা বলেছেন তারা সংখ্যায় অনেক। কিন্তু তারা সংগঠিত নন। বিপক্ষে যারা কথা বলেছেন, এখনো বলেই যাচ্ছেন তারা সংখ্যায় অল্প কিন্তু বেশ সংগঠিত। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তির উপস্থিতি, প্রভাব তেমন একটা চোখে পড়ছে না। বরং সংখ্যা লঘিষ্ঠদের দৌড়-ঝাঁপটাই যেন একটু বেশি। সম্প্রতি এক আড্ডায় প্রসঙ্গ তুললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। বললেন, কষ্ট হচ্ছে কথাটা বলতে। কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছি। তবুও বলি। আমরা যারা নিজেদেরকে সুশীল সমাজের লোক বলি তারা মোটেই সংগঠিত নই। এটা বড়ই বিব্রতকর। অসম্মানজনক। 

কবি, লেখকদের মধ্যে বিভাজন। আদর্শগত দ্বন্দ্ব তো  আছেই। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত... আবার দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও অমিল। ক’ খ’কে পছন্দ করে না। গ’-এর অহংকারটা একটু বেশি। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও সিনিয়র- জুনিয়রের দ্বন্দ্ব প্রকট। আমাদের শোবিজে ‘সাইজ করা’ বলে একটা শব্দ আছে। জুনিয়র কেউ সহজেই সিনিয়রদের কাছে পাত্তা পায় না। জনপ্রিয় শিল্পীর সঙ্গে জুনিয়র শিল্পী অভিনয় করার সময় অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। জুনিয়র শিল্পী ভালো করছে বুঝতে পারলে জনপ্রিয় শিল্পীদের কেউ কেউ ‘সাইজ’ করার অদৃশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিশেষ করে ক্রিকেটে ‘সাইজ করা’ ষড়যন্ত্র অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। ফলে কার্যত কেউ কাউকে মানে না। যার যা খুশি তাই বলে। 
তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব। এশিয়া কাপে তার দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারণে বাংলাদেশের কাছে ভারত হেরে যায়। ফলে তানজিমকে নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় ক্রিকেট বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তানজিমের এই সাফল্যের সুন্দর সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া তারই একটি স্ট্যাটাস তাকে মুহূর্তের মধ্যে চরম বিতর্কিত করে তোলে। তানজিম লিখেছেন, স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না। স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না। স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়। স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়। স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়। স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়। 

গণতান্ত্রিক সমাজে কথা বলার অধিকার সবারই থাকা উচিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তানজিমের ফেসবুক মন্তব্যের বিরোধিতা করা উচিত নয়। কিন্তু তিনি যখন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন তখন তার এই মন্তব্য আলোচনার দাবি রাখে। 
তানজিমের প্রসঙ্গ নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে তখন বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢেলেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি তালেবানি কালচারকে সমর্থন করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, এখানে (শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়) ওপেন কালচার ছিল। ছেলেমেয়েরা যা খুশি তাই করতো। কেউ কিছু বলতে পারতো না। কারণ তাদের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমি বলেছি রাত ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। তারা এর নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার। তালেবানি কালচার নিয়ে আমি খুব গৌরবান্বিত। এটা নিয়েই থাকতে চাই। ওপেন কালচার চাই না। 

ভিসি মহোদয়ের কথার শেষ লাইনটির প্রতি গুরুত্ব দিতে চাই। তিনি বলেছেন ওপেন কালচার চাই না। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ওপেন কালচারকে সমর্থন করে না। কিন্তু তালেবানি কালচারকেও সমর্থন করে না বাংলাদেশ। অনেকে হয়তো বলবেন ভিসি মহোদয় কথার কথা বলেছেন। কিন্তু এটা কথার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য যখন প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করবেন তখন সেটা কথার কথা থাকে না। তার কথা বেদ বাক্যে পরিণত হয়। ওপেন কালচার আর তালেবানি কালচার এক জিনিস নয়। তালেবানি কালচারে নারী শিক্ষা অনেকটাই নিষিদ্ধ। তার মানে উপাচার্য মহোদয় কি নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে? ক্রিকেটার তানজিমের কথার সঙ্গে তার কথার কোথায় যেন মিল খুঁজে পাচ্ছি। দু’জনই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। তার কথার অনেক মূল্য আছে। তানজিম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য। শুধু তার মুখের কথা নয় তার আচার আচরণ ব্যক্তিগত বিশ্বাসও দেশের অসংখ্য তরুণকে প্রভাবিত করে, করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি যদি তালেবানি কালচারকে পছন্দ করেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন তরুণ খেলোয়াড় যদি নারীকে ঘরের মধ্যেই বন্দি রাখতে চান তাহলে কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য?

