ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরনো ইউনিট নিলামে

শতকোটি টাকার বাণিজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার

বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরনো ইউনিট নিলামে তোলায় বাম্পার আওয়ামী লীগ নেতাদের। প্রায় ৩৭ কোটি টাকার নিলামে তাদের ব্যবসা হয়েছে শতকোটি টাকা-এই আলোচনায় সরব আশুগঞ্জ। তবে সিন্ডিকেট করে নিলাম কব্জা করায় সরকারের লোকসান হয়েছে বড় রকমের। ৬১ কোটি টাকা নিলামের ডাকও উঠেছিল। এই অভিযোগ ছাড়াও কোম্পানির তরফে পুরাতন দুটি ইউনিটের নিলামের মূল্য ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৪ শ’ টাকা নির্ধারণ করা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)-এর ৬৪ মেগাওয়াটের পুরাতন দুটি ইউনিট ১ ও ২ এর পরিত্যক্ত ও আনুষঙ্গিক স্ক্যাপ বিক্রয়ে গত বছরের ১লা ডিসেম্বর নিলাম দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ৮ই জানুয়ারি দরপত্র দলিল বিক্রয়ের সর্বশেষ তারিখ এবং ৯ই জানুয়ারি দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ উল্লেখ করা হয় এবং দরপত্র দাখিলের স্থান হিসেবে আশুগঞ্জে কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট)- এর কার্যালয় এবং ঢাকার কাকরাইলে কোম্পানির কর্পোরেট অফিসে কোম্পানি সচিবের দপ্তরের কথা বলা হয়। কিন্তু অভিযোগ আশুগঞ্জে কাউকে নিলাম দরপত্র দাখিল করতে দেয়া হয়নি। মোট ৬টি দরপত্র দাখিল হলেও আশুগঞ্জে একমাত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. ছফিউল্লাহ’র মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সফিউল্লাহ ছাড়া আর কেউ দরপত্র দাখিল করতে পারেনি।  জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল জানান, তিনি শিডিউল ক্রয় করেছিলেন। কিন্তু তাকে ড্রপ করতে দেয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন
 

এ ছাড়া আরও অনেকেই নিলামে অংশ নিতে ব্যর্থ হন। যদিও প্রায় ১ শ’টি নিলাম দরপত্র বিক্রি হয়। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, যে ৬টি দরপত্র জমা পড়ে এরমধ্যে আশুগঞ্জের মেসার্স সফিউল্লাহ ট্রেডার্স ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ঢাকার মীরা স্টিল করপোরেশন ৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৬২ হাজার ৫ শ’ টাকা, ভৈরবের মেসার্স নাবিল এন্টারপ্রাইজ ৬১ কোটি  ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ঢাকার চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ ৩২ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ত্রিরত্ন  ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ৩৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা দর দেয়। মেসার্স মায়াবি ইন্টারন্যাশনাল নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও তারা কোনো মূল্য উল্লেখ করেনি এবং পে-অর্ডার দেয়নি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরপত্রের উদ্বৃত্ত দরের সঙ্গে শর্তানুযায়ী জামানতের টাকা দিতে না পারায় আনফিট ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে ভৈরবের মেসার্স নাবিল এন্টারপ্রাইজ আদালতে মামলাও করে। 

