বিবিধ
জি-২০ নয়াদিল্লি সম্মেলন
অগ্রগামী কূটনীতি, অন্তর্ভুক্তি এবং বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি
অনলাইন ডেস্ক
(৩ সপ্তাহ আগে) ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৭:১৯ অপরাহ্ন

প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটেছে। ভারতের কূটনীতি বিশ্ব নেতাদের মন ও হৃদয় কেড়েছে। ব্যাপক করতালি এবং উৎসাহের সঙ্গে বিশ্বের প্রতিটি দেশের কূটনীতিকরা ভারতের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। একজন রাষ্ট্রপতি যিনি শুধুমাত্র এই বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজনগুলিকে দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করেনি বরং সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তিও স্থাপন করেছেন।
এবারের জি-২০ সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব ছিলো ভারতের। এই সম্মেলন বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত স্কিমগুলি যাতে শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় এবং কাউকে পিছিয়ে না রাখে তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত এবং গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে পূর্ববর্তী বৈঠকগুলি আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা এবং উদ্যোগগুলো জি-২০ টেবিলে পৌঁছানো এবং তা আলোচনার জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শীর্ষ সম্মেলনের থিম, 'এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত' এই সারমর্মকে বিভিন্ন সেশনের প্রতিফলিত করা হয়েছে। আমাদের বৈশ্বিক পরিবার এবং আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, গ্লোবাল সাউথকে প্রভাবিত করে এমন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার জন্য একটি ক্রমবর্ধমান চাপের প্রয়োজন যেখানে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলির কথা বলা হয়েছে । বৈশ্বিক উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে উন্নয়ন বিভাজন কমানোর ক্ষেত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতিত্ব অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ভারত মন্ডপমে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে জি-২০ এর স্থায়ী সদস্য হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশগুলির বৃহত্তম জোটের প্রতিনিধিত্বকারী আফ্রিকান ইউনিয়নকে উষ্ণ স্বাগত জানায়।
ভারত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্তরিক আলোচনা এবং ঐকমত্য-প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করেছে। ভারত শুধু যথাযথ সম্মানই দেয়নি বরং জি-২০ কাঠামোর মধ্যে গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করার সময়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বগৌরবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্বের ঘোষণা করেন। নয়াদিল্লির ঘোষণার বিষয়ে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মত ঐকমত্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক যা সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে বিদ্যমান বিভাজন সত্ত্বেও সমালোচনামূলক, উন্নয়নমূলক এবং ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করা ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য কুটনৈতিক কৃতিত্ব। ভারতের দক্ষ আলোচকরা নিরলস পরিশ্রম করে পশ্চিমা ব্লক এবং চীনা-রাশিয়ান জোটের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করেছেন।
শীর্ষ সম্মেলনের ফাকে জো বাইডেন, ঋষি সুনাক, ওলাফ স্কোলজ এবং ফুমিও কিশিদার মতো প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এই ঐতিহাসিক ঐক্যমতে পৌঁছাতে অবদান রেখেছে। সর্বসম্মতিক্রমে একটি সমন্বিত যৌথ বিবৃতি তৈরি করা অবশ্যই কঠিন উদ্যোগ কাজ। প্রাথমিকভাবে আঞ্চলিক বিরোধকে ঘিরে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা আগে থেকেই ছিলো। এছাড়া চীন প্রায়শই একাধিক আলোচনায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারীর ভূমিকা গ্রহণ করে।
ভারতে জি-২০ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য ফলাফলগুলির মধ্যে একটি হল গ্লোবাল সাউথ ইনিশিয়েটিভ চালু করা, যা জি-২০ সদস্য এবং গ্লোবাল সাউথ দেশগুলির মধ্যে সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরকে কোন বাধা ছাড়াই সহজতর করতে চায়।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এই সম্মেলনের একটি বড় কূটনৈতিক জয়৷ ভারত বিশ্বকে জোর দিতে সক্ষম হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা দোরগোড়ায় রয়েছে এবং বিশ্বের অন্য যে কোনও অংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর বিরুপ প্রভাব অনেক বেশি দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পড়তে পারে বলে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে।
নয়াদিল্লির ঘোষণায় জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে বন্ধ এবং যৌক্তিককরণের জন্য একটি স্পষ্ট আহ্বান জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কয়লা ব্যবহার কমানোর এবং পরিচ্ছন্ন এনার্জি উৎপাদনের বিষয়ে জোর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল বায়োফুয়েলস অ্যালায়েন্সের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি যুগান্তকারী ঘোষণা করেছেন। এই স্মারক উদ্যোগটি উনিশটি দেশ এবং বারোটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থন অর্জন করেছে। ভারত, ব্রাজিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এই শক্তিশালী ট্রিনিটি বায়োফুয়েল এজেন্ডাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যদিও জি-২০ অন্য সদস্যদের জোরালো সমর্থন অনস্বীকার্য। আর্জেন্টিনা, কানাডা, ইতালি এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সহ মূল সদস্য দেশগুলি এই দূরদর্শী উদ্দেশ্যকে তাদের অটল সমর্থন দিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, জোটের অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব সম্পন্ন জি-২০ এর বাইরের দেশ বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মরিশাস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বিশিষ্ট দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে, ভূ-রাজনৈতিক তাৎর্যের একটি মৌলিক উন্নতি ঘটেছে। অভূতপূর্ব সহযোগিতার প্রদর্শনে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বিত একটি জোট একত্রিত হয়ে একটি গ্রাউন্ড ব্রেকিং সমঝোতা স্মারক(এমওইউ)কে আনুষ্ঠানিকভাবে একমত হয়েছে। ইন্ডিয়া মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর (IMEE-EC) নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এই দূরদর্শী করিডোরের প্রাথমিক লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক সংহতি জোরদার করা এবং এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশগুলিকে নির্বিঘ্নে একত্রিত করা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উত্থাপিত এই প্রকল্পটির প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে একযোগে দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন করেছেন। একই সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর একজন বিশ্বস্ত আস্থাভাজন এবং ভারতের একজন মিত্র, উৎসাহের সাথে এই উদ্যোগটিকে আরব উপদ্বীপ, ভারত ও ইউরোপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বাহক হিসাবে ধারনা করেছেন।
এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় কমিশন সম্মিলিতভাবে সমর্থন দিয়েছে। এরকম একটি দৃঢ় জোট গঠন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংযোগ এবং কৌশলগত প্রভাবে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।
ভারতের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে অন্যান্য বিষয়গুলির দিকেও মনোযোগ দেয়া হয়েছে। যেমন ভ্যাকসিন বিতরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রযুক্তি স্থানান্তরের পাশাপাশি বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা। তদুপরি, গ্লোবাল সাউথ দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য কমানোর উপায় হিসাবে অবকাঠামো উন্নয়নের উপর ভারত জোর দিয়েছে।
এছাড়া ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পৌঁছানো জোরালোভাবে সমর্থন করতে সক্ষম হয়েছে। আইডসের-এর মতো রোগের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা প্রদান করতে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি জেনেরিক মেডিসিন উৎপাদন উৎসাহিত করতে সক্ষম হয়েছে। সবশেষে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় ভারতের সোচ্চার ও সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ে বিশ্ব সচেতন। সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন প্রতিরোধে উদ্যোগের প্রস্তাব করেছে এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত অবদান রাখে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয়েছে।
নয়াদিল্লির জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন বৈশ্বিক কূটনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। দৃঢ় নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে৷
সূত্র: এএনআই
মন্তব্য করুন
বিবিধ থেকে আরও পড়ুন
বিবিধ সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]