লেখার শুরুতে রুচির দুর্ভিক্ষের কথা তুলেছিলাম। আবারো সেই প্রসঙ্গই তুলতে চাই। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার ও একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ প্রসঙ্গটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দু’জনই তরুণ প্রজন্মের আইডল। হতে চাই তার মতো? কার মতো? তানজিমের মতো। ধরা যাক তানজিম বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে অনেক সম্মানিত করলো, কিন্তু তার বিশ্বাসের এতটুকু পরিবর্তন হলো না। তাহলে বাংলাদেশ কী আদৌ লাভবান হবে? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক যদি তালেবানি কালচারকে সমর্থন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান সেটা কি সমর্থনযোগ্য? এর জবাব কী? প্রিয় পাঠক আওয়াজ তুলুন... 

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো  

পাঠকের মতামত

ফরিদ উদ্দিন স্যারের বক্তব্যকে কেন আপনারা খারাপ চোখে দেখছেন বুঝতে পারছিনা। উনার একটা ভালো নিয়মকে ছাত্ররা নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার, তাই স্যার বলেছেন আমি আমার তালেবানি কালচার নিয়েই থাকতে চাই। এটা নিয়ে সুশীল নামক একটা পক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে। আপনারা সুশীল নামক পক্ষটা সব সময় মতের স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দেন। ক্রিকেটার তানজিম সাকিব তার একান্ত নিজস্ব মত সে ভেসবুকে শেয়ার করেছে। তার নিজের ধর্মীয় অনুশাসন সে তুলে ধরেছে। এতে আপনাদের সুশীলদের এতো গা জ্বলার কোন কারন খুঁজে পাইনা। এগুলো আপনাদের সুশীল নামক বহিঃরাস্ট্রের এজেন্টদের ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

শাহাদাত হোসেন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৩৩ অপরাহ্ন

রুচির দুর্ভিক্ষের কথা বলে লেখক যে সস্তা গল্পের অবতারনা করলেন তাতে রুচির ঠিকাদারদের দৈন্যতা আরও প্রকটভাবেই ধরা পড়োলো।