এ বছরের ৯ই জানুয়ারি দরপত্র উন্মুক্ত করা হলেও গত ২২শে জুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ সময়ে এই দরপত্র নিলাম নিয়ে নানারকম খেলা চলে। পুনরায় নিলাম ডাক হবে নাকি মনোনীত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হবে, এই সিদ্ধান্ত নিতে ৬ মাস সময়ক্ষেপণ করা হয়। গত ২২শে জুন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট) মো. রফিকুদ্দৌলার স্বাক্ষরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সফিউল্লাহর অনুকূলে লেটার অব ইনটেন্ট জারি করা হয়। এরপরই গত ২৩শে জুলাই যশোরের নওয়াপাড়ার জাফরপুরের মো. নাজিম উদ্দিন রাজার সঙ্গে মেসার্স সফিউল্লাহর নিলামে প্রাপ্ত পুরাতন ইউনিট দুটির মালামাল ৬৫ কোটি টাকায় বিক্রির চুক্তি হয়। তবে আলোচনা ছড়িয়েছে মোট ১০৫ কোটি টাকায় পুরাতন ইউনিট দুটির মালামাল বিক্রি হয়েছে। আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী মো. ছফিউল্লাহর নামীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে যৌথভাবে এই নিলাম ডেকে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বাবুল আহমেদ, মনির সিকদার ও মো. সালাউদ্দিন। তাদের মধ্যে বাবুল আহমেদ আশুগঞ্জে সবকিছু সমন্বয় করেন। আর ঢাকার বাধা-বিঘ্ন দূর করে নিলামটি কব্জা করতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে পার্টনার করা হয়। মো. সালাউদ্দিন ওই যুবলীগ নেতাকে নিয়ে ঢাকায় সবকিছু ম্যানেজ করেন। এই ৫ জনের মধ্যে সিক্সটি-ফোরটি ভাগাভাগি হয়। এরমধ্যে সিক্সটি পার্সেন্টের ভাগিদার ৪ জনের অংশের মালামাল ৬৫ কোটি টাকাতে বিক্রি হয়েছে। 

তবে বাবুল আহমেদ মালামাল নিজেরাই বিক্রি করছেন বলে জানান। ১০৫ কোটি টাকা বিক্রির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন তিনি। বলেন মানুষ কতো কথাই বলে।  তবে মালের পরিমাণ ১ হাজার টন হবে বলে জানান। ৮১ পার্সেন্ট ঊর্ধ্বমূল্যে নিলাম নিয়েছেন জানিয়ে বাবুল আহমেদ বলেন- ৬১ কোটি টাকা দর যে দিয়েছে সে প্রোপার কোনো কিছুই দেয়নি। সফিউল্লাহর নামে আমরা নিয়েছি ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য। কিন্তু ঢাকায় ড্রপ না করলে আমরা ২২ কোটি টাকায় নিতে পারতাম। মো. সালাউদ্দিন যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা তাদের সঙ্গে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী ছফিউল্লাহ মিয়া বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা থাকার কারণে বিলম্বে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে বলে জানান। তবে তার প্রভাবে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন। বলেন সবকিছু নিয়মের মধ্যেই হয়েছে। 

জানা যায়, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)-এর ৬৪ মেগাওয়াটের পুরাতন দুটি ইউনিট-১ ও ২-এর আয়ুষ্কাল ২০০৫ সালে শেষ হয়। ফলে ২০১৪ সালে ইউনিট-১ এবং ২০১৮ সালে ইউনিট-২ অবসরে যায়। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ইউনিট দুটির স্থলে নতুন অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সে অনুসারে ইউনিট দুটি নিলামে বিক্রয় ও অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই অ্যাসেট ভ্যালু নির্ধারণে কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়। মেসার্স খান ওয়াহাব শফিক রহমান অ্যান্ড কোম্পানি (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট) নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান এই সম্পত্তির মূল্য ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যায়ন করে। 

কোম্পানির  ব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট)  মো. রফিকুদ্দৌলা এবিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।  কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান জানান, ৫টা পার্টি নিলামে অংশ নিয়েছে এটা অনেক। আমরা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে ঢাকাতেও দরপত্র জমা নিয়েছি। স্বচ্ছ ভাবেই সবকিছু হয়েছে। আমরা যে ভ্যালুয়েশন করেছি এর চেয়ে বেশি করা সম্ভব না। আপনি পিডিবিতে খবর নেন। একই জিনিস আরও কম টাকায় হয়েছে। আমরা অ্যাকাউন্টিব্যালিটির সঙ্গেই করেছি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

রাস্তায় রাস্তায় ট্যাংক/ হামাস-ইসরাইল তীব্র লড়াই

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক/ যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে নেয়ার পরামর্শ

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status