ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

আন্তর্জাতিক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সুপার পাওয়ার, সর্বনাশা বিপ্লবী নাকি বিপজ্জনক!

মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবারmzamin

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম যেভাবে তার  ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেই ডিজাইন অনুযায়ী চ্যাটজিপিটি উত্তর দেয়। সে সুনির্দিষ্টভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। খাবারের উন্নত একটি ডিশের চেয়ে অধিক বিতর্কিত  টপিক্সের বিষয়ে চ্যাটজিপিটিকে মডেল প্রশ্ন করা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও সে একই রকম উত্তর দেবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চ্যাটজিপিটি তার কোড আধুনিকায়ন করেছে।  যৌনতা এবং বর্ণবাদ ইস্যুতে কেমন জবাব দিতে হবে তাকে তা শেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্ভাবকরা আরও উচ্চ মান, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন। যদি চ্যাটজিপিটিকে মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে তার কাছে সব রকম প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে এবং সে উত্তর হতে হবে স্বচ্ছ এবং সঠিক।

 

চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সম্প্রতি নানা কথা শোনা গেছে। বলা হয়েছে, মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মানুষের কাজ কেড়ে নেবে তারা।

বিজ্ঞাপন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হয়ে উঠবে সুপারপাওয়ার। সর্বনাশা। বিপ্লবী। দায়িত্বহীন। দক্ষতা সৃষ্টিকারী। বিপজ্জনক। এতগুলো বিশেষণ- ভালো এবং মন্দ, সব বলা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে। গত কয়েক মাস এ নিয়ে বিজ্ঞান বিশ্ব বা আমরা যারা সাম্প্রতিক প্রযুক্তি সম্পর্কে কমবেশি জানি বা জানার চেষ্টা করি, তারা সবাই এসব কথা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে যখন চ্যাটজিপিটি অবমুক্ত হলো, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জনগণের মধ্যে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়লো। বলা চলে লাইমলাইটে চলে আসে। এতদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে সাধারণ অর্থে আমরা বুঝতাম রোবটকে। কিন্তু কি এক বিস্ময় নিয়ে চ্যাটজিপিটির আবির্ভাব হয়। তাকে নির্দেশ দিলে সে আপনার জন্য একটি কবিতা লিখে দিতে পারে। লিখে দিতে পারে একটি এনালাইসিস। এমনকি থিসিস। এসব লেখার সঙ্গে অন্য কোনো লেখকের লেখা মিলবে না। ফলে মানুষকে কষ্ট করে পড়তে হবে না। লিখতে হবে না। উদ্বেগ দেখা দেয় এখানেই। যদি মানুষকে লিখতে না হয়, পড়তে না হয়, তাহলে এক সময় মানুষ হয়ে পড়বে ভোঁতা। বুদ্ধিবৃত্তি বলতে কিছু থাকবে না। অন্যদিকে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করে চলতে হবে আমাদেরকে, মানুষকে। ফলে মানুষ হয়ে পড়বে অথর্ব। তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে চালাবে, তাকে সেভাবে চলতে হবে। একেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবট বিপ্লবের যুগ বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। 

 


এখানে আমাদেরকে সবার আগে একটি বিষয় স্বীকার করে নিতে হবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো একটি প্রযুক্তি। এর বাইরে আর কিছুই নয়। তাকে আমরা যে বুদ্ধি, প্রোগ্রাম দিয়ে মাঠে নামাবো, সে সেই কাজই করবে। তার নিজস্ব কোনো চিন্তা করার ক্ষমতা নেই। এই প্রযুক্তি তৈরি করছে মানবজাতি। তারপর তা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্ভট সব চিন্তাভাবনা এসেছে এবং উত্তেজনাও দেখা দিচ্ছে। এই তো সাম্প্রতিক সময়ে যখন খবর এলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরেকটি সংস্করণ চ্যাটজিপিটি। কেউ কেউ একে নিজস্ব বুদ্ধিসম্পন্ন হিসেবে দেখেন। মনে করেন চ্যাটজিপিটি নিজেই চিন্তা করার ক্ষমতা রাখে। নিজেই নিজেকে প্রযুক্তি শিক্ষা দেয়। এর কিছুটা বাস্তব হতে পারে। তবে তা নির্ভর করে কীভাবে ডিজাইন নির্মাণ করা হয়েছে তার ওপর। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন আপনি চ্যাটজিপিটিকে প্রথম প্রশ্ন করবেন- কোন দেশে সবচেয়ে ভালো  জোলঅফ চাল হয়? 
সঙ্গে সঙ্গে সে আপনাকে জবাব দেবে- এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল হিসেবে আমার আর কোনো ব্যক্তিগত অপশন নেই। কিন্তু আমি আপনাকে তথ্য দিতে পারি। শেষ পর্যন্ত কোন দেশে সবচেয়ে ভালো জোলঅফ চাল পাওয়া যায় সে প্রশ্নটি বিষয়ভিত্তিক ও ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন মানুষের তাদের সাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, স্বাদ ও অভিজ্ঞতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন অভিমত থাকতে পারে। 