এফ আর চৌধুরী
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

এখানে শাবিপ্রবি উপাচার্যের কথার সাথে আপনারা কে দ্বিমত পোষন করবেন।পুরো লেখাটি পড়ে দেখুন একচুয়ালি আমাদের মেয়েদের নোংরামীতে জড়াতে ঠিক কোন লোকগুলো উৎসাহিত করছে এই লেখাতে আপনি তাদের চিহ্নিত করতে পারবেন।এই ধরনের লোকগুলোই কিছুদিন আগে ক্রিকেটার নাজমুস সাকিবের ফেসবুক পোস্টের কঠোর সমালোচনা করেছেন তবে তার পোস্টের কথাগুলো ভূল ছিল এটা তারা প্রমান করতে পারেনননি।আমি মনে করি নিচের শিক্ষিত লোকগুলোই আমাদের দেশের নারীদের সব অপসংস্কৃতি ও নোংরামির প্রধান পৃষ্ঠ পোষক❓❓❓ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে তথ্য অধিকার বিষয়ক একটি সেমিনারে মন্তব্য করেছিলেন 'সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়, এখানে (শাবিপ্রবিতে) ওপেন কালচার ছিল, ছেলেমেয়েরা যা খুশি, তাই করতে পারত। কেউ কিছু বলতে পারত না। কারণ, তাদের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমি বলেছি, সাড়ে ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। তারা (শিক্ষার্থীরা) এটার নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার। তালেবানি কালচার নিয়ে আমি খুবই গৌরবান্বিত, এটা নিয়ে থাকতে চাই। আমি ওপেন কালচার চাই না।' উপাচার্য ফরিদ আরও বলেন, 'আপনারা চান কি না, আমি জানি না। আমি চাই না, আমার ছেলেমেয়েরা, সন্তানেরা...ঘুরে বেড়াক। তাদের বাবা-মায়েরা সারা রাত ঘুরে বেড়ানোর জন্য পাঠাননি। বাবা–মায়েরা কিন্তু উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন, টেনশনে থাকেন; আমার মেয়ে কোথায় আছে, ছেলে কোথায় আছে। সে জন্য তাদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। আমরা তাদের গার্ডিয়ান, আমরা তাদের হেফাজতকারী। আমরা কিন্তু ওই জিনিসটা অ্যালাও করব না, কোনোভাবেই করব না।' ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এই বক্তব্য নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলমগীর এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ইউজিসির মুহাম্মদ আলমগীর ছাড়া প্রত্যেকে বলেছেন, উপাচার্যের মতো দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এমন 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বক্তব্য দিতে পারেন না অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। এর মধ্য দিয়ে তার যে মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে এই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন তিনি। ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য নিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটা লজ্জাকরও। উনি তো কেবল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নন, একজন শিক্ষকও বটে। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। উনি তো শিক্ষার্থীদের জানেন; জানেন কীভাবে তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করতে হয়।' ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার ও তালেবানি কালচার নিয়ে গৌরব বোধ করার যে কথাগুলো এসেছে সেটাকে 'চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য' অভিহিত করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, 'এমনিতেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নারী শিক্ষার্থীরা নানান রকম অসুবিধার মধ্য দিয়ে যায়। তাদের কোনো সাংস্কৃতিক জীবন নেই। তাদের নিরাপত্তা নেই। এর ওপর এই ধরনের মন্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।' সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষ্য, 'আমাদের কর্তব্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক করা। সেখানে ছেলে-মেয়েরা যাতে সাংস্কৃতিকভাবে নিজেদের সৃষ্টিশীল করে গড়ে তুলতে পারে তার বন্দোবস্ত করা। 'এগুলোর জন্য আমরা মনে করি যে, ছাত্র সংসদ থাকা দরকার। এগুলো নাই। এবং না থাকার ফলে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, সৃজনশীলনা, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তোলা—এগুলোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নজরটা সেদিকেই দেওয়া উচিত।' এদিকে বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, 'এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন, তারা যখন এ সমস্ত কথাবার্তা বলেন, তখন কিন্তু আমাদের বুঝে নিতে হয় যে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা কোথায় গেছে।' বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে কোনো সততা নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'এটা এই কারণে যে, এরা মুখে বলে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু যা যা বলে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধ যে জন্য হয়েছিল, বাংলাদেশের অস্তিত্ব যে কারণে—এর সবকিছুর বিরুদ্ধে কথা বলে তারা।' পাশাপাশি এ ধরনের ব্যক্তিদের 'ভণ্ড' হিসেবেও অভিহিত করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। বলেন, 'সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো বেশিরভাগ জায়গায় এখন এরাই লিড করছে। বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ পদে এরাই রয়েছে। সেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।' এ পর্যায়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এমন বক্তব্যের নিন্দা জানান তিনি। বলেন, 'আমি মনে করি এমন নারীবিদ্বেষী ও ধর্মান্ধ মন্তব্য করে তিনি তার পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।' আর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে 'জঙ্গিবাদকে' উৎসাহিত করার অনুষঙ্গ দেখেন বেলা'র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার ভাষ্য, 'একটি সমাজে প্রগতিশীল মানুষ থাকবে, প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ থাকবে, রক্ষণশীল মানুষ থাকবে। সেখানে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। কিন্তু রক্ষণশীলতার নামে জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করার কি কোনো সুযোগ আছে?' রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, 'উনি (ফরিদ উদ্দিন আহমেদ) যে মানসিকতার সমর্থনে কথা বলেছেন; ওনার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী সেটা হচ্ছে তালেবানি মানসিকতা। তালেবানি মানসিকতার স্থান কি বাংলাদেশে হওয়ার সুযোগ আছে? যেহেতু আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে তালেবানি মানসিকতার বিকাশের কোনো সুযোগ নেই, সেহেতু তালেবানি মানসিকতার সমর্থন করেন এমন কোনো ব্যক্তিকে এত উচ্চ পর্যায়ে আসীন রাখার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।' এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে তার পদ থেকে কবে সরানো হবে—সরকারের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন রিজওয়ানা হাসান। বলেন, 'আমরা নাগরিকেরা জবাবদিহিতা চাইতে পারি সরকারের কাছ থেকে। এটা আমাদের অধিকার। তালেবানি মানসিকতার সমর্থন করেন, জঙ্গিবাদি মানসিকতা সমর্থন করেন এমন একজন ব্যক্তির বেতন-ভাতা আমরা কেন দেবো?' গতকাল তথ্য অধিকার বিষয়ক যে সেমিনারে বিতর্কিত এই বক্তব্য দেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলমগীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য হয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এমন বক্তব্য দিতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ আলমগীর এই প্রতিবেদককে বলেন, 'এটা আপনি তাকেই (ফরিদ উদ্দিন আহমেদ) জিজ্ঞেস করেন।'

