শরীর ও মন
সত্তরের চ্যালেঞ্জ
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ সপ্তাহ আগে) ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ২:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন

চার বছর আগে, পিটার হপার তার আসন্ন ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৪০ হাজার ৭৫ সংখ্যাটির ওপর ফোকাস করেছিলেন। এটি আসলে পৃথিবীর বিষুবরেখার দৈর্ঘ্য। হপারের লক্ষ্য ৭০ বছর বয়সের আগে দৌড়ে সেই দৈর্ঘ্য অতিক্রম করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আগামী ১০ বছরের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ কিলোমিটার পথ দৌড়াবেন। চ্যালেঞ্জ পালন করতে ১,৪৬১ দিন ধরে প্রতিদিন ১০ কিলোমিটারের বেশি দৌড়েছেন।
হাসতে হাসতে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে, আমি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে কোথাও আছি, আমার লক্ষ্য আমেরিকা।
উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের ডারহামের কাছে বেড়ে ওঠা হপার হঠাৎ এই চ্যালেঞ্জ কেন নিলেন?
৬৪ বছরের হপার জানাচ্ছেন, আমি এমন একটি লক্ষ্য স্থির করতে চেয়েছিলাম যা আমার বয়স বাড়ার সাথে আমাকে দৌড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আমি রন হিলের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তিনি একজন বৃটিশ দৌড়বিদ এবং অলিম্পিয়ান যিনি ৫৩ বছর বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন ন্যূনতম এক মাইল দৌড়ানোর জন্য বিখ্যাত হয়েছেন।
অভিজ্ঞ রানার, ২০০০ সালে হংকংয়ে চলে এসেছিলেন। সেখানে তিনি স্কুলে দৌড়াতে শুরু করেছিলেন। ৪০ এর দশকে হংকংয়ে আসার পর তিনি তার শখকে গুরুত্ব সহকারে নিতে শুরু করেন। তারপর থেকে, তিনি ৩৭টি অর্ধ-ম্যারাথন, ১৪টি ম্যারাথন, আল্পসে মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক ৯০ কি.মি দৌড় এবং শহরের ১০০কি.মি অক্সফাম ট্রেইলওয়াকার দুবার শেষ করেছেন।
হপার প্রতি দিন নিজের চ্যালেঞ্জ বজায় রাখতেন।
হপার জানাচ্ছেন, তিনি তার হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং তার অক্সিজেনের মাত্রা নিরীক্ষণ করেছেন।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে, হপার বলেছেন যে, তিনি বিমানবন্দর টার্মিনালের মধ্যে দৌড়াচ্ছেন এবং তার বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় তিনি তার হোটেল কক্ষের মধ্যেও দৌড়েছেন।
হপারের বাবা ছিলেন একজন প্রতিভাবান ফুটবলার এবং ক্রিকেটার। তিনি খেলাধুলায় ছেলের আগ্রহকে প্রভাবিত করেছিলেন। হপার ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট, গল্ফ এবং স্কোয়াশ খেলে বড় হয়েছেন। তিনি নিউক্যাসলে গ্রেট নর্থ রান সম্পন্ন করেন তার কিশোর বয়সে।
শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন এবং ফিটনেস ছিলো তার সাফল্যের কৌশল। ২০০৮ সালে বার্লিন ম্যারাথন হপারের প্রিয় দৌড় ছিল। রেসের শুরুতে ইথিওপিয়ান অ্যাথলিট হেইলে গেব্রসেলাসির সঙ্গে দৌড়ানো তার কাছে বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল । ৪০ মিনিটে তিনি সেই দৌড় শেষ করেন। সেই বছর তার বয়সের জন্য ইউকে ম্যারাথন র্যাঙ্কিংয়ে ১৭তম স্থান অধিকার করেছিলেন। হপার ক্রিস ওয়ার্ডলো-এর অধীনে প্রশিক্ষণ নেন, একজন অস্ট্রেলিয়ান অলিম্পিয়ান যিনি কিছু সময়ের জন্য হংকংয়ে ছিলেন।
ওয়ার্ডলো তাকে ধৈর্য এবং স্ট্যামিনা ধরে রাখতে শেখান। একটি ম্যারাথনের জন্য প্রশিক্ষণের সময় হপারের সাপ্তাহিক মাইলেজ ১৬০কি.মি ছিল। আজকাল, তিনি সপ্তাহে প্রায় ৭০ কি.মি পথ পাড়ি দেন । তিনি সকালে দৌড়ান এবং হংকং-এ তার প্রিয় দৌড়ের পথ হলো স্যার সেসিল রাইড, দ্য টুইন পিকস, প্যাট সিন লেং ট্রেইল, ল্যানটাউ পিক এবং সানসেট পিক।
হপার বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি আঘাত সহ্য করেছেন। পিঠের ব্যথায় তিনি প্রায়শই কাবু হয়ে যান। তখন দৌড়ের গতি কমিয়ে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করেন। হপার জানাচ্ছেন, প্রতিদিন দৌড়ানোর পর তিনি অনেকটা সুস্থ বোধ করতেন। দৌড়ের মাধ্যমে তিনি আরো বেশি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে চান, বোঝাতে চান বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়। হপার ২০১৮ সালে কর্পোরেট জগত ছেড়ে"Gone Running"-এ যোগ দেন।
গন রানার্স রানিং ক্লাবের ৪০০ জন সদস্য রয়েছে এবং প্রতি বছর ২০০টিরও বেশি দৌড় সংগঠিত করে তারা। এটির একটি অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে লোকেরা শীর্ষ-শ্রেণীর প্রশিক্ষকদের সংস্পর্শে আসেন । এই গ্ৰুপের মাধ্যমে হপার দৌড়বিদদের একটি সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। হপারের মতে দৌড়ানো খুব সহজ জিনিস, শুধু প্রয়োজন হয় এক জোড়া জুতা এবং বাড়ি থেকে বের হওয়ার তাগিদ।
খেলাধুলাকে জীবনের অংশ বলে মনে করেন তিনি। ৫০, ৬০ বছর বয়সে যারা দৌড় শুরু করতে চান তাদের প্রতি তার পরামর্শ হলো ''আঘাত এড়াতে ধীরে শুরু করুন। আর আঘাত পেলেও থামবেন না। '' হপার ২০২৩ সালের নভেম্বরে হংকং-ঝুহাই ম্যাকাও ব্রিজ হাফ-ম্যারাথনে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।
সূত্র : সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট