শেষের পাতা
শাহজালালের নতুন টার্মিনালে বিমান পরিচালনা করতে চায় ১২টি বিদেশি এয়ারলাইন্স
মরিয়ম চম্পা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় ১২টি বিদেশি এয়ারলাইন্স। ইতিমধ্যে সিভিল এভিয়েশনসহ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করেছে এসব এয়ারলাইন্স। চলতি বছরের শেষের দিকে দেশের বৃহত্তর টার্মিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও আগামী বছর পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, ৪টি বাংলাদেশি সংস্থা এবং বিদেশি ২৮টি সংস্থাসহ মোট ৩২টি বিমান পরিচালনাকারী সংস্থা নতুন টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। ইতিমধ্যে ১২টি এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে অনুমতি চেয়ে লিখিতভাবে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কাছে আবেদন করেছে। এগুলো হলো-ইথিওপিয়ান এয়ালাইন্স, শ্রীলঙ্কার ফিট্সএয়ার, রয়েল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্স,বৃটিশ এয়ারওয়েজ, কোরিয়ান এয়ার, দ্য ইউএই’জ উইজ এয়ার, গারুদা ইন্দোনেশিয়া, ইরাকি এয়ারওয়েজ, এয়ার ফ্রান্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ এবং রিয়াদ এয়ার।
আগামী ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন।
২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয় সিভিল এভিয়েশন। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮শে ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। যৌথভাবে তারা প্রায় ২.৩০ লাখ স্কয়ার মিটারের এই টার্মিনাল তৈরির কাজ করছে। যেখানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৩৭টি বিমানের জন্য ৫.৪২ লাখ স্কয়ার মিটারের একটি বিশাল স্পেস থাকবে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইছে। তৃতীয় টার্মিনালটি সম্পূর্ণরূপে খোলার পর পর্যায়ক্রমে এসব এয়ারলাইন্সগুলোকে অনুমতি দেয়া হবে। টার্মিনালটি চালু হলে এয়ারপোর্টে বার্ষিক যাত্রী ধারণ ক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি। বর্তমানে যেখানে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৮০ লাখ। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দর ব্যবহার করছে এবং প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়ে থাকে। ২০২৫ সালে এই যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১.৪ কোটি এবং ২০২৩ সালের মধ্যে এটা ২.৪ কোটি ছাড়াবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশে বসবাস করছে। যাদের অনেকেই বছরের বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং বেড়াতে দেশে আসে। এই টার্মিনাল চালু হওয়ার পর এখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ইতিমধ্যে জনবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েক ধাপে এই নিয়োগ কাজ সম্পন্ন হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক বোর্ড মেম্বার কাজী ওয়াহিদ-উল আলম মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে এখন এয়ারলাইন্সের যে আসন রয়েছে তা যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত নয় এবং আগের তুলনায় বিদেশে যাওয়ার পরিমাণ এখন অনেক বেড়েছে। যার ফলে এয়ারলাইন্সের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি। এজন্য এখানে বিমানের টিকিটের দাম অনেক বেশি। যেটা বিদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টিকিটের দাম অনেক বেশি। এটার মূল কারণ হচ্ছে বিমান থেকে সাপ্লাই কম বলে। যত এয়ারলাইন্স তত সার্ভিস এবং অপশন পাবে যাত্রীরা। এয়ারলাইন্সের কম্পিটিশন হলে সার্ভিস ভালো হবে। আর সার্ভিস ভালো হলে যাত্রীরা সার্ভিস বা সেবা পাবে। এটা যাত্রী সাধারণের জন্য ভালো দিক। দ্বিতীয়ত, এয়ারলাইন্স আসার কারণে দেশ থেকে যাত্রী যেমন বিদেশে যাবে একইভাবে বিদেশ থেকে ট্যুরিস্ট আসা শুরু করবে। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট আসা শুরু করলে আমাদের দেশের নাম বিদেশে ছড়িয়ে পরবে। তৃতীয়ত, যত এয়ারলাইন্স আসবে তারা এখানে এসে বিভিন্ন ক্যাটারিং, হ্যান্ডলিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস নিয়ে থাকবে। এতে করে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। অর্থনৈতিকভাবেও দেশ লাভবান হবে।