চ্যাটজিপিটি নিয়ে সম্প্রতি বিবিসি লিখেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অ্যাপলিকেশনটি আপনার যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হাজির করতে পারে। সবচেয়ে অভিনব হলো,  প্রচলিত কম্পিউটার সফটওয়্যার বা অ্যাপলিকেশনের বাইরে গিয়ে সেখানে  সে নিজের মতো বুদ্ধিমত্তা বা মানবিকতার ছোঁয়াও দিতে পারে। গত বছরের নভেম্বরে তৈরি হওয়ার পর সারা বিশ্বেই এখন চ্যাটজিপিটি নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। শুধু জানুয়ারি মাসেই বিশ্বের প্রায় ১০  কোটি মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছে। কিন্তু ভয়ের কারণও আছে। চ্যাটজিপিটি গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইতালীয় ডাটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের মতে, গোপনীয়তা সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ থাকায় চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ  ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যার্টআপ ওপেনএআই। এটি তৈরি হয়েছে মাইক্রোসফটের সহযোগিতায়। শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে তৈরি এ প্রযুক্তি মার্চ মাসে সার্চ ইঞ্জিন বিং-এ যুক্ত হয়েছে। তার আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে চ্যাটবটটি চালু হয়। ইতালিতে গোপনীয়তা সংক্রান্ত ইস্যু তৈরি হলেও চ্যাটজিপিটি বলছে, তারা গোপনীয়তার আইন মেনে চলে। প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ কর্তারা এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ তালিকায় আছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইলন মাস্কও। চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধের কারণ হিসেবে ইতালীয় ওয়াচডগ বলছে, প্ল্যাটফরমটিতে ব্যবহারকারীর কথোপকথন ও অর্থ প্রদানের তথ্য সম্পর্কিত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি সামনে আসে গত ২০শে মার্চ। এটি ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করতে পারে না। এমনকি তাদের তথ্যের মর্যাদাও বোঝে না। যে কারণে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম যেভাবে তার  ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেই ডিজাইন অনুযায়ী চ্যাটজিপিটি উত্তর দেয়। সে সুনির্দিষ্টভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। খাবারের উন্নত একটি ডিশের চেয়ে অধিক বিতর্কিত  টপিক্সের বিষয়ে চ্যাটজিপিটিকে মডেল প্রশ্ন করা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও সে একই রকম উত্তর দেবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চ্যাটজিপিটি তার কোড আধুনিকায়ন করেছে।  যৌনতা এবং বর্ণবাদ ইস্যুতে কেমন জবাব দিতে হবে তাকে তা শেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্ভাবকরা আরও উচ্চ মান, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন। যদি চ্যাটজিপিটিকে মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে তার কাছে সব রকম প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে এবং সে উত্তর হতে হবে স্বচ্ছ এবং সঠিক। তৈরি করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে একটি ছুটির এজেন্ডা পরিকল্পনা, কাজের প্রেজেন্টেশন সৃষ্টি করা এমন কি একটি নতুন কোড লিখে অভিভূত করতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তা সব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে। এক্ষেত্রে যিনি ভোক্তা তাকে বাছাই করতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি কি প্রয়োজন মেটাতে চান। তার স্বপ্ন বা পরিকল্পনা কি? তাহলেই তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি সেই কাজ কতোটুকু করাতে পারবেন। 

২০২৩ সালের শুরুর দিকে কোকো নামের একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এপ জিপিটি-৩কে পরীক্ষা করে যে সে কীভাবে ৪০০০ মানুষকে পরামর্শ দেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ ওই প্রযুক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে ওই সম্প্রদায়ের লোকগুলো দেখতে পান যে, তারা প্রশিক্ষিত একজন থেরাপিস্টের চেয়ে এআই কর্মসূচি পছন্দ করে নিতে পারেন না। এআই প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে, ব্যাপকভাবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তার ব্যবহার নিয়ে নয়। তড়িঘড়ি করে এআই সিস্টেমের কাছ থেকে মেডিকেল সার্ভিসের সুবিধা, গৃহস্থালির কাজে অগ্রাধিকার পাওয়া, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং কোম্পানির জন্য হাতিয়ার ভাড়া করা হতে পারে বিয়োগান্তক। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর দিকগুলোকে বাদ দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যারা ব্যবহার করার কথা ভাবছেন, তাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমতা ব্যবহারের শক্তিশালী সিদ্ধান্তের মতোই ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত। 
(তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status