ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

অসহায় ডেঙ্গু রোগী-স্বজন

টাকা দিয়েও মিলছে না স্যালাইন

সুদীপ অধিকারী
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
mzamin

কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তার রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে দিতে হয় ডিএনএস স্যালাইন। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত শরীরে পুশ করতে হয়। একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বেশিও স্যালাইন দেয়া লাগতে পারে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে এই স্যালানের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খোদ রাজধানীতেই এই স্যালাইন সহজে মিলছে না। স্যালাইন পেতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের অসহায়ের মতো ছুটতে হচ্ছে এক ফার্মেসি থেকে আরেক ফার্মেসিতে। 

সরজমিন গতকাল রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পেছন দিকে শাহবাগ মোড়ে সারি সারি ওষুধের দোকান (ফার্মেসি)। আশপাশের হাসপাতালের রোগীদের ওষুধের জোগান দেয় এসব ফার্মেসি। দিনে- রাতে সিফটিং করে চালু রাখা হয় দোকানগুলো।

বিজ্ঞাপন
গতকাল দুপুরে মেসার্স মেডিকোর্স, বেল-ভিউ ফার্মা, আয়ান ফার্মা, মেডিপ্লাস, অভিজাত ফার্মেসি, মেসার্স ঔষুধালয়, ডিএক্স ফার্মা, শাহরিন ড্রাগস, পপুলার মেডিকেল স্টোর, আবিদ ড্রাগস, আল-কেমী, মেডিসিন প্লাস সহ অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যায়নি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডিএনএস বা আইভি স্যালাইন। স্যালাইন চাইলে জানানো হচ্ছে- নেই। 

স্যালাইন কিনতে আসা মাহমুদ নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার বড় ভাই ডেঙ্গু আক্রান্ত। অনেক কষ্ট করে গতকাল ১শ’ টাকার একটা স্যালাইন ৩শ’ টাকা দিয়ে নিয়েছিলাম। এখন আবার ভাইয়ের শরীরে স্যালাইন পুশ করতে হবে। কালকের ওই দোকানে গিয়ে অনেক আকুতি-মিনতি করলাম তবুও বলে স্যালাইন নেই। তাই আজ কলাবাগান, সিটি কলেজ, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে এখন শাহবাগে আসছি। অনেকেই বলেছিল শাহবাগে পেতে পারেন। কিন্তু এখানে এসে দেখি কোনো দোকানে স্যালাইন নেই। এখন কী যে করবো বুঝে উঠতে পারছি না।     

এদিকে ধানমণ্ডি এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তবে এলাকাটি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একটি স্যালাইন পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থাকলেও এর পাশের যমুনা ফার্মেসি, ড্রাগ স্টোর, নিউ বাংলাদেশ ফার্মা, বিসমিল্লাহ ফার্মেসি, খান মেডিসিন কর্নার, মেসার্স এস. ফার্মেসির একটিতেও নেই কোনো কোম্পানির স্যালাইন।  রোগীদের জন্য কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন স্বজনরা। এমনই একজন জাহানারা বেগম। মেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। হাসপাতাল থেকে একটির ব্যবস্থা করা হলেও এখন তার মেয়ের প্রয়োজন আরও ২ লিটার স্যালাইন। তাই ধানমণ্ডির জিগাতলা, ১৫ নম্বর, ১৯ নম্বর, শংকর এলাকা ঘুরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেলের সামনের ফার্মেসিতে। কিন্তু সেখানেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত স্যালাইন। দোকানিদের হাতে-পায়ে ধরে বেশি টাকা দিলেও জোটেনি ১ প্যাকেট স্যালাইন। চোখ মুছতে মুছতে জাহানারা বলেন, মেয়েটা অনেক অসুস্থ। একদম বিছানাধরা। উঠে বসতে পারছে না। প্লাটিলেটও অনেক কম। ডাক্তার বলেছে স্যালাইন লাগবে। অনেক জায়গায় খোঁজ করলাম। কোথাও একটি স্যালাইন পেলাম না। দোকানদারদের পা পর্যন্ত ধরতে গেলাম। তাও বলছে সাপ্লাই নেই। এখন আমি কোথায় যাবো! যেভাবেই হোক আর যত টাকাই লাগুক আমার মেয়ের জন্য স্যালাইন দরকার।  

ঢাকা কলেজ এলাকায়ও একই অবস্থা। মেডিকেলে প্রবেশের আগে ডে-নাইট ও ডি এস ফার্মেসি ছাড়া আর কোনো দোকানে দেখা মেলেনি স্যালাইনের। যেই দোকান দুটিতে আছে বলেছে তাও পর্যাপ্ত না। তারা বলেন, একেবারেই স্যালাইনের সাপ্লাই নেই। ঢাকা মেডিকেলে অনেক রোগীর চাপ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে রোগী আসে। শুধু ডেঙ্গু নয় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে, ডায়রিয়া, কলেরা আরও বিভিন্ন কারণে রোগীর শরীরের  রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখার জন্য স্যালাইন ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। আর এসব রোগীর বেশির ভাগই আসে ঢাকা মেডিকেলে। যাদেরকে আমাদের সামাল দিতে হয়। তাই অনেক চাপাচাপি করে সকালেই কয়েক পিস স্যালাইন আনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে  গেছে। আর মাত্র কয়েক পিস আছে। তাও মনে হয় বেশিক্ষণ থাকবে না। তাই যতক্ষণ আছে ততক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।

ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালের পাশে এম. কে ফার্মেসি, মেসার্স ইমন ফার্মেসি, বীনা ফার্মেসি, কনা ফার্মেসি, ছন্দা ফার্মেসি, মোল্লা মেডিসিন কর্নার, সেন্ট মেরিস ফার্মেসি, লায়লা মেডিকেল সাপ্লাই সহ আশপাশের বিভিন্ন ফার্মেসিতে নেই কোনো ডিএনএস স্যালাইন। 

ঢাকার মোহম্মদপুর এলাকাতেও রয়েছে সরকারি বেসরকারি একাধিক হাসপাতাল। আর এই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফার্মেসি। রায়হান ফার্মা, ঠাকুরগাঁও ফার্মা, ঔষধ বিতান, বিসমিল্লাহ ফার্মা, আল-মদিনা ফার্মা, ইসমী ফার্মেসি, বুশরা ফার্মেসি, আল সামী ড্রাগ, গ্রিন লাইফ ফার্মেসি, মেডিসিন কর্নারসহ একাধিক ওষুধের দোকানে গিয়েও মেলেনি সোডিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত ডিএনএস স্যালাইন।  ইসলাম ফার্মা, এলিট ফার্মা, মানিকগঞ্জ ফার্মেসি, চট্টলা ফার্মেসি, সিভিক ফার্মা, আরএক্স ফার্মা, সিকদার মেডিকেল হল, হুসাইন ড্রাগস, রায় ফার্মা, চাঁদপুর ফার্মেসি, মানবতা ফার্মেসি সহ  বেশকিছু দোকানি বলেন,  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান একসময় শিরায় দেয়া স্যালাইন উৎপাদন করতো। এই স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহৃত হতো। তিন-চার বছর আগে বিকল্প ব্যবস্থা না করেই উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিডেট (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জ কারখানায় শিরায় দেয়া স্যালাইন উৎপাদন করবে। যা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ইডিসিএল স্যালাইন কিনে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করায় এই সংকট দেখা দিয়েছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status