ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সরজমিন কুমিল্লা

‘বাহার ট্রমা’ কাটিয়ে সরব রাজনীতি

মারুফ কিবরিয়া, কুমিল্লা থেকে ফিরে
১২ মে ২০২৫, সোমবার
mzamin

কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের সীমানার শুরুতেই পড়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়। নয় মাস আগেও এই ভবনটিকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের ছিল হাজারো ব্যস্ততা। এখান থেকেই নানা সিদ্ধান্ত নিতেন দলীয় সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। যার কথায় চলতো পুরো শহর। এখন সেই জৌলুস নেই। কান্দিরপাড়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয় সুনশান। ৫ই আগস্ট দলটির পতনের পরপর পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো ভবন। সেদিনই প্রতাপশালী বাহার অধ্যায়ের অবসান ঘটে। স্থানীয় রাজনীতিতে সাবেক এই সংসদ সদস্য ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। ‘বাহার ট্রমা’ কাটিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এখন স্বস্তিতে। বিশেষ করে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনে কোণঠাসা বিএনপি রাজনীতিতে পুরোপুরি সরব হয়েছে। সক্রিয় হয়েছে জামায়াতও। 

যেভাবে চলছে বিএনপি’র কর্মকাণ্ড: কুমিল্লা শহর জুড়েই বিএনপি’র নেতাদের ছোট বড় পোস্টার সাঁটানো। কদিন আগেই জেলা ও মহানগর কমিটি হয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডের কমিটি নিয়েও জোরদার কাজ করে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া প্রস্তুতি রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি নিয়েও। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণের সাবেক আহ্বায়ক আমিন উর রশীদ ইয়াছিনের সঙ্গে আলাপে এমনটাই জানা গেছে। তিনি জানান, ৫ই আগস্টের পরপরই কুমিল্লার রাজনীতিতে নতুন এক আবহ তৈরি হয়েছে। সাবেক এমপির একচেটিয়া শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে কুমিল্লাবাসী। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নিজ নিজ দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হচ্ছে না।  বিশেষ করে ১৬ বছরে কোণঠাসা করে রাখা বিএনপি এখন দলের কাজগুলো করতে পারছে স্বাধীনভাবে।

আমিন উর রশীদ ইয়াছিন মানবজমিনকে বলেন, এখন দলের কাজগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় করা যাচ্ছে। ওয়ার্ড কমিটির কাজ শেষ হয়েছে প্রায়। ২৭টি ওয়ার্ডে নেতৃত্ব নির্বাচন করা বড় একটা কর্মজজ্ঞ। কে  সভাপতি কে সাধারণ সম্পাদক সেগুলো ভোটের মাধ্যমে ঠিক করা হচ্ছে। এর সবই দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশ মোতাবেক চলছে। এসব কাজ করতে গিয়ে টুকটাক ভুলত্রুটি তো থাকবেই। সেগুলো আবার সংশোধন করা হচ্ছে। এক কথায় দলীয় চেয়ারম্যান একটাই নির্দেশনা দিয়েছেন, মানুষের জন্য ভালো ভালো কাজ করে যেতে হবে। আমরা সেটাই করছি। শহরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কুমিল্লাকে একটি সুন্দর শহর উপহার দেয়ার জন্য নগর বিএনপি’র কমিটির পক্ষ থেকেও কাজ করা হচ্ছে। 

সাবেক সংসদ সদস্য বাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন তারা কেউই নেই। ৫ই আগস্টের পরে সবাই পলাতক। আওয়ামী লীগের কোনো অবস্থান নেই। ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। এখন শহর একেবারেই শান্ত।

বাহার ট্রমা কাটিয়ে বিএনপি’র রাজনীতিকে আরও ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে কাজ করছে কুমিল্লা মহানগর বিএনপিও। সভাপতি উদবাতুল বারী আবু জানান, সাবেক এমপি বাহারের কাছে জিম্মি ছিল কুমিল্লাবাসী। তিনি এমন কোনো কাজ নেই করেননি। এখন তারা পালিয়ে যাওয়ায় মানুষ স্বাধীনভাবে সব কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছে। মানুষের মধ্যে এখন কোনো ভয় নেই। তিনি বলেন, মহানগর কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিয়মিত কাজগুলো করতে পারছি। গ্রেপ্তার জেলের ভয় এখন নেই। এক সময় শহরে পা দিতেও সমস্যা হতো। অর্ধশত মামলার আসামি ছিলাম আমি। ২৭টি ওয়ার্ডের শৃঙ্খলায় মহানগর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সামনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য দল গোছানোর চালিয়ে যাচ্ছে সবাই। 

অন্যদের যা অবস্থা: ৫ই আগস্ট থেকে নিয়মিত দলীয় কর্মকাণ্ডে সরব কুমিল্লা মহানগরীর জামায়াতে ইসলামীও। এতদিন গোপনে থাকলেও বর্তমানে প্রকাশ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর জামায়েতের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সোহেল। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা তিন বা পাঁচজন একসঙ্গে থাকলেও নানা হয়রানির শিকার হতাম। বলা হতো গোপন বৈঠক করছি। এখন এসব নেই। প্রকাশ্যেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। কেউ বাধা দেয়ারও নেই। সাবেক এমপি বাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাহার আমাদের সঙ্গে তেমন কোনো ঝামেলা করতেন না। কারণ সেন্ট্রাললি আমাদের দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাধা থাকায় পুলিশ প্রশাসন নিয়ে সমস্যায় পড়তাম। 

৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে কুমিল্লার রাজনীতিতে অনেকটা অকার্যকর হয়ে গেছে জাতীয় পার্টি। দলটির কোনো কার্যক্রম এই মুহূর্তে নেই শহরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় জাতীয় পার্টির নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সেই প্রসঙ্গে না বললেও দলীয় কার্যক্রম স্থগিতের কথা স্বীকার করেছেন  জেলা জাপা সভাপতি এয়ার আহমেদ সেলিম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সাল থেকেই আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বশেষ ১৫ বছরেও শেষ করে দিয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের দলীয় কোনো কর্যক্রম নেই বললেই চলে। ৫ আগস্টের পর থেকে সব বন্ধই রয়েছে। 

যেমন ছিল ‘বাহার ট্রমা’: কুমিল্লার রাজনীতিতে সাবেক এমপি বাহার ছিলেন আতঙ্কের নাম। বলা হতো এই শহরে তিনিই সব। তার কথাই শেষ কথা। মুন্সেফবাড়ি থেকে কান্দিরপাড় পর্যন্ত পুরো পথটুকুতে আসা-যাওয়ায় যে সিদ্ধান্ত হতো তা-ই বহাল থাকতো। নিজেকে ‘কুমিল্লার অভিভাবক’ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন বাহার। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা বাহার নিজেকে ভাবতেন কুমিল্লার গণমানুষের নেতা। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কুমিল্লায় রাজত্ব শুরু করেন। দিন যত গেছে বাহারের রাজত্ব ততই বেড়েছে। একটা সময় শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজের দলের বিরোধীদেরও রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা করে ফেলেন বাহার। স্থানীরা জানায়, গত কয়েক বছরে কুমিল্লা জুড়ে একক রাজত্ব চলেছে বাহাউদ্দীন বাহারের। কুমিল্লা সদরের এমপি হলেও পুরো জেলাতে যেন বাহারের কথাই ছিল শেষকথা। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ছিলেন বাহারের বলয়ে। শুধু তা-ই নয়, গত বছর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও জেলার বেশির ভাগ উপজেলাতেই ছিল বাহারের আধিপত্য। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status