Harunur Rashid
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:০৭ পূর্বাহ্ন

এই বাংলাদেশ শাহ জালাল শাহ পরানের বাংলাদেশ, সুতরাং মুসলমান হিসেবে তানজিমের মতের প্রতি শদ্ধা জানাই, আর লেখকের প্রতি নিন্দা জানাই

আবিদ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:১৫ অপরাহ্ন

ভিসি স্যার তো শুরুতে বলেননি তালেবানি কালচার। ছাত্রদের কল্যাণের জন্য তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতো অবশ্যই ভালো। ছাত্ররাই তালেবানি শব্দ উচ্চারণ করেছে। বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ে কলেজে ছাত্ররা যখন লেখা পড়া বাদ দিয়ে চাদাবাজি করে স্যার দের সাথে দুর্ব্যবহার করে কর্মকর্তাদের গায়ে হাত তুলে তখন আপনাদের থেকে জোড়ালো প্রতিবাদি লেখা আশা করি।

আবুল কালাম
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

আমি আমার চাকুরী সুত্রে এই দুনিয়ার অনেক দেশ ঘুরেছি। আমার বরাবরই অভ্যাস, সেই দেশের মিডিয়ার ব্যবহার। কিন্তু খুচিয়ে খুচিয়ে ঘা করার অভ্যাস আমাদের দেশেই হয়। একটা উদাহরণ দেয়- এই দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী প্রাকৃতিক দুরযোগ বেশি হয় আমেরিকাতে। সেখানে শত শত মানুষ মারা যায়, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় দিনের পর দিন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। মার্কিন প্রশাসনের চরম ব্যার্থতা দেখা যায় এই ক্ষেত্রে। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, এটা নিয়ে আমেরিকার মিডিয়া কয়দিন আলোচনা করে? সেই দেশের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে? কিন্তু আমাদের দেশ হলে এর জের যায় কমপক্ষে ১ বছর। এতে প্রমাণিত হয় আমাদের আসলে কাজ-কাম কম। আমরা কথা বলতে পছন্দ করি, ভালোবাসি। আর যদি কারোর সমালোচনা করি তো তবে সেইদিন সে সবচেয়ে সুখী মানুষ, তার ঘুম হয় ভালো।

Mohsin
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:২৬ অপরাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

১০

স্বপ্নের স্বদেশের সন্ধানে/ তফসিল ঘোষণা- এরপর কি সব সমাধানের সুযোগ শেষ?

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status